শ্রীনগর বিমানবন্দরে বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা।—ছবি পিটিআই।
সেনাদের কড়া পাহারা। বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের গাড়ির কনভয় প্রচণ্ড গতিতে শ্রীনগরের প্রাণকেন্দ্র লাল চক ঘুরে পৌঁছে গেল বাদামিবাগে। সেখানে সেনাবাহিনীর সদর দফতরে তাঁদের আপ্যায়ন। কোনও সংগঠন এ দিন হরতাল না-ডাকায় জম্মু ও কাশ্মীরের জনজীবন ছিল স্বাভাবিক। তবে বিদেশিদের এই গাড়ি-বহর নিয়ে সাধারণ মানুষের কোনও উৎসাহ এ দিন চোখে পড়েনি।
ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সিদিক ওয়াহিদের প্রশ্ন, ‘‘কোনও বিশ্বাসযোগ্যতা আছে এই প্রতিনিধি দলের? সরকার নিজেদের পদক্ষেপকে গ্রহণযোগ্য করতে এই সব দলকে বেড়াতে নিয়ে আসে। এতে কাশ্মীরের কোনও লাভ হয় না।’’ ডালগেট এলাকায় নিজে মুদির দোকানে বসে গাড়ির বহরের ছুটে চলা দেখছিলেন মুহম্মদ মাকারাম। আপন মনে বলেন, ‘‘আমাদের সব কিছু লুট হয়ে গিয়েছে। এরা কী দেখতে আসে!’’
বাদামিবাগে ১৫ নম্বর কোরের সদর দফতরে কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে সেনা কর্তারা বিদেশিদের বুঝিয়েছেন, পাকিস্তানি হামলার ঝুঁকি এখানে প্রতিদিন। নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে জঙ্গি অনুপ্রবেশ নিত্য ঘটনা। তার মধ্যেও কাশ্মীরের জনজীবন এখন বেশ স্বাভাবিক। মেহবুবা মুফতির দল পিডিপি-র প্রাক্তন বিধায়ক আলতাফ বুখারির নেতৃত্বে একটি দল বিদেশিদের সঙ্গে কথা বলেন। এই দলে কংগ্রেস ও স্থানীয় কয়েকটি দলের এক জন করে প্রতিনিধি থাকলেও পিডিপি-র ৮ জন ছিলেন। বুখারি পরে বলেন, বিদেশিদের কাছে তাঁরা কাশ্মীরের প্রকৃত ছবিই তুলে ধরেছেন। বলেছেন, সরকারের উচিত মুখ্যমন্ত্রী ও নেতাদের মুক্তি দেওয়া। বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া। রাজ্যের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া। কিন্তু এই বৈঠকের ঘণ্টা তিনেক পরেই আলোচনায় অংশ নেওয়া ৮ জনকেই বহিষ্কার করেছে পিডিপি। জানিয়েছে, কাশ্মীরবাসীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে এঁরা সরকারের তাঁবেদারি করছেন। মানুষ চাননি, তাঁরা সরকারের আনা বিদেশিদের সঙ্গে কথা বলুন। হোটেলে ফিরে এ দিন কাশ্মীরের বাছাই কয়েক জন সাংবাদিকের সঙ্গেও কথা বলেন বিদেশি প্রতিনিধিরা।
কংগ্রেস আগেই বলেছে, কাশ্মীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে দেশের রাজনৈতিক দলগুলির নেতাদের সেখানে যেতে দেওয়া হোক! কাশ্মীরের রাজনৈতিক কর্মীদের মুক্তি দেওয়া হোক! তা না-করে দফায় দফায় বিদেশিদের ‘বেড়াতে নিয়ে যাওয়া’ (গাইডেড টুর) হচ্ছে। ন্যাশনাল কনফারেন্সের প্রশ্ন, কাশ্মীর স্বাভাবিক হলে তিন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে জেলে ভরে রাখা হয়েছে কেন? বিদেশিদের এনে কেন প্রমাণ করতে হবে কাশ্মীর স্বাভাবিক?
গাইডেড টুরের অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিচ্ছেন বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রবীশ কুমার। তিনি বলেন, ‘‘কাশ্মীরের জনজীবন যে স্বাভাবিক হচ্ছে, সে কাজে প্রশাসন যে ধাপে ধাপে পদক্ষেপ করছেন, বিশ্বকে তা দেখাতেই এই সফর।’’ ১৫ জন রাষ্ট্রদূতের সফরের বিশদ বর্ণনা দিয়ে রবীশ জানিয়েছেন, আজ কাশ্মীরের রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন বিদেশি দূতেরা। কথা বলেছেন, স্থানীয় মানুষ এবং সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে। কাল তাঁরা জম্মু সফর করে ফিরবেন।
অক্টোবরে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের একটি দলকে সেখানে নিয়ে যায় মোদী সরকার। তা নিয়ে তৈরি হয়েছিল বিতর্ক। বলা হয়, স্বাধীন ভাবে তাঁদের ঘুরতে না দিয়ে ‘কন্ডাক্টেড’ সফর করানো হয়েছে। এ বারের সফরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কিছু রাষ্ট্রদূতকে নেওয়ার কথা থাকলেও, দেখা যায় আমেরিকা, লাতিন আমেরিকা, এশিয়া এবং আফ্রিকার প্রতিনিধিরাই রয়েছেন। কেন ইউরোপ নেই– এই বিতর্কের আজ ব্যাখ্যাও দিয়েছেন রবীশ। বলেছেন, ‘‘খুব অল্প সময়ে গোটা বিষয়টির আয়োজন করা হয়েছে। তাই সবাইকে আনা যায়নি।’’ আমেরিকা ছাড়াও এই প্রতিনিধি দলে রয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়া, মরক্কো, নাইজার, নাইজেরিয়া, গুয়ানা, আর্জেন্টিনা, নরওয়ে, ফিলিপিন্স, মলদ্বীপ, টোগো, ফিজি, পেরু, বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের রাষ্ট্রদূত।
এই বিতর্কের মধ্যেই কাশ্মীরে ৩৭০ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহারের পরে চাপানো বিধিনিষেধ সংক্রান্ত মামলাগুলির কাল রায় দেবে সুপ্রিম কোর্ট।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy