হিজাব বিতর্কে কর্নাটকের মুসলিম পড়ুয়াদের পাশে থাকার বার্তা দিলেন হায়দরাবাদের মহিলারা। বুধবার শহরের সইদাবাদ এলাকার এক ইদগায় একটি গণপ্রার্থনা সভার আয়োজন করা হয়। পিটিআই
কর্নাটকের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব পরার বৈধতা নিয়ে মামলা বৃহত্তর বেঞ্চে পাঠাল হাই কোর্টের এক বিচারপতির বেঞ্চ। ফলে সমতা নষ্ট হতে পারে এমন পোশাক স্কুল-কলেজে পরা যাবে না বলে যে নির্দেশ তারা জারি করেছিল তা বলবৎ থাকছে বলে জানিয়েছে কর্নাটকের বিজেপি সরকার। সুতরাং হিজাব-বিতর্কের মীমাংসা আপাতত হল না।
গত মাসে কর্নাটকের উদুপির পিইউ কলেজে হিজাব পরে আসা ছ’জন ছাত্রীকে ক্লাস করতে না দেওয়া নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত। রাজ্যের বেশ কিছু এলাকায় হিজাবের প্রতিবাদে গেরুয়া স্কার্ফ গলায় দিয়ে আসতে দেখা যায় পড়ুয়াদের একাংশকে। হিজাব পরা ও না পরার পক্ষে ক্রমশ শক্তিশালী হয়েছে মত। গত কালই বিক্ষোভ-প্রতিবাদের জেরে হিংসা দেখেছে কর্নাটক।
উদুপির পাঁচ পড়ুয়া হিজাব পরার উপরে নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে হাই কোর্টের শরণাপন্ন হয়েছেন। গত কালই আর্জির এক দফা শুনানি হয়েছিল। আজ বিচারপতি কৃষ্ণ এস দীক্ষিত জানান, এই মামলায় আইনের বৃহত্তর প্রশ্ন উঠেছে। সাধারণত ব্যক্তিগত আইনের (পার্সোনাল ল) প্রশ্নের বিচার করে বৃহত্তর বেঞ্চ। রাতে জানানো হয়, হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ আগামিকাল এই মামলা শুনবে। অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা হিসেবে মুসলিম ছাত্রীদের হিজাব পরার অনুমতি দিতে নির্দেশ চেয়েছিলেন পাঁচ পড়ুয়ার আইনজীবীরা। কিন্তু বিচারপতি জানান, এ নিয়ে বৃহত্তর বেঞ্চেই সওয়াল করতে হবে।
এই নির্দেশের পরেই কর্নাটকের শিক্ষামন্ত্রী বি সি নাগেশ জানিয়ে দেন, আপাতত সরকারের জারি করা নিষেধাজ্ঞা জারি থাকছে। তিনি বলেন, ‘‘আমরা পিছু হটব না। হিজাব-বিতর্ক নিয়ে বিক্ষোভে পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়ার শাখা ক্যাম্পাস ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়ার হাত থাকতে পারে। তা নিয়ে পুলিশকে তদন্ত করতে বলা হয়েছে।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘তদন্ত শেষ হলে তা থেকে পাওয়া তথ্য বিবেচনা করবেন মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতর। তবে আমরা আপস করব না। পড়ুয়াদের একাংশকে আলাদা সুবিধে দেওয়া যাবে না।’’ তাঁর মতে, ‘উস্কানি’র ফলেই এ নিয়ে বিক্ষোভ ছড়িয়েছে। বেঙ্গালুরুর স্কুল-কলেজের কাছে দু’সপ্তাহের জন্য সব বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। স্কুল-কলেজ খোলা নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার। গোলমালের জেরে তিন দিন সেগুলি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল গত কাল।
গত কাল একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয় নেটমাধ্যমে। তাতে দেখা যাচ্ছে হিজাব পরিহিত এক জন পড়ুয়াকে ঘিরে ধরে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিচ্ছে এক দল যুবক। তাদের গলায় গেরুয়া উত্তরীয়। ভয় না পেয়ে পাল্টা ‘আল্লা হু আকবর’ স্লোগান দিচ্ছেন ওই পড়ুয়া। নেটনাগরিকদের একাংশ দাবি করেন, ওই ভিডিয়ো মাণ্ড্য প্রি-ইউনিভার্সিটি কলেজে তোলা। আজ মুখ খুলেছেন মুসকান নামে ওই পড়ুয়া। তিনি জানান, কলেজে ঢোকার সময়ে তাঁকে ঘিরে ধরে জানতে চাওয়া হয় কেন হিজাব পরে এসেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমি এ নিয়ে চিন্তিত নই। কিন্তু এক টুকরো কাপড়ের জন্য আমাদের ওরা আমাদের পড়াশোনা করার অধিকারই ছিনিয়ে নিতে চায়।’’
আজ এই বিতর্কে হিজাব পরতে চাওয়া পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়িয়েছেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বিকিনি, ঘোমটা, জিন্স বা হিজাব, সব পোশাক পরার অধিকার মহিলাদের আছে। সংবিধানই সেই অধিকার দিয়েছে। মহিলাদের হেনস্থা করা বন্ধ করুন।’’ হিজাবে নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে ১১ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে প্রতিবাদের ডাক দিয়েছে এসএফআই। অন্য দিকে জাতীয় শিশু কমিশনের প্রধান প্রিয়াঙ্ক কানুনগোর দাবি, মুসলিম সংগঠন দারুল উলুম দেওবন্দ পড়ুয়াদের স্কুল ইউনিফর্ম না পরার পরামর্শ দিয়েছে। অভিনেতা-রাজনীতিক কমল হাসনের মতে, কর্নাটকে ধর্মের ভিত্তিতে পড়ুয়াদের মধ্যে বিভেদ তৈরির চেষ্টা চলছে।
এ দিনও কালবুর্গি জেলায় হিজাব পরার পক্ষে বড় মিছিল হয়েছে। অন্য দিকে গত কাল হওয়া হিংসার কিছু খবর সামনে এসেছে আজ। গত কাল বাগালকোট জেলায় মঞ্জুনাথ নাইক নামে এক শিক্ষককে দুষ্কৃতীরা লোহার রড দিয়ে আঘাত করে বলে অভিযোগ। সেই সময়ে বিজেপি বিধায়ক হারাতালু হালাপ্পা ঘটনাস্থলে হাজির থাকলেও বাধা দেননি বলেও অভিযোগ উঠেছে। অন্য দিকে শিমোগার একটি কলেজে জাতীয় পতাকা নামিয়ে গত কাল গেরুয়া বাহিনী গেরুয়া পতাকা উড়িয়ে দিয়েছিল। কংগ্রেসের দাবি, তারা সেই পতাকা নামিয়ে ফের জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy