Kabir Bedi’s Mother Freda’s journey from a freedom fighter to a Buddhist nun dgtl
freda bedi
স্বাধীনতা সংগ্রামী থেকে বৌদ্ধ ভিক্ষুণী, কবীর বেদীর ব্রিটিশ মা পাড়ি দেন উজানস্রোতে
ব্রহ্মচর্য গ্রহণ করলেও সংসারের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করেননি ফ্রিডা। যোগাযোগ ছিল স্বামী ও সন্তানদের সঙ্গে। কিন্তু মায়ের সংসার ত্যাগের সিদ্ধান্তে তীব্র অভিমান ছিল কবীর বেদীর। ফ্রিডা যখন সন্ন্যাস নেন, তখনও কবীর আর গুলহিমা পড়াশোনা করছেন। বিয়ে হয়ে গিয়েছে তাঁদের দাদা রঙ্গার।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৯ ১৪:২৭
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
ব্রিটিশ নাগরিক হয়েও সোচ্চার হয়েছিলেন ভারতবাসীর উপর ব্রিটেনের দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে। প্রথম জীবনের সেই বিপ্লবী স্বামী-সন্তানদের ভরা সংসার ফেলে বেছে নিয়েছিলেন বৌদ্ধ সন্ন্যাসিনীর পথ। বিস্মৃতির আড়ালে চলে গিয়েছে কবীর বেদীর মা, ফ্রিডার ঘটনাবহুল রঙিন জীবন। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
০২১৯
ইংল্যান্ডের ডার্বির হোলস্টোন পরিবারে ফ্রিডার জন্ম ১৯১১ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি। শৈশবেই পিতৃহারা। ১৯১৮ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মৃত্যু হয় তাঁর বাবার। ১৯২০ সালে তাঁর মা দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন। (ছবি: ফ্রিডা বেদী ডট কম)
০৩১৯
ফ্রিডার ব্রিটিশ জীবন ভারতের দিকে ঘুরে যায় অক্সফোর্ডে পড়তে এসে। ইংল্যান্ড-ফ্রান্সে স্কুলজীবন শেষ করে ফ্রিডা পড়তে যান অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট হিউজেস কলেজে। তাঁর বিষয় ছিল দর্শন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতি। সেখানে তাঁর আলাপ হয় বাবা পেয়ারেলাল বেদীর সঙ্গে। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
০৪১৯
গুরু নানকের বংশধর বাবা পেয়ারেলাল লাহৌর থেকে গিয়েছিলেন অক্সফোর্ডে পড়তে। বইয়ের প্রতি ভালবাসা আর মার্ক্সবাদ নিয়ে আলোচনা ক্রমে কাছাকাছি আনল দু’জনকে। কিন্তু একজন অশ্বেতাঙ্গর সঙ্গে ফ্রিডার ঘনিষ্ঠতা মোটেও ভাল ভাবে নেয়নি সাবেক অক্সফোর্ড। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
০৫১৯
আপত্তি ছিল দুই পরিবারের তরফেও। সব বিরোধিতা সত্ত্বেও বিয়ে হল পেয়ারেলাল-ফ্রিডার। বিয়ের আগেই ফ্রিডা জানতেন তাঁর গাঁধীভক্ত স্বামী দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নিবেদিত প্রাণ। পরাধীন ভারতকে মুক্ত করতে সংগ্রামে স্বামীর দোসর হলেন ফ্রিডাও। (ছবি: ফ্রিডা বেদী ডট কম)
০৬১৯
বিয়ের পরে বেদী দম্পতির নতুন সংসার হল জার্মানিতে। সেখানে গবেষণার জন্য গিয়েছিলেন পেয়ারেলাল। জার্মানিতেই জন্ম হল তাঁদের প্রথম পুত্রসন্তানের। নাম রাখা হল ‘রঙ্গা’। (ছবি: ফ্রিডা বেদী ডট কম)
০৭১৯
কিন্তু হিটলারের জার্মানিতেও বেশিদিন থাকা হল না। সুইৎজারল্যান্ড, ইতালি হয়ে ভারতে এলেন বেদী দম্পতি। ১৯৩৪ সালে পুত্রসন্তানকে নিয়ে ভারতে পা রাখলেন পেয়ারেলাল ও ফ্রিডা। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
০৮১৯
শ্বশুরবাড়ির নতুন পরিবেশে দ্রুত মানিয়ে নিলেন ফ্রিডা। বিদেশিনীর পরিচয় ছেড়ে গ্রহণ করলেন ভারতীয় সত্তা। বামপন্থী চিন্তাভাবনার শরিক হয়ে বেদী দম্পতি বিলিয়ে দিলেন সম্পত্তি। (ছবি: ফ্রিডা বেদী ডট কম)
০৯১৯
সংসার চালানোর জন্য লেখালেখি শুরু করলেন দু’জনে। লাহৌরের কলেজে ইংরেজি পড়ানোর চাকরি নিলেন ফ্রিডা। লাহৌরের এক অপরিসর ঘর হল তাঁদের নতুন ঠিকানা। সেখানেই জন্ম দ্বিতীয় সন্তান, তিলকের। কিন্তু কুঁড়িতেই ঝরে গেল সে। আন্ত্রিকে মৃত্যু হল শিশুটির। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
১০১৯
সন্তানশোক ভুলতে ফ্রিডা আরও বেশি করে নিজেকে ডুবিয়ে দিলেন দেশের কাজে। কৃষকদের সমস্যা, মেয়েদের যন্ত্রণা তাঁকে বিশেষ ভাবে বিচলিত করত। লাহৌর-বাসের শেষ দিকে জন্ম হল তৃতীয় পুত্রসন্তানের, নাম রাখা হল ‘কবীর’। (ছবি: ফ্রিডা বেদী ডট কম)
১১১৯
দেশভাগের পরে বন্ধ করতে হল লাহৌর-বাসের পর্বও। অগ্নিগর্ভ লাহৌর থেকে দুই শিশুসন্তান-সহ বেদী দম্পতি চলে গেলেন কাশ্মীরে। সেখানে তাঁদের সংসারে এল নতুন অতিথি। জন্ম হল চতুর্থ সন্তান, কন্যা ‘গুলহিমা’-র। (ছবি: ফ্রিডা বেদী ডট কম)
১২১৯
কাশ্মীর-বাসের পর্বও দীর্ঘস্থায়ী হল না। তিন সন্তানকে নিয়ে পেয়ারেলাল-ফ্রিডা চলে এলেন দিল্লি। কেন্দ্রীয় সরকারের সমাজকল্যাণ দফতরে কাজ নিলেন ফ্রিডা। থাকতেন সরকারি আবাসনে। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
১৩১৯
১৯৫৩ সালে ইউনেস্কোর মিশনে মায়ানমার ( সাবেক বর্মা) গিয়েছিলেন ফ্রিডা। সেখানে গিয়ে বৌদ্ধ ধর্মের সান্নিধ্যে এসে তাঁর মধ্যে বিপুল পরিবর্তন দেখা দেয়। দিল্লি ফিরে এসে তিন মাস পরে তিনি সংসার ত্যাগ করে বৌদ্ধধর্মের পথে পা বাড়ান। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
১৪১৯
১৯৬৬ সালে তিনি সিকিমের রুমটেক বৌদ্ধ মঠে দীক্ষা গ্রহণ করেন ষোড়শ কর্মপার কাছে। তাঁর নতুন নাম হয় ‘সিস্টার পালমো’। ষাট বছর বয়সে তিনি-ই হলেন বৌদ্ধধর্মের ইতিহাসে প্রথম পাশ্চাত্যের ভিক্ষুণী। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
১৫১৯
ব্রহ্মচর্য গ্রহণ করলেও সংসারের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করেননি ফ্রিডা। যোগাযোগ ছিল স্বামী ও সন্তানদের সঙ্গে। কিন্তু মায়ের সংসার ত্যাগের সিদ্ধান্তে তীব্র অভিমান ছিল কবীর বেদীর। ফ্রিডা যখন সন্ন্যাস নেন, তখনও কবীর আর গুলহিমা পড়াশোনা করছেন। বিয়ে হয়ে গিয়েছে তাঁদের দাদা রঙ্গার। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
১৬১৯
মাকে অভিমানের কথা জানিয়েওছিলেন কবীর। জানতে চেয়েছিলেন, কেন সে সময়ে মা সংসার ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন? ফ্রিডা উত্তর দিয়েছিলেন, সবকিছুরই নির্দিষ্ট সময় থাকে। যা হওয়ার, সেটা সেই নির্দিষ্ট সময় মেনেই ঘটে।
১৭১৯
বৌদ্ধধর্মের প্রসারে বহু কাজ করেন ফ্রিডা। বজায় ছিল তাঁর সমাজকল্যাণের চিন্তাও। তিনি মনে করতেন, সংসার ও সন্ন্যাস বিপরীত মেরুর অবস্থান নয়। তাঁর কাছে সবই ছিল পার্থিব ঘটনামাত্র। ১৯৭৭ সালের মার্চ মাসে প্রয়াত হন উজানস্রোতে পাড়ি দেওয়া, সময়ের তুলনায় এগিয়ে থাকা ফ্রিডা। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
১৮১৯
তাঁর ছোট ছেলে কবীর বেদী বিনোদন জগতের অন্যতম মুখ। কাজের মতো তাঁর জীবনও বর্ণময়। বড় ছেলে রঙ্গা পেশায় টি প্ল্যান্টার। মেয়ে গুলহিমা আমেরিকাবাসী। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
১৯১৯
পরিণত বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মায়ের উপর থেকে কবীরের জমে থাকা সব অভিমান চলে গিয়েছিল অনেকটাই। বুঝতে পেরেছিলেন মাকে। হয়তো বা নিজের জীবনকে নিজের মতো করে সাজিয়ে নেওয়ার ধারা তিনি পেয়েছেন ফ্রিডার মতো মায়ের কাছ থেকেই। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)