ছবি: পিটিআই।
আর একটা রুটি দিই?
সাধছেন সাধনা সিংহ। মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানের স্ত্রী। সাদামাঠা একটি কাঠের টেবিলে একসঙ্গে নৈশভোজ শিবরাজ ও মধ্যপ্রদেশের বিজেপির বড় নেতাদের। মধ্যমণি দলে নতুন যোগ দেওয়া জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। পরিবেশন করছেন শিবরাজ-পত্নী। ভোটের আগে অবশ্য বিজেপির স্লোগান ছিল, ‘‘আর নয় মহারাজ, আমাদের নেতা শিবরাজ।’’ সিন্ধিয়ার আগমনের পর খোদ শিবরাজই স্লোগান বদলে দিয়েছেন, ‘‘স্বাগত মহারাজ, সঙ্গে আছে শিবরাজ।’’
এ ছিল গত কাল রাতে শিবরাজের বাড়ির ছবি। আর আজ সকালে বিজেপির প্রার্থী হিসেবে রাজ্যসভার মনোনয়ন পেশ করে সিন্ধিয়া মধ্যাহ্নভোজে গেলেন রাজ্যে বিজেপির আর এক মুখ্যমন্ত্রীর দাবিদার নরোত্তম মিশ্রের বাড়ি। সেখানে তো আরও নিচু চেয়ারে বসে খাওয়া-দাওয়া হল। টিভির পর্দায় সে দৃশ্য দেখে দিল্লিতে কংগ্রেসের এক নেতা স্মরণ করলেন, ‘‘এক বার বাড়িতে ডেকেছিলাম সিন্ধিয়াকে। নিজের হাতে রেঁধে খাওয়াব তাঁকে। বলে বসল, রূপোর বাসন ছাড়া খাই না। এখন দেখে ভাল লাগছে, বিজেপিতে গিয়ে প্রায় হাঁটু মুড়ে খেতে বসেছেন। না হোক অসত্যই, তবুও বলছে গাড়িতে এসি চালান না!’’
রাহুল গাঁধী গত কাল বলেছিলেন, ‘‘সিন্ধিয়া দল ছেড়েছেন, কারণ রাজনৈতিক ভবিষ্যতের ভয় পেয়ে গিয়েছেন।’’ কীসের ভয়? গ্বালিয়র রাজ পরিবারে সোনার চামচ মুখে জন্ম সিন্ধিয়ার। গ্বালিয়রের শেষ মহারাজা জিবাজিরাও সিন্ধিয়ার নাতি জ্যোতিরাদিত্য। জিবাজিরাও মারা গিয়েছেন মাত্র ৪৫ বছর বয়সে। জ্যোতিরাদিত্যের বাবা
মাধবরাওয়ের মৃত্যু হয়েছে ৫৬ বছর বয়সে। ক’দিন আগেই ঘরোয়া মহলে সিন্ধিয়া বলেছেন, ‘‘আমার পরিবারে পুরুষরা কেউ ষাট পেরোন না। সামনের বছর আমার ৫০। দ্রুত গোছাতে হবে!’’
সিন্ধিয়া পরিবারের অঢেল সম্পত্তি। এর মধ্যে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ চলছে ৩৫ বছর ধরে। দিল্লির অলিন্দে গুঞ্জন, বিজেপিতে আসার অন্যতম কারণ নাকি এই সম্পত্তি বিবাদ মেটানো। কারণ, জ্যোতিরাদিত্যের সঙ্গে এই বিবাদ তাঁর পিসি বসুন্ধরা রাজে, যশোধরা সিন্ধিয়াদের। জ্যোতিরাদিত্যের বক্তব্য, চার পিসি আগে কথা দিয়েছিলেন, অস্থাবর সম্পত্তি নিয়ে আর স্থাবর সম্পত্তির ভাগ চাইবেন না। দামি অলঙ্কার, বাসন-পত্র নেওয়ার পরে এ বার সম্পত্তির ভাগ চাইছেন তাঁরা। ঘটনাচক্রে দুই পিসিই বিজেপি নেত্রী। যদিও তাঁদের সঙ্গে অমিত শাহের সম্পর্ক ভাল নয়। বিজেপির অন্দরে প্রশ্ন, ‘‘পিসিদের চাপ দিয়ে মহারাজ কি এ বারে বিবাদ মেটাতে চান?’’
জ্যোতিরাদিত্য বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরেই বসুন্ধরার টুইট এসেছিল, ‘‘এক টিমে স্বাগত।’’ বিজেপি নেতারা বলছেন, ঢোকার আগে মোক্ষম দর কষাকষি করেছেন সিন্ধিয়া। আজ বিজেপিরই এক সাংসদ বললেন, ‘‘দলে যোগ দেওয়ার দিন কেন চার ঘণ্টা পরে এলেন সিন্ধিয়া? বাকিরা ভাবছেন, রাহুকাল। আসলে সিন্ধিয়া চাইছিলেন, প্রধানমন্ত্রী না আসুন, অন্তত অমিত শাহ তাঁর হাতে বিজেপির সদস্যপত্র তুলে দিন। অমিত রাজি হননি। পাঠিয়েছেন সভাপতি জে পি নড্ডাকে। পর দিন অবশ্য আলাদা দেখা করেছেন।’’
আর শুধু মধ্যপ্রদেশের রাজ্যসভার আসনই নয়, কেন্দ্রে মন্ত্রীও হতে চান। দিল্লিতে ইতিমধ্যেই গুঞ্জন, রেল, টেলিকম কিংবা বিমান— কোনও এক মন্ত্রকে বসতে পারেন মহারাজ। সামনের বছর ২৫-এ পা দিচ্ছেন জ্যোতিরাদিত্যের ছেলে মহাআর্যমনও। সিন্ধিয়া বিজেপিতে যাওয়ার পর যিনি টুইট করেছেন, ‘‘নিজের জন্য অবস্থান নেওয়াতে বাবার জন্য গর্ব হচ্ছে। পদ ছাড়তে সাহস লাগে।’’
ছেলেকেও দ্রুত গুছিয়ে দিতে চান সিন্ধিয়া। সময় যে কম! কংগ্রেসের নেতারা মানছেন, রাহুল-সনিয়া গাঁধীদের উপেক্ষা, কমল নাথ— বিশেষ করে দিগ্বিজয় সিংহের চাপ তো ছিলই। বিজেপিতে আটঘাট বেঁধেই গিয়েছেন সিন্ধিয়া। তবে কংগ্রেস শিবিরেই গুঞ্জন, আজ ফারুক আবদুল্লা ছাড়া পেলেন, এ বারে তাঁর জামাই সচিন পাইলট বিজেপিমুখো হবেন না তো? সঙ্গে মিলিন্দ দেওরা, জিতিন প্রসাদ, কুলদীপ বিশনোইরা। কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা আজ অবশ্য দাবি করেন, ‘‘এক জন নেতাও কংগ্রেস ছেড়ে যাবেন না।’’ অন্য এক কংগ্রেস নেতার রসিকতা, ‘‘রণদীপ নিজে থাকবেন তো?’’
রাতে ভোপাল থেকে ফের দিল্লিতে মহারাজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy