জোশীমঠে বিক্ষোভে শামিল হয়েছেন এলাকার মহিলারাও। ছবি পিটিআই।
ফাটল ঘিরে আতঙ্কের মধ্যেই স্থানীয়দের বিক্ষোভে তেতে রইল উত্তরাখণ্ডের জোশীমঠ। একাধিক বাড়ি, হোটেলে ফাটল দেখা গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বেশ কিছু বাড়ি ও হোটেল ভাঙার সিদ্ধান্ত নিয়েছে উত্তরাখণ্ড প্রশাসন। সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা জানিয়ে মঙ্গলবার প্রতিবাদে গর্জে উঠলেন জোশীমঠের বাসিন্দারা। আগে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক, তার পর বিপজ্জনক বাড়ি ভাঙুন— এই দাবিই জানিয়েছেন তাঁরা।
জোশীমঠের ২টি হোটেল ‘মাউন্ট ভিউ’ ও ‘মালারি ইন’ পরস্পরের গায়ে হেলে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ২টি হোটেল ভাঙার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। মঙ্গলবার এই ২টি হোটেল ভাঙার কাজ করতে তৎপর হয় প্রশাসন। কিন্তু বিক্ষোভের জেরে সেই কাজ আপাতত থমকে গিয়েছে। বুধবার ওই দুই হোটেল ভাঙা হবে বলে জানা গিয়েছে।
হোটেল ভাঙার সিদ্ধান্তের কথা প্রকাশ্যে আসতেই বিরোধিতা করেন হোটেল মালিকরা। তাঁদের অভিযোগ, হোটেল ভাঙার কথা আগাম জানায়নি প্রশাসন। হোটেল ভাঙার আগে এককালীন ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক, এই দাবিই জানিয়েছেন হোটেল মালিকরা। ‘মালারি ইন’ হোটেলের মালিক ঠাকুর সিংহ বলেন, ‘‘সকালে সংবাদপত্র পড়ে এই খবর জানলাম। আগে থেকে কোনও নোটিস দেওয়া হয়নি। যদি আমার হোটেলকে বিপজ্জনক হিসাবে চিহ্নিত করা হয়, তা হলে ভাঙার আগে এককালীন ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত ছিল।’’
সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে তিনি আরও বলেন, ‘‘মঙ্গলবার সকাল ৯টায় এসডিএম আমায় হোটেল ভাঙার কথা জানান। অনেক রক্ত, ঘাম ঝরিয়ে এই হোটেল তৈরি করেছিল। যদি এটা ভেঙে ফেলা হয়, কী হবে আমার?’’ ‘মালারি ইন’ হোটেলের মতোই বিপজ্জনক হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে ‘মাউন্ট ভিউ’কে। ওই হোটেলের মালিক লালমণি সেমওয়াল পিটিআইকে বলেছেন, ‘‘আমাদের অন্তত এককালীন ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক।’’
তবে শুধু হোটেলে মালিকরাই প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা জানাননি। মঙ্গলবার প্রশাসনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন জোশীমঠের বাসিন্দারাও। ক্ষতিপূরণ না ঘোষণা করে কেন ঘরবাড়ি ও হোটেল ভাঙার সিদ্ধান্ত নিল সরকার, সে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। ‘মালারি ইন’ হোটেলের বাইরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন জোশীমঠের বহু বাসিন্দা।
অন্য দিকে, ভাঙার কাজের জন্য হোটেলগুলিতে বিদ্যুতের লাইন কেটে দেওয়া হয়েছে। যার জেরে অন্ধকারে ডুবেছে হোটেল সংলগ্ন এলাকার বাড়িগুলিও। প্রায় ৫০০টি বাড়িতে বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, জোশীমঠে মোট ৬৭৮টি বাড়িতে ফাটল ধরা পড়েছে। এখনও পর্যন্ত মোট ৮১টি পরিবারকে নিরাপদে অন্যত্র সরানো হয়েছে। অনেকে ঘর ছেড়ে আতঙ্কে ঠান্ডার মধ্যেই খোলা আকাশের নীচেই রাত কাটাচ্ছেন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির জন্য ক্ষতিপূরণের আবেদন জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়েছে। জোশীমঠের বিপর্যয়ে সুপ্রিম কোর্ট যাতে হস্তক্ষেপ করে, জনস্বার্থ মামলাটিতে সেই অনুরোধও জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার সেই মামলার দ্রুত শুনানিতে রাজি হয়নি শীর্ষ আদালত। আগামী ১৬ জানুয়ারি এই মামলার পরবর্তী শুনানি।
অন্য দিকে, জোশীমঠে বিপর্যয়ের মধ্যেই মঙ্গলবার চামোলি জেলার কর্ণপ্রয়াগেও ফাটল দেখা গিয়েছে। বহুগুণা নগর এলাকায় প্রায় ৫০টি বাড়িতে ফাটল ধরেছে। এলাকায় ছোটখাটো ধসও নেমেছে বলে জানিয়েছেন বাসিন্দারা। আতঙ্কে অনেক বাসিন্দা তাঁদের পরিজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy