—ফাইল চিত্র।
রেজিস্ট্রারের চিঠি ইতিমধ্যেই পেয়েছেন তিনি। প্রবীণ শিক্ষাবিদকে সেই চিঠিতে বলা হয়েছে, দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ)-এর কমিটির কাছে তাঁকে বায়ো-ডেটা জমা দিতে হবে। কমিটি খতিয়ে দেখবে, কী কী ‘কাজ’ করেছেন তিনি। তার পরেই নাকি সিদ্ধান্ত হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘এমেরিটা অধ্যাপিকা’ হিসেবে তিনি থাকতে পারবেন কি না।
শিক্ষাবিদের নাম রোমিলা থাপার। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইতিহাসবিদ।
৮৭ বছরের রোমিলাদেবীর পাওয়া আন্তর্জাতিক সম্মানের তালিকা দীর্ঘ। যার মধ্যে রয়েছে অক্সফোর্ডের সাম্মানিক ডক্টরেট, আমেরিকান ফিলোসফিক্যাল সোসাইটির সদস্যপদ, ‘ইতিহাসের নোবেল’ বলে পরিচিত ক্লুগ পুরস্কার। সেই তাঁকেই নিজের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে কার্যত ‘যোগ্যতা’-র প্রমাণ দিতে হওয়ায় ক্ষুব্ধ শিক্ষামহল।
রোমিলাদেবী আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘বিষয়টি দুর্ভাগ্যজনক। এক অদ্ভুত সময়ের মধ্যে রয়েছি। এমেরিটা নিছকই একটি পদ নয়। এটি একটি মর্যাদা যা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানের সঙ্গে যুক্ত। কারা এই সম্মানের পংক্তিতে বসবেন, বিশ্ববিদ্যালয় তা নির্ধারণের মাপকাঠি তৈরি করে রেখেছে। কেন যে এঁরা তার বিরুদ্ধে যাচ্ছেন, তা আমার বোধগম্য নয়।’’ বিশ্ববিদ্যালয় কোনও সম্মান প্রাপকের যোগ্যতামান এক বার নির্ধারণ করে দিলে তা আর পুনর্বিবেচনা করা যায় না বলে জানান রোমিলাদেবী।
জেএনইউয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক প্রভাত পট্টনায়কের মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের এগজিকিউটিভ কাউন্সিল সম্ভবত এই পদটির মানেই জানে না। বহু আবেদনকারীর মধ্যে থেকে কাউকে বাছতে হবে— এমন কোনও পদ নয় এমেরিটাস (মহিলাদের ক্ষেত্রে এমেরিটা)। এটি আসলে অবসর নিতে চলা বা অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপককে তাঁর অতীতের কাজের জন্য সম্মান। সেই সম্মান সারা জীবনের জন্য। প্রভাত জানান, রেজিস্ট্রারের চিঠির উত্তর দিয়ে রোমিলা জানতে চেয়েছেন, ঠিক কী ভাবে তাঁর মূল্যায়ন করা হবে? এমেরিটা অধ্যাপিকা হওয়ার পরে তাঁর প্রকাশিত বইগুলির মান নির্ধারণ হবে? নাকি ক্লুগ-সহ তাঁর পাওয়া পুরস্কারগুলির মূল্যায়ন হবে?
বামমনস্ক অর্থনীতিবিদ প্রভাত ও তাঁর স্ত্রী তথা এমেরিটা অধ্যাপিকা উৎসা পট্টনায়কের দফতরে গত বছর তালা ঝোলান জেএনইউ কর্তৃপক্ষ। প্রভাতের অভিযোগ, ‘‘জেএনইউ শিক্ষকদের দমিয়ে রাখতে চায়। অফিসে তালা ঝোলানোয় আমাদের ক্যাম্পাসে যাওয়া কমেছে। অন্য শিক্ষকদেরও নানা ভাবে হেনস্থার চেষ্টা চলছে। কর্তৃপক্ষের সার্কুলারের বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে মিছিল করেছিলেন বলে অবসরের পরে ইতিহাসের এক অধ্যাপককে ‘সার্ভিস ব্রেক’ ও পেনশন বন্ধের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।’’
জেএনইউয়ের রেজিস্ট্রার প্রমোদ কুমারের যুক্তি, ‘‘শুধু রোমিলা নন, অন্য এমেরিটাস অধ্যাপকেরা গত ৫ বছরে কী কাজ করেছেন, তার কোনও রেকর্ড আমাদের কাছে নেই। তা থাকা খুব জরুরি। সে ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক রিপোর্টে তাঁদের সাম্প্রতিক কাজটির কথা লেখা যায়।’’ প্রভাত যদিও মনে করিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট সময়মতো আপডেট করা থাকলে এই সমস্ত তথ্যই সেখান থেকে পাওয়া সম্ভব।
কারও কারও মতে, মোদী জমানায় দিল্লিতে জেএনইউয়ের ছাত্র সংসদে বামেদের ক্ষমতায় থাকাটা বিজেপির বড় অস্বস্তি। আসন্ন ছাত্র-ভোটে এবিভিপি-র স্লোগান, ‘বামপন্থী মুক্ত জেএনইউ’। উগ্র জাতীয়তাবাদ বিরোধী রোমিলা বা প্রভাতের উপরে কোপ পড়াটা তাই অস্বাভাবিক নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy