বিজেপির সঙ্গ ছেড়ে তিনি বিহারে আরজেডি-কংগ্রেসের সহযোগী হওয়ার পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, ‘‘নীতীশ কুমারের ডিএনএ-তে সমস্যা রয়েছে।’’ ‘জবাব’ এসেছিল জেডিইউর তরফেও। সেই তিক্ততাপর্ব ভুলে দেড় বছরের মাথাতেই ‘মহাগঠবন্ধন’ ছেড়ে আবার বিজেপির সহযোগী হতে চলেছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী। জেডিইউর একটি সূত্র জানাচ্ছে, শনিবারই রাজ্যপাল রাজেন্দ্র অরলেকরের সঙ্গে দেখা করে ইস্তফা দিতে পারেন নীতীশ। সেই সঙ্গে বিজেপির সঙ্গে নতুন সরকার গড়ারও দাবি জানাবেন তিনি।
নীতীশে কুমারের জোট বদলের জল্পনার মধ্যেই বিহারে ক্ষমতাসীন জোট ‘মহাগঠন্ধন’-এর অন্তর্বিরোধ প্রকাশ্যে এসেছে শুক্রবার রাত থেকে। ‘সৌজন্যে’, নীতীশেরই দল জেডিইউর বিধায়ক গোপাল মণ্ডল। তিনি অভিযোগ করেন, জোটের অন্দরে প্রাপ্য সম্মান পাচ্ছেন না বিহারের মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গেই গোপাল বার্তা দিয়েছেন, আরজেডি-কংগ্রেস-বামেদের সঙ্গ ছেড়ে তাঁরা বিজেপির সহযোগী হতে পারেন। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের সামনে অস্তিত্বের সঙ্কট তৈরি হয়েছে। তাই আমাদের নেতা (নীতীশ) যে কোনও পদক্ষেপ করতে পারেন।’’ যদিও সেই সঙ্গেই গোপাল জানিয়েছেন, তিনি ব্যক্তিগত ভাবে বিজেপির সহযোগী হতে চান না।
আরও পড়ুন:
নীতীশ ঘনিষ্ঠ জেডিইউ সাংসদ সুনীলকুমার পিন্টুও শনিবার সকালে জোট বদলের বার্তা দিয়েছিন। তিনি বলেন, ‘‘মহাগঠবন্ধন সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হলেও নীতীশজিকে স্বাধীন ভাবে কাজ করতে গিয়ে বার বার বাধার মুখে পড়তে হচ্ছিল।’’ কাদের তরফে বাধা আসছিল? সরাসরি নাম না করেও বিজেপি-বিরোধী মহাজোটের ‘বড় দল’ আরজেডি-কে নিশানা করেছেন পিন্টু। যদিও লালুপ্রসাদ-তেজস্বী যাদবের দলের মুখপাত্র মৃত্যুঞ্জয় তিওয়ারি অবশ্য সংযত প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘মহাগঠবন্ধনের অন্দরে কোনও সমস্যা নেই।’’
আরও পড়ুন:
২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি মোদীকে ‘প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী’ ঘোষণা করার পরে প্রতিবাদ জানিয়ে এনডিএ জোট ছেড়েছিলেন নীতীশ। লোকসভা ভোটে একা লড়ে ভরাডুবি হয় জেডিইউ-র। এর পর ২০১৫-র বিধানসভা ভোটে আরজেডি এবং কংগ্রেসের সঙ্গে ‘মহাজোট’ (মহাগঠবন্ধন) গড়ে জয়ী হন তিনি। কিন্তু লালুপ্রসাদ পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ফের ২০১৭-য় বিজেপির সঙ্গে হাত মিলেয়েছিলেন।
আরও পড়ুন:
২০২০-র বিধানসভা ভোটে তুলনায় কম আসন পেয়েও নীতীশের ফের মুখ্যমন্ত্রী হওয়া ইস্তক বিজেপি-জেডিইউ জোটে সমস্যা বাড়ছিল। কখনও জাতপাত-ভিত্তিক জনগণনা, কখনও সিএএ, কখনও ‘বিহারের সন্ত্রাসের রমরমা’ নিয়ে প্রকাশ্যে তরজায় মেতেছেন দু’দলের নেতারা। তবে নেপথ্যে সম্ভবত ছিল জেডিইউ-কে চাপে রাখতে বিজেপির ‘ভূমিকা’। ২০২০-র ওই নির্বাচনে এলজেপির প্রয়াত প্রতিষ্ঠাতা রামবিলাস পাসোয়ানের পুত্র চিরাগ বিজেপি-কে ‘ছাড়’ দিয়ে বেছে বেছে জেডি(ইউ)-র বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়ে ভোট ভাগাভাগির ব্যবস্থা করেছিলেন।
নীতীশের দলের অভিযোগ ছিল, বিজেপির বিহার এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একাংশের চক্রান্তেই এমন ঘটনা ঘটেছে। ২০২০ সালে বিহারের বিধানসভা ভোটে বিজেপির সঙ্গে লড়ে জিতলেও ২০২২ সালের অগস্টে এনডিএ ছেড়ে বিহারে আরজেডি-কংগ্রেস-বামেদের সমর্থন নিয়ে ‘মহাগঠবন্ধন’ সরকার গড়েছিলেন নীতীশ। এ বার কি এক দশকের মধ্যে চতুর্থ বার তাঁর জোট বদলের পালা?
আরও পড়ুন:
বিজেপির একটি সূত্র জানাচ্ছে, লোকসভার আগে নীতীশের এনডিএ অন্তর্ভুক্তিতে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিশেষ কোনও আপত্তি নেই। মোদী-অমিত শাহেরা মনে করেন, এতে ওই রাজ্যে দলের ফল ভাল হবে। যদিও সম্রাট চৌধুরি, গিরিরাজ সিংহের মতো বিহার বিজেপির কট্টর নেতারা নীতীশের অতীত বিশ্বাসঘাতকতার কারণে তাঁকে এনডিএ-তে নেওয়ার ক্ষেত্রে আপত্তি জানিয়েছিলেন। কিন্তু লোকসভা ভোটকে ‘পাখির চোখ’ করে তাতে বেশি আমল দেননি মোদী-শাহেরা। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সেই ‘বার্তা’ যে বিহারের নীতীশ- বিরোধী বিজেপি নেতাদের কাছে ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজের মন্তব্যে তার স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলেছে। তিনি বলেন, ‘‘নীতীশ কুমারের বিষয়ে আমাদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যে সিদ্ধান্ত নেবেন সেটাই শিরোধার্য।’’ যদিও গত সপ্তাহেই তাঁর মন্তব্য ছিল— ‘‘নীতীশের জন্য এনডিএ-র দরজা চিরতরে বন্ধ হয়ে গিয়েছে।’’