আটকাল প্রশাসন। ফিরতি বিমানে শ্রীনগর থেকে দিল্লি ফেরার পরে রাহুল গাঁধী। শনিবার। ছবি: পিটিআই।
বিমানেই রাহুল গাঁধীকে দেখে দুঃখে ফেটে পড়লেন এক মহিলা। চোখ ভরা জল নিয়ে বললেন, ‘‘আমার ভাই অসুস্থ। হৃদ্যন্ত্রের সমস্যা। দশ দিন ধরে জানিনা, ও কেমন আছে? ওর ছোট ছোট বাচ্চা আছে। অনেক দিন ধরে চোখের দেখা দেখতে পারিনি।’’
শ্রীনগর থেকে দিল্লিতে ফিরতি বিমানের ঘটনা। বিমান ওড়ার পরে ধারের আসনে চলে আসেন রাহুল। একে একে কথা বলেন অন্য যাত্রীদের সঙ্গে। তাঁদের কথা শুনে বুঝতে পারেন, কাশ্মীরের পরিস্থিতি মোটেই স্বাভাবিক নয়। আজ সকালেই ন’টি দলের ১২ জন নেতাকে নিয়ে দিল্লি থেকে শ্রীনগর রওনা দেন রাহুল। যে দলে রাহুলের সঙ্গে কংগ্রেসের গুলাম নবি আজাদ, আনন্দ শর্মা, কে সি বেণুগোপালের পাশাপাশি সীতারাম ইয়েচুরি, দীনেশ ত্রিবেদী, শরদ যাদব, মনোজ ঝায়ের মতো বিরোধী নেতারা ছিলেন। সঙ্গী হয় সাংবাদিকদের একটি দলও।
কিন্তু শ্রীনগর বিমানবন্দরে নামামাত্রই হুলস্থূল। সাংবাদিকদের প্রথমে ধাক্কা দিয়ে, টেনে-হিঁচড়ে বিমানবন্দর থেকে বার করে দেন পুলিশ ও নিরাপত্তাকর্মীরা। পরে নেতাদের নিয়ে যাওয়া হয় বিমানবন্দরের লাউঞ্জে। সেখানে তাঁদের বোঝাতে ছুটে আসেন জম্মু-কাশ্মীর সরকারের কর্তা ও পুলিশ আধিকারিকেরা। তাঁরা সরাসরি জানান, বিমানবন্দরের বাইরে পা রাখতে পারবেন না নেতারা। কালই বিরোধী দলের নেতাদের কাশ্মীরে না আসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল জম্মু-কাশ্মীর সরকারের পক্ষ থেকে।
রাহুলেরা যখন বিমানবন্দরে, রাজভবনে বসে রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক বলছেন, ‘‘রাহুল গাঁধীর আর এখন আসার প্রয়োজন নেই। তিনি এসে পরিস্থিতি আরও জটিল করতে চান। দিল্লিতে বলা মিথ্যে ফের বলতে চান। এটা ঠিক নয়।’’ দুপুর ১২টা নাগাদ যখন দিল্লি থেকে রাহুলদের বিমান ওড়ে, তার মিনিট সাতেকের মধ্যেই অরুণ জেটলির প্রয়াণের খবর ঘোষণা হয়। কিন্তু শ্রীনগরে মোবাইল চলছে না। নেমেও তা জানতে পারেননি নেতারা।
অফিসারদের সঙ্গে বিবাদ করে রাহুল বলেন, ‘‘খোদ রাজ্যপাল আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এখন আপনারা বলছেন যেতে পারব না? সরকার বলছে, সব স্বাভাবিক। তা হলে যেতে নিষেধ কিসের?’’ কর্তারা বলেন, অশান্তি ছড়াতে পারে। রাহুলের যুক্তি, ‘‘যে এলাকায় শান্তি আছে, সেখানেই ১০-১৫ জনের সঙ্গে কথা বলে আসব। আর ১৪৪ ধারা জারি থাকলে একা যাব।’’ তাতেও রাজি হয়নি সরকার। রাজ্যপালও বলেন, ‘‘সৌজন্যের খাতিরে রাহুল গাঁধীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। এখন তিনি রাজনীতি শুরু করেছেন। এই নেতাদের জাতীয় স্বার্থ মাথায় রাখা উচিত।’’
বিমানবন্দর থেকেই ফিরতি বিমানে দিল্লি ফেরত পাঠানো হয় নেতাদের। তার আগে সব নেতারা শ্রীনগরের জেলাশাসকের উদ্দেশে স্মারকলিপি জমা দেন। তাতে প্রতিবাদ করে লেখা হয়, ‘‘আমরা সকলে নির্বাচিত প্রতিনিধি, দায়িত্বশীল নেতা। মানবতা ও শান্তির জন্য জম্মু-কাশ্মীরের মানুষের পাশে দাঁড়াতে এসেছি। আমাদের আসার পিছনে অন্য উদ্দেশ্য আছে বলে যে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে, তা ভিত্তিহীন। আমাদের আটকে দেওয়াও অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক। আমাদের মৌলিক অধিকারও লঙ্ঘন করা হচ্ছে।’’
কিন্তু ফিরতি বিমানে রাহুলকে সামনে পেয়েই নিজেদের ক্ষোভের কথা শোনাতে শুরু করেন যাত্রীরা। রাহুলও শোনেন। দিল্লি বিমানবন্দরে নেমে রাহুল-আজাদেরা বলেন, ‘‘জম্মু-কাশ্মীরের পরিস্থিতি ভয়াবহ। যাত্রীদের থেকে শোনা গল্প চোখে জল আনবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy