একাদশতম আন্তঃরাজ্য পরিষদের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী। শনিবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।
আন্তঃরাজ্য পরিষদের বৈঠকে কেন্দ্রের দাদাগিরির বিরুদ্ধে কার্যত বিদ্রোহ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী জানালেন, ‘‘রাজ্যের স্বার্থের কথা না ভেবেই দিল্লি একতরফা সব কিছু চাপিয়ে দিচ্ছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না।’’
মোদী সরকারের আমলে জাতীয় উন্নয়ন পরিষদের বৈঠক উঠে গিয়েছে। এখন হয় নীতি আয়োগের বিষয়ভিত্তিক বৈঠক। ফলে রাজ্যের সার্বিক সমস্যা ও দাবি-দাওয়া দিল্লির কাছে তুলে ধরার সুযোগ কার্যত নেই। পড়ে ছিল আন্তঃরাজ্য পরিষদের বৈঠক। আর তাতেও যে ভাবে কেন্দ্র আগে থেকে বিষয়সূচি স্থির করে রাজ্যগুলিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে, তার বিরুদ্ধে আজ ক্ষোভে ফেটে পড়েন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যের কোনও বক্তব্য রাখার জায়গা নেই। এটা ঠিক নয়। রাজ্যের অন্য কোনও বিষয়ে অগ্রাধিকার থাকতেই পারে।’’
পশ্চিমবঙ্গের অগ্রাধিকার কী?
মমতা বলেন, ‘‘অবশ্যই আর্থিক সমস্যা। একে ঋণে জর্জরিত রাজ্য। তায় আবার কেন্দ্রীয় অনুদান কমিয়ে দিয়েছে দিল্লি। অথচ, আলোচ্যসূচিতে এ নিয়ে কিছু বলার জায়গাই নেই।’’ মমতা অবশ্য ছাড়েননি। নিজের বক্তৃতায় তিনি আর্থিক প্রসঙ্গ তোলেন। এবং কৌশলে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে জুড়ে নেন অন্য রাজ্যগুলির সমস্যা। মমতা বলেন, ‘‘আমি মহারাষ্ট্র, অন্ধ্র বা উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যগুলির ঋণ নিয়েও উদ্বিগ্ন। কী ভাবে রাজ্যগুলি এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারে তার জন্য প্রধানমন্ত্রী নেতৃত্বে একটি কমিটি গড়া হোক।’’ কেন্দ্রকে অস্বস্তিতে ফেলে এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন অন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা।
অ-বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীরা যে ক্ষোভ উগরে দিতে পারেন তা আঁচ করে দুপুরে নীতীশ কুমার, মানিক সরকার, মমতা ও কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী বীরভদ্র সিংহের সঙ্গে এক টেবিলে খেতে বসেন মোদী। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি।
রাজ্যের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে কেবল ঋণের প্রশ্নেই থেমে থাকেননি মমতা। কেন্দ্রের দাবি ছিল, চতুর্দশ অর্থ কমিশনের সুপারিশ কার্যকর হওয়ায় রাজ্যকে দেওয়া কেন্দ্রীয় করের অংশ ৩২ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪২ শতাংশ হয়েছে। মমতা বলেন, ‘‘কেন্দ্র এই দাবি করলেও, বাস্তবে ৩৯টি প্রকল্পে কেন্দ্রীয় অনুদান বন্ধ হয়েছে, ৫৮টি প্রকল্পে কেন্দ্রীয় অনুদান বিপুল ভাবে কমে গিয়েছে। ফলে সামাজিক উন্নয়নের মতো প্রকল্পগুলি কার্যত বন্ধ হওয়ার মুখে।’’ রাজ্যের যুক্তি সর্বশিক্ষা অভিযানের মতো প্রকল্পে নতুন নিয়মে মাত্র দশ শতাংশ অর্থ অনুদান দিচ্ছে দিল্লি। অর্থ সাহায্য কমেছে মিড ডে মিল প্রকল্পে। এর ফলে সরকারি স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের যেমন পুষ্টিকর খাবার দিতে সমস্যা হচ্ছে, তেমনি সর্বশিক্ষা অভিযানের সঙ্গে যুক্ত প্রায় পাঁচ লক্ষ শিক্ষক-কর্মীর ভবিষ্যৎ ঘিরে সংশয় তৈরি হয়েছে।
আগামী সপ্তাহে ফের দিল্লি আসার কথা মমতার। একান্ত বৈঠকে বসার কথা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। রাজ্যের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সেই বৈঠকে দাবি-দাওয়া জানাবেন তিনি। আজকের বিদ্রোহী মনোভাবের জেরে তখন কোনও কেন্দ্রীয় সাহায্যের আশ্বাস মেলে কিনা সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy