বছর ঘুরতেই পঞ্জাবে নির্বাচন। সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি ভেঙে যখন পঞ্জাবের নদীগুলিতে বাড়তি জল দেওয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, তখন সিঁদুরে মেঘ দেখছে ইসলামাবাদ। আর তাই এ নিয়ে ফের সুর চড়াতে শুরু করেছে নওয়াজ শরিফ সরকার।
পাক প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সংক্রান্ত বিশেষ সহকারী তারিক ফাতেমি আজই বলেছেন, ‘‘সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি নিয়ে ইসলামাবাদ আলোচনায় প্রস্তুত। কিন্তু চুক্তির শর্তে কোনও পরিবর্তন আমরা মেনে নেব না।’’ আর শরিফের বিদেশনীতি সংক্রান্ত উপদেষ্টা সরতাজ আজিজ তো আগেই হুমকি দিয়ে রেখেছেন যে, ‘‘এই জল চুক্তি ভাঙা যুদ্ধ ঘোষণার সামিল।’’
ঘটনাচক্রে, সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তির কৌশলগত দিকগুলি খতিয়ে দেখতে আজই নতুন একটি আন্তঃমন্ত্রক টাস্ক ফোর্স গঠন করেছেন মোদী। প্রধানমন্ত্রীর প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারি নৃপেন্দ্র মিশ্রের নেতৃত্বে এই কমিটিতে রয়েছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, বিদেশসচিব এস জয়শঙ্কর এবং বিভিন্ন মন্ত্রকের সচিবেরা। আছেন পঞ্জাব ও জম্মু-কাশ্মীরের দুই মুখ্যসচিবও।
উরি হামলার পরেই গুঞ্জন উঠেছিল, ১৯৬০ সালের এই চুক্তি বাতিল করতে পারে ভারত। পঞ্জাবের সভা থেকে মোদী হুমকি দিয়েছিলেন, শতদ্রু, বিপাশা এবং ইরাবতী নদীর একফোঁটা জল পাকিস্তানকে দেওয়া যাবে না। এ-ও বলেছিলেন, রক্ত ও আর নদীর জল একসঙ্গে বইতে পারে না। সূত্রের দাবি, বর্তমান পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক ‘সিন্ধু স্থায়ী কমিশন’-এর বৈঠক ঝুলিয়ে রেখে পাকিস্তানকে বাড়তি চাপ দেওয়ার কৌশল নিচ্ছে সাউথ ব্লক। বস্তুত, গত কাল বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ বলেই দিয়েছেন, আলোচনার প্রশ্নে আরও সময় লাগবে দিল্লির।
ইসলামাবাদের আশঙ্কাটা সেখানেই। তাদের অভিযোগ, আলোচনা দেরিতে শুরু হওয়ার সুযোগ নিয়ে কিষণগঙ্গা ও চন্দ্রভাগা নদীর উপরে দু’টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে ভারত। সে ক্ষেত্রে পরে পাকিস্তান ওই প্রকল্প বাতিলের দাবি তুললে বলা হবে, ‘কাজ অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে।’ আর চুক্তি বাতিলের আশঙ্কা তো রয়েইছে।
যে আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে দিল্লির দাবি, চুক্তি মোটেই বাতিল হবে না। তবে তাতে কিছু নতুন বিষয় যোগ করার কথা ভাবা হচ্ছে। যেমন, বিপাশা, ইরাবতী এবং শতদ্রুর জল আরও বেশি করে সেচ ও জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করতে চায় দিল্লি। সিন্ধু, বিতস্তা ও চন্দ্রভাগার জল বিনা বাধায় পাকিস্তানে যায়। ওই জলের উপরেও ভারতের ২০ শতাংশ অধিকার রয়েছে। এ যাবৎ ভারত সেই জলকে বেঁধে রাখেনি বলে প্রাপ্য জলের অনেকটাই বেশি পায় পাকিস্তান। কিন্তু নির্বাচনের মুখে তৎপর বিজেপির একাংশের মতে, এ বার সেই জলে লাগাম দিক ভারত। সেচ, বিদ্যুৎ বা কৃষিকাজে ব্যবহার করা হোক ওই জল। তার ফায়দা নিক জম্মু-কাশ্মীর, হিমাচল ও পঞ্জাবের মতো রাজ্যগুলি। তার পরে চুক্তি অনুয়াযী বাকি জল দেওয়া হোক পাকিস্তানকে।
তবে ভারত ভালই জানে, চুক্তি বাতিল করলে আন্তর্জাতিক মঞ্চে চরম অস্বস্তিতে পড়তে হতে পারে। জটিলতা বাড়তে পারে ‘পাক-বন্ধু’ চিনের সঙ্গেও। সিন্ধু নদের উৎপত্তি চিনে। সে ক্ষেত্রে চিনের হস্তক্ষেপে সিন্ধুতে জলপ্রবাহ কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমনকী ব্রহ্মপুত্রের জল নিয়েও নতুন জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে চিন। নতুন করে তা মোটেই কাম্য নয় সাউথ ব্লকের কাছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy