শেষ মুহূর্তে ভেস্তে গিয়েছিল দু’দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) পর্যায়ের বৈঠক। তবে আজ সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ও পাক রেঞ্জার্সদের বৈঠক হল নয়াদিল্লিতে। আর সেখানে ধৃত পাক জঙ্গি নাভেদের প্রসঙ্গও টেনে আনল ভারত।
বস্তুত দু’দেশের মধ্যে এনএসএ পর্যায়ের বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার পরে এই প্রথম কোনও শীর্ষ বৈঠকে বসলেন ভারত-পাকিস্তানের প্রতিনিধিরা। কথা ছিল জঙ্গি অনুপ্রবেশ ও সংঘর্ষ-বিরতি চুক্তি লঙ্ঘন নিয়ে আলোচনা করবে দু’দেশ। সেই মতো আজ আলোচনায় বসেন বিএসএফের ডিজি ডি কে পাঠক এবং পাক রেঞ্জার্সের ডিজি মেজর জেনারেল উমর ফারুক বুরকি। সঙ্গে ছিল দু’পক্ষের প্রতিনিধি দল। বিএসএফ সূত্রের খবর, জঙ্গি অনুপ্রবেশ নিয়ে আলোচনার সুযোগেই পাকিস্তানে প্রশিক্ষিত নাভেদের কাজকর্ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হয় পাক প্রতিনিধিদের।
গত মাসের গোড়ায় জম্মু সংলগ্ন উধমপুরের কাছে বিএসএফের একটি কনভয়ের উপর হামলা চালিয়েছিল দুই জঙ্গি। এদের মধ্যে এক জন ঘটনাস্থলে মারা গেলেও, পরে স্থানীয় গ্রামবাসীদের তৎপরতায় বিএসএফের হাতে গ্রেফতার হয় নাভেদ। তাকে জেরা করে জানা যায়, সে আসলে পাকিস্তানের ফয়সলাবাদের বাসিন্দা। অর্থের বিনিময়ে তাকে ভারতে সন্ত্রাস চালাতে পাঠিয়েছিল লস্কর-ই তইবা। এই কাজের জন্য তাকে প্রশিক্ষণও দেয় ওই জঙ্গি সংগঠন। কাশ্মীর সীমান্তের কোথায়, কী ধরনের প্রশিক্ষণ সে পেয়েছে, জেরায় নাভেদ তা-ও জানিয়েছে বলে দাবি ভারতীয় গোয়েন্দাদের। নাভেদের ওই স্বীকারোক্তি সামনে আসার পরে কেন্দ্র ঠিক করে, ভারত-পাক এনএসএ পর্যায়ের বৈঠকে প্রমাণ হিসেবে সেগুলি পাক প্রতিনিধিদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। কিন্তু ওই বৈঠক বাতিল হওয়ায় সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।
আর তাই আজকের ডিজি পর্যায়ের বৈঠকে নাভেদের প্রসঙ্গ ওঠাতে শুরু থেকেই তৎপর ছিল ভারত। সন্ত্রাস ও অনুপ্রবেশের মতো বিষয় আলোচ্যসূচিতে থাকায় আজ নাভেদের প্রসঙ্গ উত্থাপন করতে সুবিধেই হয় ভারতের পক্ষে। সূত্রের খবর, কী ভাবে ভারত-পাক সীমান্ত দিয়ে জঙ্গি অনুপ্রবেশ ঘটছে, তা বোঝাতে গিয়েই নাভেদের উদাহরণ তুলে ধরেন বিএসএফ কর্তারা। লস্কর প্রশিক্ষিত ওই জঙ্গি কী ভাবে তাদের কনভয়ের উপর হামলা চালিয়ে দু’জন জওয়ানকে মেরে ফেলেছিল, সে বিষয়েও বিশদে জানানো হয় পাক আধা সামরকি বাহিনীর প্রতিনিধিদের। অবিলম্বে এই ধরনের অনুপ্রবেশ আটকাতে পড়শি দেশেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধও জানিয়েছে ভারত। একই সঙ্গে গত দেড় বছরে পাক রেঞ্জার্সের পক্ষ থেকে কত বার সংঘর্ষ-বিরতি চুক্তি ভাঙা হয়েছে, তার বিস্তারিত তথ্য আজকের বৈঠকে তুলে ধরা হয়। রেঞ্জার্সদের হামলায় কী ভাবে সেনা ছাড়াও সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তা-ও জানিয়েছে বিএসএফ। তবে এর পাল্টা হিসেবে বিএসএফের বিরুদ্ধেও আজ একই ভাবে বিনা প্ররোচনায় হামলার অভিযোগ এনেছে পাক রেঞ্জার্সেরা।
তবে ডিজি পর্যায়ের বৈঠকের ঠিক আগে সংঘর্ষ-বিরতি লঙ্ঘন করে পাক সেনা গুলি চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে ভারতীয় সেনা। কাল সন্ধে সাতটা থেকে রাত ন’টার মধ্যে জম্মু-কাশ্মীরের পুঞ্চ জেলায় নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে ভিম্বের গালি সেক্টরে একাধিক বার গুলি চালিয়েছে পাক বাহিনী। পাল্টা জবাব দিতে আক্রমণ শানিয়েছে ভারতীয় জওয়ানরাও। এই ঘটনায় দু’পক্ষে হতাহতের খবর নেই বলেই জানিয়েছে ভারতীয় সেনা বাহিনী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy