Indians spending more on these things during pandemic, take a look at it dgtl
Pandemic
ম্যাগি, চ্যবনপ্রাশ... কোভিড ভারতীয় ক্রেতার খরচের পথকে কী ভাবে বদলে দিল
সাল ২০১৯। নভেম্বর মাস। চিনে তখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নতুন মারণ ভাইরাস কোভিড ১৯। ভারতে তখনও সেই ভাইরাসের আঁচ এসে পড়েনি। করোনা সংক্রমণের প্রথম রিপোর্ট আসে কেরল থেকে। সেটা ছিল ৩০ জানুয়ারি। তার পর কেটে গিয়েছে ৬ মাস। এখন গোটা দেশে আক্রান্তের সংখ্যায় ২০ লক্ষ ছাপিয়ে গিয়েছে।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০২০ ১৮:৪৫
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
সাল ২০১৯। নভেম্বর মাস। চিনে তখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নতুন মারণ ভাইরাস কোভিড ১৯। ভারতে তখনও সেই ভাইরাসের আঁচ এসে পড়েনি। করোনা সংক্রমণের প্রথম রিপোর্ট আসে কেরল থেকে। সেটা ছিল ৩০ জানুয়ারি। তার পর কেটে গিয়েছে ৬ মাস। এখন গোটা দেশে আক্রান্তের সংখ্যায় ২০ লক্ষ ছাপিয়ে গিয়েছে।
০২২০
আক্রান্তের সংখ্যাটা যখন একটু একটু বাড়তে শুরু করেছিল, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দেশ জুড়ে লকডাউন ঘোষণা করা হল মার্চের ২৫ তারিখে। টানা ৪৯ দিন ধাপে ধাপে লকডাউন জারি রইল গোটা দেশে। রাজ্যগুলোও নিজের মতো করে লকডাউন ঘোষণা করল। কিন্তু সামগ্রিক ছবিতে তাতে খুব একটা পরিবর্তন আসেনি। এক, দুই, তিন করে আক্রান্তের সংখ্যাটা বাড়তে বাড়তে আজ সেটা ২০ লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে। মৃত্যুও হয়েছে ৪১ হাজারের বেশি মানুষের। দেশ লড়ছে, দেশবাসী লড়ছে, সরকার লড়ছে, রাজ্যগুলো লড়ছে— সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সবাই নিজের নিজের মতো করে এবং ঐক্যবদ্ধ ভাবে লড়াই জারি রেখেছে।
০৩২০
করোনার আগে দেশের ছবিটা অন্য রকম ছিল। কিন্তু করোনা এসে অনেক কিছুই বদলে দিয়েছে। অর্থনীতি ধাক্কা খেয়েছে, মানুষ কাজ হারিয়েছে। সবচেয়ে বড় বিষয় যেটা তা হল, করোনা আমাদের দৈনন্দিন অভ্যাসটার খোলনোলচেই বদলে দিয়েছে।
০৪২০
করোনা নিয়ে মনের ভীতিই হোক বা সচেতনতা— হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক এখন আমাদের নিত্য দিনের সঙ্গী হয়ে গিয়েছে। লকডাউনের শুরুর দুকে বাস-ট্রেন সব স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। অফিস-কাছারি নেই, রাস্তায় বেরনো নেই, দোকানপাট খোলা নেই, শপিং-এর জন্য হপিং নেই, রেস্তরাঁয় বসে খাওয়া নেই— এ সব না থাকায় একেবারে ঘরবন্দি হয়ে পড়েছিল মানুষ।
০৫২০
দীর্ঘ দিন ঘরে বসে থাকার ফলে মানুষের অভ্যাসেও একটা বদল এসে গিয়েছে। একঘেয়েমি কাটাতে করোনা পূর্ববর্তী সময়ে সিনেমা দেখে, গল্প করে বা একটু রেস্তরাঁয় গিয়ে সেটা কাটিয়ে আসার মতো সুযোগ ছিল। আমরা সব সময় বিকল্পের সন্ধান চালাতে থাকি। ফলে লকডাউনের জেরে দেশবাসী ঘরবন্দি হয়ে পড়ল, একঘেয়েমি কাটাতে বিকল্প রাস্তাও বার করে নিয়েছেন তাঁরা। বাড়িতে বসেই ‘দুধের সাধ ঘোলে মেটানো’র বন্দোবস্ত করে নিয়েছেন।
০৬২০
সিনেমা দেখা সেরে ফেলছেন হাতের ছোট স্মার্টফোনটিতে, অনলাইনে খাবার অর্ডার দিয়ে বাড়িতেই রেস্তরাঁর সাধ মিটিয়ে ফেলছেন বা অনলাইনে শপিংয়ের মাত্রাটা আরও বাড়িয়ে ফেলেছেন। অফিসের কাজটাও বাড়ি থেকে মিটিয়ে ফেলছেন। তা, এই করোনা এবং তার জেরে লকডাউন ভারতীয়দের অভ্যাসে কী কী পরিবর্তন ঘটালো তা দেখে নেওয়া যাক।
০৭২০
করোনাকে হারাতে গেলে ইমিউনিটি বাড়াতে হবে— ছোট, বড় সকলেই এখন এই কথাটা বুঝে গিয়েছে। সকলেরই একই সুর। অতএব, এই ভাবনার সঙ্গে সঙ্গেই বাড়ল ‘ইমিউনিটি বুস্টার’-এর চাহিদা। বিভিন্ন সংস্থাও এই চাহিদায় হাত বাড়িয়ে নানা রকম ‘ইমিউনিটি বুস্টার’ তৈরি করতে শুরু করল।
০৮২০
আমাদের দেশে আয়ুর্বেদের উপর আবার অনেকেই ভরসা করেন। অতএব মানুষের এই চাহিদার সুযোগ নিয়ে আয়ুর্বেদ সংস্থাগুলোও ‘ইমিউনিটি বুস্টার’-এর উত্পাদন একলাফে বহু গুণ বাড়িয়ে দিল।
০৯২০
নিয়েলসন হোল্ডিংস পিএলসি-এর সমীক্ষা বলছে, জুনে চ্যবনপ্রাশের বিক্রি বেড়েছে ২৮৩%, অন্য দিকে, ৩৯% বিক্রি বেড়েছে ব্র্যান্ডেড মধুর। ডাবর-এর দাবি, এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে তাদের সংস্থার চ্যবনপ্রাশের বিক্রি বেড়েছে ৭০০%। নিয়েলসেন সাউথ এশিয়ার মার্কেট লিডার সমীর শুক্লর মতে, “গ্রাহকদের চাহিদাটা বদলেছে। এখন অনেক বেশি সংখ্যক গ্রাহক ইমিউনিটি বুস্টার, হেলদি ফুডের দিকে ঝুঁকছেন।” তবে এই চাহিদাটা স্বল্পকালীন নয় বলেও মত শুক্লর। ব্রিকওয়ার্ক রেটিংস-এর মতে, এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে পতঞ্জলির বিক্রিও বহুগুণ বেড়েছে।
১০২০
সহজে নষ্ট হবে না এমন খাবারের অনলাইন চাহিদা বিপুল বেড়েছে এই অতিমারির আবহে। বিশেষ করে সকালের চটজলদি খাবার যেমন, নুডলস, বিস্কুট, স্ন্যাকস জাতীয় খাবার। ইউরোমনিটর জানাচ্ছে, এই সময়ে যে হারে চাহিদা বেড়েছে এই সব খাবারের তাতে সংস্থাগুলো জোগান দিয়ে কুলিয়ে উঠতে পারছে না। বিক্রিও বেড়েছে প্রচুর।
১১২০
হাইতং সিকিউরিটিজ-এর সমীক্ষা বলছে, নেসলে ইন্ডিয়া-র ম্যাগি-র বিক্রি এত হয়েছে যে শুধু মার্চের শেষেই এর থেকে আয় বেড়েছে ১০.৭ শতাংশ। তেমনই এপ্রিল থেকে মে-র মধ্যে রেকর্ড মাত্রায় বিক্রি হয়েছে পার্লে-জি বিস্কুটও।
১২২০
এই অতিমারিতে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে ব্রিটানিয়া। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তারা বিভিন্ন প্যাকেটজাত খাদ্যের উৎপাদন ও জোগান বাড়িয়েছে। তেমনটাই জানাচ্ছে এমকে গ্লোবাল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড।
১৩২০
করোনা আমাদের পরিচয় করিয়েছে সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং-এর সঙ্গে। এখন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে সামাজিক দূরত্বটাকে আমাদের দৈনন্দিন অভ্যাসে পরিণত করতে সাহায্য করেছে এই করোনা। এখন মুখোমুখি আর গল্পগুজব হচ্ছে না। মিটিং, মিছিল হচ্ছে না। সবই ভার্চুয়াল হয়ে উঠেছে আস্তে আস্তে।
১৪২০
অনলাইনে ক্লাস হচ্ছে, মিটিং হচ্ছে, চ্যাটিং চলছে। অতিমারির জেরে এক ধাক্কায় আমাদের অভ্যাসটাই ভার্চুয়ালে বদলে গিয়েছে। ফলে এই সুযোগে বিভিন্ন অ্যাপ সংস্থাগুলো ভিডিয়ো কনফারেন্সের জন্য অ্যাপ এনেছে বাজারে। বাড়ি থেকে যে হেতু কাজের চল বেড়েছে, পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ইন্টারনেট এবং ল্যাপটপের চাহিদাও।
১৫২০
ফ্লিপকার্টে গত মার্চ থেকে ল্যাপটপের সার্চ অনেক বেড়ে গিয়েছে। তার মধ্যে হাই কনফিগারেশন ল্যাপটপের সার্চ অনেক বেশি।
১৬২০
অন্য দিকে, জি৫, নেটফ্লিক্স এই মুভি পোর্টালগুলোর গ্রাহক সংখ্যা এক লাফে বহু গুণ বেড়েছে। মে-তে প্রতি দিন ৩৩ শতাংশ করে নতুন গ্রাহক বেড়েছে। এবং ৪৫ শতাংশ গ্রাহক এই অ্যাপ ডাউনলোড করেছে। এক সমীক্ষা বলছে, বিভিন্ন রাজ্যে লকডাউন শিথিল হওয়ার পরেও এই পোর্টালগুলোর চাহিদা কমেনি।
১৭২০
লকডাউনের জেরে ঘরবন্দি হওয়ার কারণে অনেকেই সেই সময়টাকে নানা ভাবে কাটানোর চেষ্টা করেছেন। কারও রান্নার শখ থাকলে নতুন নতুন রান্না করে, কেউ আবার ঘর সাজিয়ে— বাড়ির পুরুষ, মহিলা নির্বিশেষে সকলেই কিছু না কিছু কাজের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছিলেন।
১৮২০
সমীক্ষা বলছে, এই অতিমারির সময়ে ঘর সাজানোর জন্য এবং নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস অনলাইনে কেনার পরিমাণটা বাড়িয়েছেন অনেকেই। ফলে জুসার, মিক্সার, মাইক্রোওয়েভ, টোস্টার, ভ্যাকুয়াম ক্লিনার-এর মতো জিনিসগুলোর চাহিদা তিন গুণ বেড়েছে জুলাইয়ে। এমনই জানাচ্ছে ফ্লিপকার্ট।
১৯২০
আবার যে হেতু সেলুন বন্ধ ছিল বা এখনও অনেকে সেলুনটাকে নিরাপদ মনে করছেন না তাঁরা অনলাইন থেকে ট্রিমার, পুরুষদের সেভিং কিটের মতো জিনিসগুলো কিনেছেন। ফলে বিক্রিও বহু গুণ বেড়েছে। করোনা পূর্বব্রতী সময়ের থেকে পরবর্তী সময়ে এ সব জিনিসের বিক্রি পাঁচ গুণ বেড়েছে। ফিলিপস সংস্থা বলছে, পুরুষ ও মহিলাদের গ্রুমিং কিটের বিক্রি ৬০-৭০ শতাংশ বেড়েছে মে-জুনের মধ্যে।
২০২০
করোনার জেরে বহু মানুষ কাজ হারিয়েছেন। পেট চালানোর জন্য অনেকেই নিজেদের সঞ্চিত সোনা-দানা বন্ধক রাখতে বাধ্য হয়েছেন। বাজারে এখন গোল্ড লোন দেওয়ার মতো বহু সংস্থা এসে গিয়েছে। এই অতিমারি সেই সংস্থাগুলোর ব্যবসা বহু গুণে বাড়িয়ে দিয়েছে।