গবেষণাগারে গোবর্ধন দাস। নিজস্ব চিত্র
ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা থেকে মুক্তির পথ কি এ বার দেখা যাচ্ছে?
দেশের চারটি এবং আমেরিকার একটি প্রতিষ্ঠানের যৌথ গবেষণায় দাবি, ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মার জীবাণু শরীরে কোথায় লুকিয়ে থাকে, তা তারা খুঁজে পেয়েছে। শুধু তাই নয়, কী ভাবে ওই লুকনো আস্তানা থেকে জীবাণুগুলিকে টেনে বার করে এনে বিনাশ করা যায়, সেই উপায়ও তাঁরা বার করে ফেলেছেন বলে ওই গবেষকদের দাবি। গবেষক দলের দুই বাঙালি— দলনেতা জেএনইউয়ের গোবর্ধন দাস, অন্য জন ওই প্রতিষ্ঠানেরই দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। সঙ্গে আছে এমস, নয়াদিল্লির ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি, ভুবনেশ্বরের শিক্ষা ও অনুসন্ধান ডিমড ইউনিভারসিটি এবং আমেরিকার ভ্যান্ডারবিল্ট ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিন। আন্তর্জাতিক গবেষণাপত্রিকা ‘জার্নাল অব ক্লিনিকাল ইনভেস্টিগেশন’-এ গোবর্ধনবাবুদের গবেষণাপত্র প্রকাশের জন্য গৃহীত হয়েছে এবং পত্রিকার ইন্টারনেট সংস্করণে তা রয়েছে।
যে সব যক্ষ্মা রোগী মাঝপথে ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেন, পরবর্তী কালে তাঁদের ক্ষেত্রে আর ওষুধ কাজ করে না। এই ধরনের যক্ষ্মা সব থেকে মারাত্মক। ফলে রোগী ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যান। এই ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা প্রতিরোধ কী ভাবে করা যায়, তা নিয়ে গবেষণা চলছে। গোবর্ধনবাবুদের গবেষণা ওই রোগমুক্তির আশা দেখাচ্ছে বলে মনে করেন টিবি গবেষকদের অনেকেই ।
ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মার জীবাণুর রহস্য কী ভাবে উদ্ঘাটন করলেন ওই গবেষকেরা? গোবর্ধনবাবু বলেন, ‘‘মাঝপথে ওষুধ বন্ধ করলে যে সব যক্ষ্মার ব্যাক্টিরিয়া শরীরে থাকে, তারা নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে নেয়। সেগুলি স্টেম সেলে ঢুকে ঘুমিয়ে থাকে। এক সময় ঘুম থেকে উঠে বংশবিস্তার করে ফের সক্রিয় হয়ে ওঠে।’’
যক্ষ্মার শক্তিশালী ওষুধ স্টেম সেলে ঢুকে সেই জীবাণুগুলিকে মারতে পারে না কেন? গোবর্ধনবাবুদের গবেষণাপত্র বলছে, স্টেম সেলে ঢুকে ওই জীবাণু সেখানে লিপিডের (চর্বি জাতীয় পদার্থ) উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। আর নিজেরা সেই লিপিডের চাদরের তলায় ঢুকে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ে। ওষুধ বুঝতেই পারে না কোথায় পালিয়েছে জীবাণুগুলি। জেএনইউয়ের সেন্টার ফর মলিকিউলার মেডিসিনের চেয়ারপার্সন গোবর্ধনবাবু বলেন, ‘‘আমরা ওই জীবাণুর আত্মগোপন করার রহস্য খুঁজে পেতেই লিপিডের চাদর সরিয়ে ফেলা আর কোনও রহস্য থাকল না। পরীক্ষা করে দেখেছি, টিবির চিরাচরিত ওষুধের সঙ্গে স্ট্যানিন জাতীয় ওষুধ মিশিয়ে দিলেই সমস্যা থাকবে না।’’ গবেষকদের দাবি, স্ট্যানিন জাতীয় রাসায়নিক লিপিডের চাদর সরিয়ে দেবে। আর ঘুমন্ত জীবাণু উন্মুক্ত হয়ে পড়বে। তখন তাকে মেরে ফেলবে প্রচলিত ওষুধই।
স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, ২০১৮ সালে পশ্চিমবঙ্গে ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৩১৮২। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ‘ইন্ডিয়া টিবি রিপোর্ট ২০১৯’ অনুযায়ী, ২০১৮ সালে দেশে মোট সাড়ে ২১ লক্ষ যক্ষ্মা রোগী চিহ্নিত হয়েছে। রাজ্য যক্ষ্মা আধিকারিক বরুণ সাঁতরা বলেন, ‘‘আধুনিক যন্ত্রের শরীরে কোথায় জীবাণু লুকিয়ে রয়েছে, কোন কোন ওষুধে প্রতিরোধ রয়েছে, তা জানা সম্ভব। গবেষণাপত্রে কী রয়েছে, তা না দেখে মন্তব্য করা সম্ভব নয়।’’
যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্রজকিশোর সাহা বলেন, ‘‘ওষুধ প্রতিরোধী টিবি’র বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিডাকুইলাইন ও ডেলাম্যানিডের ব্যবহারে যে ফল এখনও পর্যন্ত পাওয়া গিয়েছে তা খারাপ নয়। যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা মেনে আমরা চলি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পাশাপাশি জাতীয় স্তরে যক্ষ্মা রোধে যে কমিটি রয়েছে তার মতামত গুরুত্বপূর্ণ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy