Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

রেলে দূরপাল্লায় ভাড়া বাড়ল, কমল না ক্ষতি

কয়েক দিন ধরেই ভাড়া বাড়ানোর ব্যাপারে ইঙ্গিত দিচ্ছিল রেল মন্ত্রক।

ছবি: সংগৃহীত।

ছবি: সংগৃহীত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২০ ০৩:৪৫
Share: Save:

নতুন বছরের প্রথম দিন থেকেই ভাড়া বাড়ছে রেলে। তবে আমজনতার কথা মাথায় রেখে ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে মূলত দূরপাল্লার ট্রেনে। বাতানুকূল কামরার সব শ্রেণিতেই গড় ভাড়া বাড়ছে কিলোমিটার পিছু ৪ পয়সা হারে। আজ বছরের শেষ সন্ধ্যায় রেল মন্ত্রক জানিয়েছে, আগামিকাল থেকে যাঁরা টিকিট কাটবেন তাঁদের ওই বর্ধিত ভাড়া গুনতে হবে। যাঁরা অগ্রিম টিকিট কেটে রেখেছেন তাঁরা পুরনো ভাড়াতেই যাত্রা করতে পারবেন। শহর ও শহরতলির লোকাল ট্রেনের ভাড়া এবং মান্থলি টিকিটের দাম একই থাকছে।

কয়েক দিন ধরেই ভাড়া বাড়ানোর ব্যাপারে ইঙ্গিত দিচ্ছিল রেল মন্ত্রক। অর্থনীতি ঝিমিয়ে পড়ার পর থেকে রেলের পণ্য পরিবহণে ভাটার টান। মূলত ওই খাতের আয় থেকে দেওয়া ভর্তুকিই এত দিন যাত্রী-ভাড়ায় হাত পড়তে দেয়নি। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, বর্তমানে পণ্য ও যাত্রী-ভাড়া বাবদ আয় কমতে থাকা এবং সপ্তম বেতন কমিশনের চাপেই ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিতে হল। আজ প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় সবুজ সঙ্কেত দিতেই ভাড়া বৃদ্ধির কথা ঘোষণা করে রেল। তবে মন্ত্রকের দাবি, ভাড়া সামান্যই বেড়েছে। সর্ব্বোচ্চ ভাড়া বাড়ানো হয়েছে এসি শ্রেণিতে। প্রতি কিলোমিটারে ৪ পয়সা। অর্থাৎ দিল্লি-কলকাতা রাজধানী বা পূর্বা এক্সপ্রেসের মতো ট্রেনগুলিতে এসি শ্রেণি-পিছু ৬০-৬৫ টাকার মতো ভাড়া বাড়ছে। রেলের দাবি, এতে যাত্রীদের পকেটে টান পড়ার কথা নয়। স্লিপার শ্রেণিতে ভাড়া বৃদ্ধি হয়েছে প্রতি কিলোমিটারে ২ পয়সা। প্যাসেঞ্জার ট্রেনগুলিতে ভাড়া বাড়ছে কিলোমিটার প্রতি ১ পয়সা। লোকাল ট্রেনের ভাড়া অপরিবর্তিত।

আরও পড়ুন: ‘আমি ভারতীয় কি না, তার প্রমাণ কাউকে দিতে যাব কেন?’

ক্ষমতায় এসেই ২০১৪-১৫ সালে এক বার ট্রেনের ভাড়া বাড়িয়েছিল মোদী সরকার। এখন রেলের অপারেটিং রেশিয়ো প্রায় একশো ছুঁইছুঁই। অর্থাৎ একশো টাকা আয় করতে প্রায় একশো টাকাই খরচ হচ্ছে। সেখানে ভাড়া বাড়ানো ছাড়া রাস্তা ছিল না বলেই মনে করা হচ্ছে। ভর্তুকিজনিত সমস্যা এ বার মিটবে কি? শীর্ষ রেলকর্তারা অবশ্য আশাবাদী নন। তাঁদের কথায়, প্রতি বছর যাত্রী পরিবহণ খাতে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা দিতে হয়। এই সামান্য ভাড়া বৃদ্ধিতে সে সমস্যা দূর হবে না। যেমন, স্লিপারে প্রতি ১ টাকায় ৩৭ পয়সা ভর্তুকি দিয়ে থাকে রেল। এ যাত্রায় তা মাত্র ২ পয়সা কমানো হচ্ছে। অথচ প্রয়োজন ছিল, ওই ভর্তুকি কমিয়ে অন্তত ২৫ পয়সায় নিয়ে আসার। সেই ঝুঁকি নেয়নি মন্ত্রক। এক রেলকর্তার আক্ষেপ, ‘‘ওষুধ প্রয়োগ হল বটে, কিন্তু সঠিক অনুপাতে নয়। রোগ থেকেই যাবে।’’

তা হলে ভাড়াবৃদ্ধির পিছনে যুক্তি কী? সূত্রের খবর, বর্তমানে বাতানুকূল প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে ভর্তুকির পরিমাণ টাকা প্রতি ৭১ পয়সা ও ২৬ পয়সা। কিন্তু ফ্লেক্সি পদ্ধতি চালু হওয়ার ফলে প্রথম শ্রেণি তো বটেই, বাতানুকূল দ্বিতীয় শ্রেণির ভাড়াও এখন ক্ষেত্রবিশেষে সমদূরত্বের বিমানভাড়ার চেয়ে বেশি। ফলে যাত্রী হারাচ্ছে রেল। সেখানে খুব বেশি ভাড়া বাড়ানো মুশকিল। বাতানুকূল তৃতীয় শ্রেণি কিছুটা হলেও টাকা ফেরাচ্ছিল। বেশি ভাড়া বাড়লে, সেখানেও সমস্যা। তাই কম হারে ভাড়া বাড়ানো হল। ভবিষ্যতে বাতানুকূল কামরার সংখ্যা কমিয়ে ভারসাম্য আনার চেষ্টা হবে। রেলের মোট যে যাত্রিসংখ্যা, তার ৬৬ শতাংশই লোকালে যাতায়াত করেন। লোকাল ট্রেন চালাতে বছরে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়। অতীতের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা লালুপ্রসাদ যাদবের জনমোহিনী নীতি মেনে লোকাল ট্রেনে ভাড়া বাড়ানোর ঝুঁকি নিতেও ব্যর্থ মোদী সরকার। তবে রেলের শীর্ষ সূত্র থেকে বলা হয়েছে, আগামী দিনে স্লিপার এবং লোকালের ভাড়া অল্প অল্প করে বাড়িয়ে ভর্তুকি কমিয়ে আনা হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Indian Railways Train Fare
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy