লন্ডন থেকে জোনাথান চার্লস ক্র্যাকনেলের দেওয়া ছবি— ১৯৪৬ সালে গ্রেট ইস্টার্ন হোটেলে নববর্ষ পালন করছেন তাঁর দাদু-দিদা-বাবা-মা।
দুই সহকর্মীর মাঝখানে হোমগার্ডের উর্দি পরে দাঁড়িয়ে জর্জ ওব্রায়েন। ১৯৪৭ সালে দিল্লিতে তোলা ছবি। পুরনো কেল্লায় তখন আশ্রয় নিয়েছেন হাজার খানেক উদ্বাস্তু। ভয় পাচ্ছেন, পাকিস্তান যাওয়ার পথে আক্রান্ত হতে পারেন। ২২ সেপ্টেম্বর গাঁধী তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন। উত্তেজিত জনতার একাংশ গাঁধীর গাড়ির উপর চড়াও হল। জর্জ গাড়ির মাথায় চড়ে হিন্দিতে বললেন, ‘‘করছেন কী? একমাত্র এই মানুষটাই তো আপনাদের বাঁচাতে পারেন! ’’
ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে এমনই সব ছবি আর তার সঙ্গে জুড়ে থাকা আখ্যানে ভরে উঠছে স্মৃতিকথার ঝাঁপি ওরফে ডিজিটাল আর্কাইভ। নাম, ইন্ডিয়ান মেমরি প্রজেক্ট। সেখানেই ব্রিটিশ হোমগার্ড জর্জের কথা লিখেছেন তাঁর নাতি সাইমন ডিগবি। ২০১০ সাল থেকে শুরু হয়ে এখনও পর্যন্ত এমন ১৮৫টি ছবি আর তার কাহিনি জড়ো হয়েছে। পুরনো ফটোগ্রাফ আর ব্যক্তিগত স্মৃতি যে সামাজিক ইতিহাসের অমূল্য আকর, সে কথা অনুরাগী মাত্রেই জানেন। এই আর্কাইভ তাঁদের কাছে সোনার খনি। যেখানে বাবা তরুণকুমার ভাদুড়ি সম্পর্কে লিখছেন জয়া বচ্চন, ভীমসেন জোশীর মেয়ে বলছেন তাঁর মায়ের কথা। শামলু কৃপালনি দুদেজার বাবা আর আর কৃপালনি ছিলেন করাচির ডিজে সিন্ধ কলেজের অঙ্কের শিক্ষক। শামলুর দেওয়া ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ১৯৩৭ সালে শিক্ষকরা মিলে ‘ডাকঘর’ অভিনয় করছেন। সেখানে ঠাকুরদার ভূমিকায় কৃপালনি! মুম্বই থেকে পুরী সঙ্ঘভি লিখছেন, তাঁর পিতামহ দ্বারকাদাস জীবনলাল সঙ্ঘভি আর তাঁর বিখ্যাত ‘উইলসন’ ব্র্যান্ডের পেনের গল্প। পুরী বলছেন, ‘‘ভাবতে গর্ব হয়, আমাদের পরিবারের তৈরি পেনেই অম্বেডকর সংবিধান লিখেছিলেন!’’
কী ভাবে তৈরি হল এমন আশ্চর্য স্মৃতিশালা? পিছনের মানুষটি হলেন মুম্বইয়ের অনুষা যাদব। পেশায় গ্রাফিক ডিজাইনার, ফটোগ্রাফার এবং কিউরেটর। ফোনে বললেন, ‘‘প্রথমে ভেবেছিলাম, ভারতীয় বিয়ের সাংস্কৃতিক ইতিহাস নিয়ে একটা বই লিখব। তার জন্য সংগ্রহ করছিলাম পারিবারিক ছবি। ওই বইটা শেষ পর্যন্ত হয়নি। কিন্তু ছবি যে কী মণিমাণিক্যের সন্ধান দিতে পারে, সেটা বুঝেছিলাম।’’ সেখান থেকেই আর্কাইভের ভাবনা। অনুষা বলছেন, ‘‘সোশ্যাল মিডিয়ায় কত ছবিই তো আপলোড হয়! আমার মনে হয়েছিল, ছবির স্মৃতিকে জড়ো করা জরুরি!’’ যে কেউই ছবি পাঠাতে পারেন। শুধু ভারতের কাহিনি থাকা চাই আর ১৯৯১-এর আগের ছবি হওয়া চাই।
সুধীর গুর্তুর দেওয়া ছবি— পঞ্চাশের দশকে প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর বাবা অর্থনীতির গবেষক দুখহরণ নাথ গুর্তুর সঙ্গে প্রাতর্ভ্রমণে অ্যালবার্ট আইনস্টাইন।
অনুষার তৈরি অ্যালবামে কোনও ছবিতে তাই সরাসরি ঐতিহাসিক ঘটনার অনুষঙ্গ, কোনও ছবি আবার গার্হস্থ্য খুঁটিনাটির দলিল। যেমন, উইলহেলমিনার রান্নার খাতা। সঙ্গে ১৮৬০ সালে বেঙ্গালুরুতে তোলা তাঁর ছবি। খাতাটি মায়ের থেকে পেয়েছিলেন মেয়ে ওফেলিয়া। তিনি আবার কিছু পদ যোগ করে সেটি দিলেন তাঁর মেয়ে মড-কে। মডের মেয়ে আইরিন, তাঁর মেয়ে সিন্থিয়া হয়ে এখন খাতার মালিক জেনি ম্যালিন।
এক-একটি ছবি যেন ছোট গল্প। জেসন স্কট লিলি যেমন জানতেন, তাঁর ঠাকুরদা বার্ট স্কট বড় হয়েছিলেন ভারতে। বার্ট মারা যাওয়ার পরে আলমারিতে চারটে নেগেটিভ মিলল। ডেভেলপ করে দেখা গেল, এক উচ্ছ্বল তরুণীর ছবি। বোঝাই যায়, ক্যামেরার পিছনে প্রেমিকের চোখ। মহিলার নাম লেখা রয়েছে, মার্গারিট মামফোর্ড। ইন্টারনেট খুঁজে সুবিধা হল না। জেসন তাও মাঝে মাঝে অ্যালবামটা ওল্টাতেন। এক দিন দেখলেন, একটা ছবির তলায় লেখা ‘লভডেল’। এই বার ইন্টারনেট জানান দিল, লভডেল হচ্ছে উটি-র লরেন্স মেমোরিয়াল মিলিটারি স্কুল। যোগাযোগ করে প্রাক্তনীদের নাম জোগাড় হল। এক জন জানালেন, মার্গারিটের বোনের সঙ্গে আলাপ আছে। পরের দৃশ্য নিউজিল্যান্ডে। ৯৬ বছরের মার্গারিট ছবিগুলো দেখে জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘বার্টি এসেছে নাকি?’’
(ছবি সৌজন্য, ইন্ডিয়ান মেমরি প্রোজেক্ট)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy