ভোটমুখী ভারতে বুধবার ভোটের বাজেট মোদীর? — ফাইল চিত্র।
২০২৩ সালের বাজেট পেশ বুধবার। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে এটাই শেষ সাধারণ বাজেট। ভোটমুখী ভারতে তাই বুধবারই ২০২৪ সালের দিকে তাকিয়ে বাজেট পেশ করতে চলেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন।
তবে সেটা সরাসরি স্বীকার করতে নারাজ কেন্দ্রীয় সরকার অথবা শাসক বিজেপি। বাজেট অধিবেশন শুরুর দিনে মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতির ভাষণ অথবা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে দেশের কথা উঠে এসেছে। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু সংসদে বলেছেন, ‘‘আজ দেশে একটি স্থায়ী, নির্ভীক সরকার রয়েছে। যা বড় স্বপ্ন পূরণের ক্ষেত্রে সহায়ক।’’ তাঁর ভাষণে ঘুরেফিরে এসেছে ৩৭০ অনুচ্ছেদ তুলে দেওয়া থেকে শুরু করে তিন তালাক। তিনি বলেন, ‘‘আমার সরকার বড় সিদ্ধান্ত নিতে অকারণ কালক্ষেপ করেনি।’’ আর মোদী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘বাজেটের মধ্যে দিয়ে সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার দিকে নজর দেওয়ার প্রচেষ্টা চলবে। গোটা বিশ্ব এতে আশার আলো দেখছে। আমার স্থির বিশ্বাস, নির্মলা সীতারামন সেই আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের ক্ষেত্রে সমস্ত রকম প্রচেষ্টা করবেন। গোটা বিশ্বের নজর আজ আমাদের উপর।’’
মোদী সাধারণ মানুষ বলে ভোটারদের কথাই বলতে চেয়েছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। কারণ, এটাও মনে করা হচ্ছে যে, বড় ভোটের আগে শেষ বাজেটে দেশবাসীকে খুশি করতে চাইবে কেন্দ্র। সেই মতোই বাজেটে বিভিন্ন প্রস্তাব শোনাতে পারেন নির্মলা। কী কী বিষয়ে বাজেটে জোর দেওয়া হতে পারে তা নিয়েও নানা মত শোনা যাচ্ছে। তবে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে পাঁচটি বিষয়।
১। আয়কর কাঠামো: কেন্দ্রীয় সরকার তো বটেই অর্থমন্ত্রীও বার বার বলেছেন, দেশের মধ্যবিত্তের উপরে করের চাপ বেড়েছে। সেই চাপ কি এ বার কিছুটা হলেও নির্মলা লাঘব করবেন? এমন প্রশ্ন তৈরি হয়েছে আরও একটা কারণে। গত কয়েক বছর দেশে আয়কর কাঠামোয় কোনও বদল আসেনি। উচ্চবিত্তের আয়ের উপরে অতিরিক্ত সেস বা সারচার্জ বসিয়ে মধ্যবিত্তকে কিছুটা সুবিধা দিতে পারেন নির্মলা। জীবনবিমা-সহ বিভিন্ন বিনিয়োগে (৮০সি) ছাড়ের মাত্রা বাড়িয়ে ২ লাখ টাকা করা হতে পারে। এর ফলে আয়কর বাঁচানোর পাশাপাশি মধ্যবিত্তের সঞ্চয়ের সুযোগও বাড়তে পারে। গৃহঋণের ক্ষেত্রেও আর্থিক সুবিধা বাড়ানো হতে পারে।
২। সোনায় আমদানি শুল্ক: গত কয়েক বছর ধরেই সোনার দাম ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। তবে ভারতে সোনার চাহিদা সে ভাবে কমেনি। আর সোনা থেকে আয় বাড়াতে ২০২২ সালের জুলাই মাসেই সোনার উপরে ৪.২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক বেড়েছে। আগে ছিল ১৪.০৭ শতাংশ। যা এখন ১৮.৪৫ শতাংশ হয়েছে। করোনাকালের পরে দেশের বেহাল আর্থিক অবস্থা সামাল দিতেই তা করতে হয়। তবে অনেকে মনে করেন, এত বেশি হারে আমদানি শুল্ক থাকায় দেশে চোরাপথে সোনা আসা বেড়েছে। আদতে সরকারকে ঠকতেই হচ্ছে। এই কারণে স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা চান, সোনার উপরে আমদানি শুল্ক কিছুটা হলেও কমানো হোক। তাতে সাধারণ ক্রেতারাও সুবিধা পাবেন। কিছুটা হলেও হাতের নাগালে আসবে সোনা।
৩। সীমান্ত সুরক্ষা: ভারতের বাজেটে বরাবরই প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ অগ্রাধিকার পেয়েছে। এখন সেটা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। চিন সীমান্ত নিয়ে লাগাতার উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে শুধু প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধিই নয়, সীমান্তের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির জন্যও আরও কিছু পদক্ষেপের প্রস্তাব দিতে পারেন নির্মলা।
৪। কেন্দ্রীয় প্রকল্প: এই মুহূর্তে সবার জন্য বাড়ি থেকে শৌচালয়, পানীয় জল ইত্যাদির নানা প্রকল্প চালাচ্ছে কেন্দ্র। অনেকগুলিই রাজ্য সরকারের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে। তবে এ বার সরাসরি উপভোক্তার কাছে সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার মতো কোনও নতুন প্রকল্পের কথা বলতে পারেন নির্মলা। ভোটের আগে শেষ বাজেটে সেই ঘোষণা বড় তাস হয়ে উঠতে পারে মোদী সরকারের। তবে সরকারের যে আর্থিক পরিস্থিতি, তাতে তেমন কোনও প্রকল্পের বাস্তবায়ন কী ভাবে হবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
৫। শিল্প-বাণিজ্য: গত কয়েক বছরে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধি হয়েছে অতীতের তুলনায় অনেকটাই বেশি গতিতে। মোদী জমানায়, মানে ২০১৪ থেকে ২০২১, এই সাত বছরে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধি হয়েছে ৪০ শতাংশ, যা চিনের পরেই (৫৩%) দুনিয়ায় দ্বিতীয় স্থানে। আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডারের মতে, ২০২৭ সালে ভারতের মোট জাতীয় উৎপাদন হতে চলেছে পাঁচ ট্রিলিয়ন ডলার, বিশ্বে পঞ্চম বৃহত্তম। করোনা পরিস্থিতির জন্য উন্নতি অনেকটা ব্যাহত হলেও সঠিক সময়ে লক্ষ্যে পৌঁছনোর কথাই বলছে বিজেপি। সেই দিকে তাকিয়ে বিশ্ব বাজার ধরার লক্ষ্য থাকতে পারে এই বাজেটে। বাজারে চিনের জায়গা নেওয়ার জন্য বড় শিল্প থেকে স্টার্টআপকে নতুন সুবিধা দেওয়ার ঘোষণা করতে পারেন নির্মলা। তবে সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়ার সম্ভাবনা শিল্প পরিকাঠামো উন্নয়নে। পরিবেশ রক্ষার বার্তা দিয়ে পরিবেশবান্ধব গাড়ির উৎপাদক এবং ক্রেতাদের বাড়তি সুবিধাও ঘোষণা করতে পারেন নির্মলা।
চলতি বছরে জি২০ নেতৃত্বের দায়িত্ব পেয়েছে ভারত। সেটা মাথায় রেখে বাজেট বক্তৃতাতেও বার্তা থাকবে নির্মলার। বিজেপি জি২০-র দায়িত্ব পাওয়ার বিষয়টিকেও মোদী সরকারের সাফল্য হিসাবে রাজনৈতিক হাতিয়ার বানাতে চায়। ভোটের দিকে তাকিয়ে সেই বিষয়ে যেমন উত্থাপন হবে বুধবার, তেমনই ভোটারদের খুশি করার জন্য অন্য কী কী প্রস্তাব আসতে পারে তার দিকেই তাকিয়ে দেশ। যদিও প্রকাশ্যে তা মানতে নারাজ কেন্দ্র বা বিজেপি। মঙ্গলবারই কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরী বলেছেন, ‘‘ভোট আসবে যাবে। আমাদের বাজেট হবে সাধারণ মানুষের উন্নয়নের দিকে তাকিয়ে, ভোটের জন্য নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy