এক দিকে ইসলামাবাদ, অন্য দিকে বেজিং। একই সঙ্গে বৈরিতার একাধিক দরজা খোলা রাখাটা বিপজ্জনক বলে মনে করছে মোদী সরকার। তাই, ব্রিকস সম্মেলনে হাত পোড়ানোর পর চিনের সঙ্গে তিক্ততা কমানোর চেষ্টা শুরু করছে নয়াদিল্লি। একই সঙ্গে বেজিংয়ের উপরে চাপও বজায় রাখা হচ্ছে। তবে কিছুটা নিয়ন্ত্রিত মাত্রায়।
চলতি সপ্তাহেই হায়দরাবাদে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল বৈঠকে বসতে চলেছেন চিনের নিরাপত্তা উপদেষ্টা ইয়াং চিয়েছি-র সঙ্গে। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, এই ‘ঘরোয়া’ বৈঠকটির মাধ্যমে কৌশলগত ক্ষেত্রে দু’দেশের মতপার্থক্য কমানোর চেষ্টা চালাবে নয়াদিল্লি। খোলামেলা আলোচনায় তোলা হবে ‘পাকিস্তান ফ্যাক্টর’ ও মাসুদ আজহার প্রসঙ্গও। বিদেশ মন্ত্রক জানাচ্ছে, ভারতের কিছু পদক্ষেপ নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে চিনও। ফলে এই বৈঠকে তাদেরও আগ্রহ রয়েছে। ইয়াং চিয়েছি ওই বৈঠকে পরিস্থিতির গুরুত্ব মাপার একটা সুযোগ পেয়ে যাবেন।
মাসুদ আজহারকে রাষ্ট্রপুঞ্জের জঙ্গি তালিকায় রাখা বা পরমাণু সরবরাহকারী গোষ্ঠী (এনএসজি)-তে ভারতকে নেওয়ার প্রশ্নে বেজিং কার্যত ‘চিনের প্রাচীর’ হয়ে রয়েছে। বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তা জানাচ্ছেন, মাসুদ আজহারকে কেন রাষ্ট্রপুঞ্জের জঙ্গি-তালিকায় রাখা প্রয়োজন, তা নিয়ে চিনা নেতৃত্বের সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলবে নয়াদিল্লি। চিনের বক্তব্য, মাসুদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে হলে আরও তথ্য দরকার। তাই উরি কাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে সীমান্তপারের সন্ত্রাস সম্পর্কে হালে যে সব তথ্য ভারত পেয়েছে তা-ও দেওয়া হবে চিয়েছি-কে। বিদেশ মন্ত্রকের কর্তাটির কথায়, ‘‘এটা ঘটনা যে, বেজিং-ইসলামাবাদ গভীর সখ্য রাতারাতি দুর্বল হওয়ার নয়। কিন্তু সন্ত্রাসের প্রশ্নে পাকিস্তানকে একঘরে করে রাখতে ক্রমাগত দৌত্য চালিয়ে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনও উপায়ও নেই।’’ বিদেশ মন্ত্রকের কর্তাটি এ-ও মনে করিয়ে দেন, ভিয়েনায় এনএসজি-র সম্মেলন হবে চলতি বছরের শেষে। তার আগে চিনের সঙ্গে সম্পর্ক সহজ করাটাও ভারতের অগ্রাধিকারের মধ্যে পড়ে।
তবে কৌশলে বেজিংয়ের উপরে নিয়ন্ত্রিত চাপও রেখে যেতে চাইছে দিল্লি। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে হায়দরাবাদে ডোভাল চিনের নিরাপত্তা উপদেষ্টা চিয়েছি-র সঙ্গে ঘরোয়া বৈঠক করলেও প্রায় একই সময়ে নয়াদিল্লির শীর্ষ নেতৃত্ব বৈঠক করবেন ভিয়েতনামের ডেপুটি পাবলিক সিকিউরিটি মন্ত্রী বুই ভান থান-এর সঙ্গে। দক্ষিণ চিন সাগর নিয়ে বিতর্কের পরে চিন-ভিয়েতনাম সম্পর্ক এখন আরও খারাপ। ফলে ভিয়েতনামের সঙ্গে সমুদ্র নিরাপত্তা সংক্রান্ত বৈঠক করে নয়াদিল্লি প্রকারান্তরে বেজিংকে কিছুটা চাপে রাখতে চাইছে।
চিনকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য ফিলিপিন্স, জাপান, ভিয়েতনাম, অস্ট্রেলিয়া, সর্বোপরি আমেরিকার মতো দেশের সঙ্গে অক্ষ তৈরির চেষ্টা গত সরকারের আমল থেকেই চলছে। তাতে আরও কিছুটা হাওয়া জুগিয়েছেন মোদী। গত মাসে হ্যানয় সফরে গিয়ে তিনি ভিয়েতনামের সঙ্গে সমুদ্র-মৈত্রীর নিশান উড়িয়ে এসেছেন। নিঃসন্দেহে সেটা চিনের ঘোষিত সমুদ্র-এলাকায় চাপ তৈরিরই একটা কৌশল। সূত্রের খবর, ভিয়েতনামের মন্ত্রীর সঙ্গে আসন্ন বৈঠকে এই এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অংশীদারির বিষয়টিকে জোরদার করা নিয়ে আলোচনা হবে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ৯ নভেম্বর জাপান সফরে যাচ্ছেন দু’দিনের জন্য। ওই সফরে দু’দেশের মধ্যে নৌ-প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে চুক্তি হওয়ার কথা। স্বাভাবিক ভাবেই বেজিংয়ের কাছে এটিও যথেষ্ট অস্বস্তির। বেজিংকে চাপে ফেলছে চিনা পণ্য বয়কটের ডাক, দলাই লামার অরুণাচল সফরে সবুজ সংকেত দেওয়ার মতো বিষয়গুলিও। যা নিয়ে ক্ষোভ গোপন করতে পারছে না বেজিং। এ সব নিয়ে পাল্টা হুমকিও দিচ্ছে তারা।
এই পরিস্থিতিতে ডোভালের সঙ্গে বৈঠকে চিয়েছি-র তরফে জল মাপার একটা চেষ্টা থাকবে বলেই মনে করছে দিল্লি। কারণ কোনও ভাবেই ভারতের বাজার হারাতে চায় না বেজিং।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy