—প্রতীকী ছবি।
সাংবাদিকদের পক্ষে সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশগুলির একটি হল ভারত। ১৮০টি দেশের পরিস্থিতি বিচার করে ‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স’ মঙ্গলবার একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। তাতেই উঠে এসেছে এই উদ্বেগজনক তথ্য। দেখা যাচ্ছে, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রশ্নে ১৮০টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ১৪২ নম্বরে। তালিকায় ব্রাজিল, মেক্সিকো ও রাশিয়ার সঙ্গে ভারতকে রাখা হয়েছে ‘খারাপ’ দেশগুলির গোত্রে। গত বছরের রিপোর্টেও ভারত ছিল ১৪২ নম্বরে। তবে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এ বছরের রিপোর্টে সাংবাদিকদের বিপদের জন্য নরেন্দ্র মোদীর সরকার, তাঁর দল বিজেপি ও হিন্দুত্ববাদীদের সরাসরি দায়ী করা হয়েছে ও কঠোর সমালোচনা করা হয়েছে তাদের ভূমিকার।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিজেপি সমর্থকেরা ও হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি সাংবাদিকদের আতঙ্ক হয়ে উঠেছে। সরকারের সমালোচনা করলেই সাংবাদিকদের জাতীয়তা-বিরোধী বা রাষ্ট্রদ্রোহী বলে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সুনির্দিষ্ট ভাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নাম করে বলা হয়েছে, সংবাদমাধ্যমকে তিনি কড়া মুঠোয় কব্জা করে রেখেছেন। তাঁর আমলে, যে সব ধরনের হামলা, রাজনৈতিক হিংসা ও অতর্কিত আক্রমণ হচ্ছে সাংবাদিকদের উপরে। রাজনৈতিক বা সামাজিক সংগঠন থেকে শুরু করে দুষ্কৃতী দল, প্রশাসনের দুর্নীতিবাজ কর্তারা, কেউই পিছিয়ে নেই এ কাজে। ২০১৯-এ বিপুল ভাবে জিতে মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ‘হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকারের’ সুরে সুর মিলিয়ে চলার জন্য প্রচণ্ড চাপ আসছে সাংবাদিকদের উপরে। হিন্দুত্ববাদীদের অপছন্দের কিছু লেখা হলেই সোশ্যাল মিডিয়ায় সাংবাদিকদের শুধু হেয় করা হচ্ছে না, তীব্র ঘৃণা ও রোষের মুখে পড়তে হচ্ছে তাঁদের।
নিষ্ঠার সঙ্গে নিজের কাজ করতে গিয়ে ২০২০ সালে ভারতে প্রাণ খুইয়েছেন চার জন সাংবাদিক। এই দেশ তাই সাংবাদিকদের পক্ষে সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশগুলির একটি। নতুন তথ্যপ্রযুক্তি বিধির নিন্দা করা হয়েছে বিভিন্ন মহলে। অনলাইন খবরের উপরে এই সরকারি নিয়্ন্ত্রণ আরোপের ফলে ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ভারতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। কোভিড অতিমারিপ কারণ দেখিয়ে সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহ ও প্রকাশ করার ক্ষেত্রে প্রভূত বাধা ও বিরোধিতার শিকার হতে হচ্ছে সাংবাদিকদের। প্রকৃত তথ্য প্রকাশের বদলে একপেশে প্রচার বা প্রপাগান্ডার অংশ হতে তাঁদের বাধ্য করা হচ্ছে।
‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স’-এর রিপোর্টে প্রতিবেশী পাকিস্তান আছে ভারতের তিন ধাপ নীচে, ১৪৫-এ। বাংলাদেশের পরিস্থিতি আর একটু খারাপ, ১৫২। ভারতের চেয়ে ঢের ভাল নেপাল, ১০৬ নম্বর। শ্রীলঙ্কা ১২৭। সর্বশেষ সামরিক অভ্যুত্থানের আগে পর্যন্ত মায়ানমার ছিল ১৪০ নম্বরে। তালিকার এ বারও শীর্ষে আছে নরওয়ে। দুই ও তিন নম্বরে যথাক্রমে ফিনল্যান্ড ও ডেনমার্ক। একেবারে তলানিতে ১৮০ নম্বরে রয়েছে উত্তর-পূর্ব আফ্রিকার লোহিত সাগর ঘেঁষা দেশ এরিট্রিয়া, ১৭৯-তে উত্তর কোরিয়া, ১৭৮-এ তুর্কমেনিস্তান এবং ১৭৭-এ উত্তরের প্রতিবেশী চিন।
‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স’-এর রিপোর্টে সাংবাদিকদের বিশ্বাসযোগ্যতার প্রসঙ্গটিও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। ২৮টি দেশে সমীক্ষা চালিয়ে তারা দেখেছে, ৫৯ শতাংশ মানুষের ধারণা, সাংবাদিকরা ইচ্ছাকৃত ভাবে, মানুষকে বিভ্রান্ত করতে মিথ্যাকে সত্য হিসেবে পরিবেশন করছেন। আবার সাংবাদিকদের যে বহু ক্ষেত্রেই অস্বাভাবিক চাপের মধ্যে থাকতে হয়, সেটাও স্পষ্ট। রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিশ্বের ৭৩ শতাংশ দেশে অবাধ ও স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে গুরুতর সমস্যা রয়েছে। এই সমস্যা বিশেষ প্রবল এশিয়া, পশ্চিম এশিয়া ও ইউরোপে। কোভিড অতিমারির কারণে দেশে-দেশে চাপানো নানা নিয়ন্ত্রণও সাংবাদিকতাকে আরও কঠিন করে তুলেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy