—ফাইল চিত্র।
প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর নির্মাণকার্য চালাতে উদ্যত হয়েছিল চিন। তাতে বাধা দিতে গিয়েছিল ভারতীয় সেনা। তার জেরেই দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে এবং প্রাণহানি ঘটে। লাদাখে চিনাবাহিনীর সঙ্গে ভারতীয় জওয়ানদের সংঘর্ষ নিয়ে গত কয়েক দিনে দু’দেশের মধ্যে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। তা নিয়ে দু’তরফে লাগাতার দোষারোপও চলছে। তার মধ্যেই বিবৃতি প্রকাশ করে এমনটা জানিয়ে দিল ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক।
১৯৬২ সালের পর থেকে চিনের মানচিত্রে গলওয়ানের কোনও উল্লেখই ছিল না। কিন্তু শুক্রবার ওই এলাকাকে নিজেদের ভূখণ্ডের অংশ বলে দাবি করেন চিনা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান। শুক্রবার বিরোধীদের নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার কিছু ক্ষণ পরেই একটি বিবৃতি প্রকাশ করেন ঝাও, যা ভারতে চিনা দূতাবাসের ওয়েবসাইটেও পোস্ট করা হয়।
ওই বিবৃতিতে ঝাও বলেন, ‘‘ইন্দো-চিন সীমান্তের পশ্চিম দিকে অবস্থিত গলওয়ান উপত্যকা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার সেই অংশে অবস্থিত, যা কিনা চিনের মধ্যে পড়ে। বিগত কয়েক বছর ধরেই সেখানে টহলদারি চালাচ্ছিল চিনা বাহিনী। কিন্তু এ বছর এপ্রিল থেকে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীবাহিনী সেখানে একতরফা ভাবে রাস্তা, সেতু এবং অন্যান্য নির্মাণকার্য শুরু করে। একাধিক বার তা নিয়ে প্রতিবাদ জানালেও প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা টপকে ভারতীয় বাহিনী উস্কানি দিয়ে যাচ্ছিল।’’
Since early May 2020, Chinese have been hindering India's normal patrolling pattern in the area. This resulted in face-off which was addressed by ground commanders. We don't accept the contention that India was unilaterally changing status quo, we were maintaining it: MEA pic.twitter.com/MMMUI4xkOo
— ANI (@ANI) June 20, 2020
বিদেশমন্ত্রকের বিবৃতি।
গতকাল ঝাওয়ের এই মন্তব্য নিয়ে ভারতের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। কিন্তু এ দিন বিদেশ মন্ত্রকের তরফে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে বলা হয়, ‘‘গলওয়ান উপত্যকা নিয়ে চিনের অবস্থান ঐতিহাসিক ভাবে সকলের কাছেই স্পষ্ট। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা নিয়ে তারা যে দাবি করছে, তা কোনও ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং অতীতে তাদের যে অবস্থান ছিল, তার সঙ্গেও এই দাবি খাপ খায় না।’’
গলওয়ান উপত্যকা-সহ ইন্দো-চিন সীমান্তে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা সম্পর্কে ভাল মতোই ওয়াকিবহাল ভারতীয় সেনা। এখনও পর্যন্ত সেখানে যা যা নির্মাণকার্য হয়েছে, তা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার যে অংশ ভারতের দিকে রয়েছে, সেখানেই হয়েছে বলেও সাফ জানিয়ে দেয় বিদেশ মন্ত্রক। বলা হয়, ‘‘অন্যান্য এলাকার মতো লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা সম্পর্কে অত্যন্ত সতর্ক ভারতীয় সেনা। অক্ষরে অক্ষরে সীমান্ত চুক্তি মেনে চলে তারা। ভারতের তরফে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা পার করা হয়নি। বরং কোনওরকম অশান্তি ছাড়া দীর্ঘ দিন ধরে ওই এলাকা টহল দিয়ে আসছে ভারতীয় সেনা। এখনও পর্যন্ত সেখানে যা যা নির্মাকার্য হয়েছে, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার যে অংশ ভারতের দিকে, সেগুলি সেখানেই হয়েছে।’’
এ বছর মে মাস থেকে চিনা বাহিনীই ওই এলাকায় ভারতের টহলদারিতে বাধা দিচ্ছিল বলেও পাল্টা অভিযোগ করেছে বিদেশ মন্ত্রক। তাদের দাবি, ‘‘২০২০-র মে থেকে ওই এলাকায় ভারতের টহলদারিতে বাধা দিতে শুরু করে চিন। তাতে দু’পক্ষের মধ্যে সঙ্ঘাতের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, যা নিয়ে দু’পক্ষের কমান্ডারদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনাও হয়। তাই ভারত একতরফা ভাবে স্থিতিশীলতা নষ্ট করেছে এই অভিযোগ গ্রহণযোগ্য নয়। বরং আমরাই স্থিতিশীলতা বজায় রেখে আসছিলাম।’’
আরও পড়ুন: চিন ঢোকেনি? মোদীর মন্তব্যে স্তম্ভিত দেশ, ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামল কেন্দ্র
আরও পড়ুন: সেনার মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন রাহুলের, পাল্টা তোপ অমিত শাহের
মে-র মাঝামাঝি চিনা বাহিনী প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা পার করতে উদ্যত হয় বলেও বিদেশ মন্ত্রকের তরফে অভিযোগ করা হয়। বলা হয়, ‘‘মে-র মাঝামাঝি প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে ইন্দো-চিন সীমান্তের পশ্চিম অংশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে চিনা বাহিনী। ভারত তাদের পাল্টা জবাব দেয়। তা নিয়ে সামরিক এবং কূটনৈতিক স্তরে একপ্রস্থ আলোচনা হয়। ৬ জুন দু’পক্ষের সিনিয়র কমান্ডাররা বৈঠকে বসেন। উত্তেজনা প্রশমনে একমত হন। তার পরেও সম্প্রতি প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে গলওয়ান উপত্যকায় নির্মাণকার্য চালানোর চেষ্টা করে চিন। ভারতীয় জওয়ানদের হস্তক্ষেপে তাদের সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। তা নিয়েই গত ১৫ জুন দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে এবং তা থেকে প্রাণহানি ঘটে।’’
সোমবার এই সংঘর্ষের পর গত ১৭ জুন চিনা বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই-র সঙ্গে বৈঠক হয় ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের। সেখানে দু’পক্ষই দায়িত্ব সহকারে পরিস্থিতি সামাল দিতে একমত হন এবং ৬ জুনের বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলি মেনে চলতে রাজি হন বলেও বিদেশ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়। সেই সঙ্গে আরও জানানো হয়, এই মুহূর্তে সামরিক এবং কূটনৈতিক স্তরে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy