আলোচনা চালাচ্ছে দুই দেশ ছবি: পিটিআই
আফগানিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে মতামত আদানপ্রদানের লক্ষ্যে স্থায়ী দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক চ্যানেল চালু করবে ভারত ও রাশিয়া। আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ফোনে কথা হয়। তখনই এই বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে।
তালিবানে তাদের যে ‘অ্যালার্জি’ নেই, সেই ইঙ্গিত ইতিমধ্যেই দিয়েছে রাশিয়া ও চিন। এ দিন মোদী যেমন পুতিনের সঙ্গে আফগানিস্তান নিয়ে কথা বলেন, তেমনই ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সভাপতিত্বে ‘ব্রিকস’ গোষ্ঠীর বৈঠকে যোগ দেয় রাশিয়া ও চিন। আফগানিস্তানের প্রসঙ্গ ওঠে সেই বৈঠকেও। পাশাপাশি, আজ রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার পরিষদের বিশেষ অধিবেশনে আফগানিস্তানের অস্থিরতার সূত্রে লস্কর-ই-তইবা এবং জইশ-ই-মহম্মদের সক্রিয়তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত।
মোদী আজ টুইটারে লেখেন, ‘‘আমার বন্ধু প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে আফগানিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে সবিস্তার আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়াও কথা হয়েছে কোভিডের মোকাবিলায় পারস্পরিক সহযোগিতা-সহ অন্যান্য দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে।’’ প্রধানমন্ত্রীর দফতর জানিয়েছে, আফগানিস্তানের ঘটনাপ্রবাহ এবং আঞ্চলিক ও বৃহত্তর বিশ্বে তার প্রভাব নিয়ে মোদী ও পুতিনের কথা হয়। দু’জনেই মনে করছেন, এই বিষয়ে একসঙ্গে এগোনো জরুরি। দু’দেশের সংশ্লিষ্ট সিনিয়র অফিসারদের যোগাযোগ রেখে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাশিয়ার দূতাবাস জানিয়েছে, আফগানিস্তান থেকে ছড়িয়ে পড়া মাদক ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোয় গুরুত্ব দিয়েছেন দুই রাষ্ট্রনেতা। এ বিষয়ে আলোচনার জন্য একটি স্থায়ী দ্বিপাক্ষিক চ্যানেল তৈরি নিয়েও তাঁরা সহমত হয়েছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মুহূর্তে তালিবানের সঙ্গে কোনও প্রকাশ্য আলোচনায় যায়নি ভারত। আফগান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যেটুকু সমন্বয় চলছে, তা উদ্ধারকাজেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু রাশিয়ার মনোভাব অন্য। পুতিন সম্প্রতি বলেছিলেন, তালিবানের ক্ষমতায় ফেরাটা বাস্তব ঘটনা এবং তা নিয়েই আন্তর্জাতিক মহলকে এগোতে হবে। এখানেই দ্বিপাক্ষিক চ্যানেলের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। ওই চ্যানেলের মাধ্যমে আপাতত ঘুরপথে আফগান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আদানপ্রদানের পথ খুলতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।
তালিবানের সরকার গঠিত হলে ভারত তাকে স্বীকৃতি দেবে কি না, চর্চা চলছে সেই বিষয়টি নিয়েও। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, নয়াদিল্লি প্রকাশ্যে তালিবানের কোনও সমালোচনা করেনি। বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সম্প্রতি বলেছিলেন, আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে ভারত অবহিত। কূটনৈতিক মহলের মতে, নয়াদিল্লির তরফে এমনই ইঙ্গিত মিলেছে যে, আফগানিস্তানের নয়া শাসনব্যবস্থায় সমস্ত জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব রাখা হলে, শিশুদের ভবিষ্যৎ ও মহিলাদের অধিকার সুরক্ষিত থাকলে এবং অন্যান্য দেশে সন্ত্রাস পাচারে আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করা না হলে তালিবান প্রশাসনকে মেনে নিতে ভারতের হয়তো সমস্যা থাকবে না।
এ দিন রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার পরিষদে ভারতের দূত ইন্দ্রমণি পাণ্ডে বলেন, ‘‘আশা করব, আফগানিস্তানের পরিস্থিতি তার প্রতিবেশী দেশগুলির সামনে সমস্যা সৃষ্টি করবে না এবং লস্কর-ই-তইবা কিংবা জইশ-ই-মহম্মদের মতো জঙ্গি গোষ্ঠী অন্য দেশকে বিপন্ন করার লক্ষ্যে আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করতে পারবে না।’’ আফগানিস্তানে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার পথ যাতে বন্ধ না করা হয়, সে জন্য ‘সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে’ অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে বলেছেন, এক অনিশ্চিত নিরাপত্তা পরিস্থিতির মধ্যে আফগানিস্তানে মানবতার গভীর সঙ্কট সৃষ্টি হচ্ছে।
এ দিন ব্রিকসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পর্যায়ের ভার্চুয়াল বৈঠকে ছিলেন রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের সচিব নিকোলাই পাত্রুশেভ এবং চিনা কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির বিদেশ সংক্রান্ত কমিশনের প্রধান ইয়াং জিয়েচি। বৈঠকের পরে দিল্লির তরফে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি, বিশেষত আফগানিস্তান, ইরান, পশ্চিম এশিয়া এবং উপসাগরীয় এলাকার সাম্প্রতিক ঘটনাবলি এ দিনের বৈঠকে পর্যালোচনা করা হয়েছে। সীমান্তপারের সন্ত্রাস, লস্কর-জইশের মতো রাষ্ট্রের মদতপ্রাপ্ত জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির কার্যকলাপ নিয়েও সরব হয়েছে ভারত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy