Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
PM Narendra Modi

প্রথম পাঁচ দিনেই পদ্মে ২১০ কোটি! বন্ডে কার কত টাকা? এই প্রশ্নে নীরব বিজেপি-কংগ্রেস-তৃণমূল

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ২০১৯-এর এপ্রিল থেকে ২০২৪-এর জানুয়ারির মধ্যে কারা রাজনৈতিক দলকে কত চাঁদা দিয়েছে, আর কোন দল কবে কত টাকা চাঁদা পেয়েছে, স্টেট ব্যাঙ্কের দেওয়া সেই তথ্য প্রকাশ্যে।

PM Narendra Modi.

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। — ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২৪ ০৭:৩২
Share: Save:

প্রথম ওভার থেকেই ছক্কা!

অন্যদের স্কোরবোর্ডে তখনও রানই ওঠেনি। কংগ্রেস ঠুকঠুক করছে। কিন্তু বিজেপি প্রথম থেকেই ছক্কা হাঁকাতে শুরু করেছিল।

নরেন্দ্র মোদী সরকার নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলিকে চাঁদা দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করার প্রথম পাঁচ দিনেই বিজেপির সিন্দুকে ঢুকেছিল ২১০ কোটি টাকা।

আজ নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী বন্ড নিয়ে নতুন তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, ২০১৮-র মার্চ মাসে নির্বাচনী বন্ড চালু করে মোদী সরকার। যেখানে রাজনৈতিক দলকে কারা কোটি কোটি টাকা চাঁদা দিচ্ছে, তা গোপন রাখার ব্যবস্থা চালু হয়। ৫ থেকে ৯ মার্চ—এই পাঁচ দিনেই বিজেপির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে নির্বাচনী বন্ড মারফত ২১০ কোটি টাকা জমা পড়ে। উল্টো দিকে গোটা মার্চে কংগ্রেসের ভাগ্যে জুটেছিল মাত্র ৫ কোটি টাকা। নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত নতুন তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের মার্চ থেকে ২০২৪-এর জানুয়ারি মাসের মধ্যে বিভিন্ন কর্পোরেট সংস্থা পরিচয় গোপন রেখে নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলিকে মোট ১৬,৫১৮ কোটি টাকা চাঁদা দিয়েছিল। এর প্রায় অর্ধেক, ৮২৫০ কোটি টাকা চাঁদা বিজেপি একাই পেয়েছিল।

কার কাছ থেকে বিজেপি এই কোটি কোটি টাকা চাঁদা পেয়েছিল, তা অবশ্য স্টেট ব্যাঙ্কের তথ্যে ছিল না। এখন দেখা যাচ্ছে, বিজেপি নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া হলফনামাতেও সেই তথ্য জানায়নি। নির্বাচনী বন্ডে কে চাঁদা দিচ্ছে, আইনে সেই তথ্য গোপন রাখার ব্যবস্থা রয়েছে বলে যুক্তি বিজেপির। একই কৌশল নিয়েছিল কংগ্রেস, তৃণমূলও। বিজেপি, কংগ্রেস, তৃণমূলের মতো একাধিক দল নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছে, বন্ডের মাধ্যমে কে তাদের চাঁদা দিয়েছে, সেই তথ্য তাদের কাছে নেই। তথ্যের অধিকার কর্মী অঞ্জলি ভরদ্বাজের যুক্তি, ‘‘রাজনৈতিক দলগুলি কাদের চাঁদায় চলছে, ভোটারদের তা নিয়ে অন্ধকারে রাখা উচিত নয়। স্টেট ব্যাঙ্কের তথ্য, রাজনৈতিক দলগুলির নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া হলফনামা— সবেতেই একটি তথ্য নেই। তা হল, যে সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে সব থেকে বেশি চাঁদা পেয়েছে, তাদের কারা চাঁদা দিয়েছে, সেই নাম জানা যাচ্ছে না।’’

এর আগে স্টেট ব্যাঙ্কের দেওয়া তথ্যে দেখা গিয়েছে, ২০১৯-এর এপ্রিল থেকে ২০২৪-এর জানুয়ারির মধ্যে তৃণমূল প্রায় ১,৬১০ কোটি টাকা চাঁদা পেয়েছিল। নির্বাচন কমিশনের কাছে রাজনৈতিক দলগুলি মুখবন্ধ খামে যে তথ্য দিয়েছিল, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আজ কমিশন সেই তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, তৃণমূল ২০১৮-’১৯-এ ৯৭ কোটি টাকা চাঁদা পেয়েছিল। অর্থাৎ বন্ডের মাধ্যমে সব মিলিয়ে তৃণমূল প্রায় ১,৭১৭ কোটি টাকা চাঁদা পেয়েছে। ২০২১-’২২ সালে বা পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোটে জিতে তৃতীয় বার ক্ষমতায় দখলের পরের বছরে তৃণমূল সব থেকে বেশি টাকা চাঁদা পেয়েছিল। যার অঙ্ক ছিল ৫২৮ কোটি টাকা। তবে কাদের থেকে চাঁদা মিলেছে, তা নির্বাচন কমিশনকে জানায়নি তৃণমূল।

ডিএমকে, এডিএমকে, আপ, এসপি, জেডিএস, এনসিপি, জেডিইউ-এর মতো ১০টি দল অবশ্য স্বেচ্ছায় জানিয়ে দিয়েছে, তারা কার থেকে কত কোটি টাকা চাঁদা পেয়েছে। নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে চাঁদা দেওয়ার নিরিখে শীর্ষে ছিল ফিউচার গেমিং অ্যান্ড হোটেল সার্ভিসেস সংস্থা। স্যান্টিয়াগো মার্টিনের মালিকানাধীন এই সংস্থার মূল ব্যবসা লটারি। স্টেট ব্যাঙ্কের দেওয়া তথ্যে ছিল, এই সংস্থাটি একাই ১৩৬৮ কোটি টাকা বিভিন্ন দলকে চাঁদা দিয়েছিল। নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া তথ্যে তামিলনাড়ুর শাসক দল ডিএমকে জানিয়েছে, তারা মার্টিনের সংস্থা থেকে ৫০০ কোটি টাকার বেশি চাঁদা পেয়েছে। চাঁদা দেওয়ার অঙ্কে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্থানে থাকা মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের থেকেও ডিএমকে চাঁদা পেয়েছে। এডিএমকে জানিয়েছে, তারা মোট সাড়ে ছয় কোটি টাকা চাঁদা পেয়েছে। এর মধ্যে ৫ কোটি টাকা চাঁদা এসেছে চেন্নাই সুপার কিংস-এর থেকে। জেডিএস আবার ইনফোসিস, বায়োকন-এর মতো সংস্থার থেকে চাঁদা পেয়েছে। আপের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-এ তারা সব থেকে বেশি চাঁদা পেয়েছিল বাজাজ গোষ্ঠীর থেকে। অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই অবশ্য কে চাঁদা দিয়েছে, সেই তথ্য জানায়নি। সিপিএম, সিপিআই, সিপিআই (এমএল) জানিয়েছে, তারা বন্ডের মাধ্যমে চাঁদা নেয়নি।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এর আগে ২০১৯-এর এপ্রিল থেকে ২০২৪-এর জানুয়ারির মধ্যে কারা রাজনৈতিক দলকে কত টাকা চাঁদা দিয়েছে, আর কোন রাজনৈতিক দল কবে কত টাকা চাঁদা পেয়েছে, স্টেট ব্যাঙ্কের দেওয়া সেই তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে। কিন্তু নির্বাচনী বন্ডকে চিহ্নিত করার সংখ্যা স্টেট ব্যাঙ্ক প্রকাশ করেনি। ফলে কে কোন দলকে চাঁদা দিয়েছে, তা প্রকাশ্যে আসেনি।

সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, স্টেট ব্যাঙ্কের ওই বন্ড সংখ্যাও প্রকাশ করা উচিত। সোমবার সুপ্রিম কোর্টে এ নিয়ে শুনানি হবে। আজ ‘সিটিজ়েনস ফর রাইটস ট্রাস্ট’ নামে এক সংস্থা সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছে, ২০১৮-এর মার্চ থেকে বন্ড বিক্রি শুরু হয়েছিল। ২০১৮-এর মার্চ ২০১৯-এর এপ্রিলের আগে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার বন্ড বিক্রি হয়েছে। যা মোট বন্ড বিক্রির চার ভাগের এক ভাগ। সেই বন্ড সম্পর্কিত সম্পূর্ণ তথ্য প্রকাশ্যে আসা উচিত।

বিজেপিকে নিশানা করে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের আজ অভিযোগ, মোদী সরকারের নির্বাচনী বন্ড ব্যবস্থায় চারটি কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে এসেছে। এক, চাঁদা নিয়ে কাজের বরাত দেওয়া হয়েছে। দুই, ইডি-সিবিআইয়ের ভয় দেখিয়ে চাঁদার নামে তোলা আদায় করা হয়েছে। তিন, বরাত দিয়ে চাঁদার নামে ঘুষ নেওয়া হয়েছে। চার, ভুয়ো সংস্থা, ভুঁইফোড় সংস্থার মাধ্যমে চাঁদা দেওয়া হয়েছে। যে কারণে প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ এক শিল্পপতির সংস্থার নাম কোথাও নেই।

অন্য বিষয়গুলি:

PM Narendra Modi BJP Electoral Bonds
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy