তিন বছরের মাথায় এ এক নিঃশব্দ পরিবর্তন।
আর্থিক নীতিই হোক আর বিদেশনীতি, সবটাই নিয়ন্ত্রণ করেন নরেন্দ্র মোদী— এমনটাই ধারণা ছিল নর্থ ব্লক, সাউথ ব্লকের। সরকারের তিন বছর পার হওয়ার পরে এ বারে যখন মানুষ ফল পেতে চাইছেন, তখন দেখা যাচ্ছে অন্য ছবি। নিরাপত্তার প্রশ্নে, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিদেশনীতির সাফল্যের খতিয়ানে, এমনকী, নোট বাতিল বা জিএসটির পরিণতি নিয়ে এখন যখন প্রশ্ন উঠছে— তখন মোদীর সাম্প্রতিকতম রণকৌশল হল, দায়িত্ব বিভিন্ন মন্ত্রীর ও মন্ত্রকের উপরে ছেড়ে দেওয়া।
বিদেশ মন্ত্রক সূত্র বলছে, গত তিন বছরে সে ভাবে সুষমা স্বরাজকে কাজে লাগানো হয়নি। বিদেশ মন্ত্রকের এক কূটনীতিকের কথায়, ‘‘প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবর বহু ক্ষেত্রে সুষমার চেয়ে বেশি মর্যাদা পেয়েছেন।’’ প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে এত দিন বিদেশনীতি কার্যত নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল ও বিদেশসচিব এস জয়শঙ্কর। ডোকলাম বিতর্কে অস্বস্তির পরে, রোহিঙ্গা নিয়ে আউঙ সান সু চি এবং শেখ হাসিনার টানপড়েনের মধ্যে, ডোনাল্ড ট্রাম্প, ইরান ও উত্তর কোরিয়া নিয়ে যখন ভারতের শ্যাম রাখি না কুল রাখি পরিস্থিতি— তখন সুষমাকে সামনে এগিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণসভার অধিবেশনে যোগ দিতে সুষমা প্রায় এক সপ্তাহ ধরে আমেরিকায় রয়েছেন। সেখানে একের পর এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করে চলেছেন তিনি।
হাতেকলমে: শৌচাগার নির্মাণে হাত লাগাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। শনিবার বারাণসীর শাহানশাহপুরে। ছবি: পিটিআই।
একই ছবি অর্থ মন্ত্রকেও। মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যনের কথা মেনে অর্থ মন্ত্রকের কাজকর্মের খতিয়ানের বৈঠক নেওয়া পিছিয়ে দিয়েছেন মোদী। ক্ষুব্ধ অরবিন্দকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে যে, এখন থেকে আর্থিক নীতি রূপায়ণে তিনি পূর্ণ স্বাধীনতা পাবেন। পেট্রোল-ডিজেলের দাম বাড়িয়ে আসলে গ্রিন এনার্জির বিকাশে সাহায্য করা হবে— এই সব যুক্তি বোঝানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিকে।
আরও পড়ুন:মোদীর কৃষক-স্বপ্ন ঘিরে প্রশ্নে ক্ষুব্ধ সঙ্ঘ
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহকেও বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে কাশ্মীরে পাঠিয়ে। ‘র’ এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা শাখার প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করার দায়িত্ব তাঁর হাতেই তুলে দিয়েছেন মোদী। এত দিন মন্ত্রকের অনেক কিছুই রাজনাথ জানতে পারতেন না।
মোদীর ঘনিষ্ঠ মহল জানাচ্ছে, সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করলে ভাল কাজের কৃতিত্ব যেমন মেলে, তেমন ব্যর্থতার দায়ও নিতে হয়। তাই কৌশল পাল্টে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকগুলি থেকে মোদী নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চাইছেন। তবে কংগ্রেস নেতা সলমন খুরশিদের সন্দেহ, ‘‘যাঁর অঙ্গুলিহেলন ছাড়া একটি আলপিনও এক টেবিল থেকে অন্য টেবিলে যায় না, সেই চিত্রটি কি বদলে যেতে পারে? নাকি এ-ও এক ধরনের অপটিক্সের রাজনীতি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy