Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
Delhi IAS Coaching Centre

দুর্ঘটনার এক মাস আগেই বিপদ বুঝে পুর-প্রশাসনকে চিঠি লিখেছিলেন আর এক আইএএস পরীক্ষার্থী

ওই কোচিং সেন্টারের বেসমেন্ট শুধুমাত্র পার্কিং এবং গুদামঘর হিসাবে ব্যবহারের অনুমতি ছিল। সেখানেই তৈরি হয়েছিল লাইব্রেরি। বেরোনোর জন্য ছিল একটিমাত্র দরজা। অর্থাৎ কোনও বিপদ হলে সহজে বেরোতেও পারতেন না ভিতরে থাকা ছাত্রেরা।

ছবি: পিটিআই।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২৪ ১১:৫৪
Share: Save:

দিল্লির রাজেন্দ্রনগরের দুর্ঘটনার এক মাস আগেই নাকি সম্ভাব্য বিপদের আশঙ্কায় ওই সেন্টারের কর্তৃপক্ষ, রাজ্য সরকার এবং দিল্লি পৌরসভার কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছিলেন আর এক আইএএস পড়ুয়া! লিখেছিলেন, যে রকম ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে বেসমেন্টকে লাইব্রেরি বা শ্রেণিকক্ষ হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, তাতে যে কোনও সময় প্রতিষ্ঠানের কর্মচারি ও ছাত্রদের প্রাণসংশয় হতে পারে।

এই পড়ুয়ার নাম কিশোর সিংহ কুশওয়াহ। আইএএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। দিল্লির যে প্রতিষ্ঠানে শনিবার দুর্ঘটনাটি হয়েছে, ওই একই প্রতিষ্ঠানের ছাত্র তিনিও। কিশোর জানাচ্ছেন, এক মাস আগে সেন্টারের কর্তৃপক্ষ, রাজ্য সরকার এবং দিল্লি পৌরসভার (এমসিডি) কাছে বেআইনি ভাবে বেসমেন্ট ব্যবহার করার অভিযোগ জানিয়েছিলেন তিনি। কারোল বাগের বিল্ডিং বিভাগের কার্যনির্বাহী ইঞ্জিনিয়ার কুমার মহেন্দ্রকে লেখা ওই চিঠিতে লেখা হয়েছে, ‘‘রাও আইএএস কর্তৃপক্ষ কোনও রকম সরকারি অনুমোদন ছাড়াই বেসমেন্টকে ক্লাসরুম এবং লাইব্রেরি হিসাবে ব্যবহার করছেন। এতে ছাত্র এবং কর্মীদের জীবন বিপন্ন হচ্ছে, কারণ, এ থেকে যে কোনও সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।’’ চিঠিতে কিশোর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও এনেছেন। সেই সঙ্গে নিরাপত্তার নিয়ম লঙ্ঘন করার জন্য কোচিং সেন্টারগুলির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেছেন।

১৫ জুলাই প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষকে উদ্দেশ্য করে একটি চিঠিতে কিশোর লিখেছেন, ‘‘স্যার, এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। দয়া করে কিছু ব্যবস্থা নিন।’’ ২২ জুলাই আরও একটি চিঠি লেখেন কিশোর। সে চিঠির বয়ানও একই রকম। তবে বার বার কড়া নাড়া সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি।

কিশোরের আক্ষেপ, কর্তৃপক্ষ বা প্রশাসনের কর্তারা যদি সময় মতো ব্যবস্থা নিতেন, তা হলে হয়তো বিপদ এড়ানো যেত। বিক্ষুব্ধ ওই ছাত্র সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘রাজেন্দ্রনগরের সমস্ত বেসমেন্ট লাইব্রেরি বেআইনি। এগুলির কোনও সুরক্ষা ছাড়পত্র নেই। বেসমেন্টের সিঁড়িগুলিও মাত্র তিন-চার ফুট চওড়া। অর্থাৎ যদি কোনও বিপদ হয়, তা হলে সহজে বেরোতেও পারবেন না ভিতরে থাকা ছাত্ররা।’’ তিন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর জন্য কর্তৃপক্ষ ওবং প্রশাসনকে দুষেছেন তিনি।

শনিবার দিল্লির রাজেন্দ্রনগরের কোচিং সেন্টারে বেসমেন্টের জমা জলে ডুবে মৃত্যু হয় তিন পড়ুয়ার। তাঁরা আইএএস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। শনিবার সন্ধ্যায় কোচিং সেন্টারের বেসমেন্টে লাইব্রেরিতে গিয়েছিলেন ওই পড়ুয়ারা। সেখানেই আচমকা ঢুকতে শুরু করে বৃষ্টির জল। অনেকে বেরিয়ে গেলেও তিন জন বেরোতে পারেননি। তাঁদের মৃত্যু হয়েছে বেসমেন্টেই। মৃত পড়ুয়ারা হলেন, তানিয়া সোনি (২৫), শ্রেয়া যাদব (২৫) এবং নেভিন দালউইন (২৮)।

শনিবার রাতেই কোচিং সেন্টারের মালিক অভিষেক গুপ্ত এবং কো-অর্ডিনেটর দেশপাল সিংহকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। দিল্লি পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘আমরা নির্দিষ্ট কিছু ধারায় মামলা রুজু করেছি। ফরেন্সিক নমুনা সংগ্রহের প্রক্রিয়া চলছে। গোটা ঘটনার উপযুক্ত তদন্ত হবে।’’ কর্তৃপক্ষের উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে শনিবার রাত থেকে রাজেন্দ্রনগরের কোচিং সেন্টারের পড়ুয়ারা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। বেগতিক দেখে সোমবার আরও ১৩টি কোচিং সেন্টার সিল করার নির্দেশ দিয়েছেন দিল্লি পুরসভার মেয়র শেলী ওবেরয়। নির্দেশে বলা হয়েছে, ‘‘কোচিং সেন্টারগুলি বেআইনি ভাবে বেসমেন্ট ব্যবহার করছিল। এগুলি সিল করে কর্তৃপক্ষকে নোটিস দেওয়া হয়েছে।’’ দিল্লির ওই কোচিং সেন্টারের বেসমেন্ট শুধুমাত্র পার্কিং লট এবং গুদামঘর হিসাবে ব্যবহারের অনুমতি ছিল। সেখানেই তৈরি হয়েছিল লাইব্রেরি। এমনকি, একটি ঘরে ক্লাসও নেওয়া হত। বেসমেন্ট থেকে বেরোনোর জন্য ছিল একটিমাত্র দরজা, যা নিয়মবিরুদ্ধ।

অন্য বিষয়গুলি:

Delhi IAS
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE