টয় ট্রেন। —ফাইল চিত্র।
দার্জিলিং পাহাড়ের সেই চিরকালীন রেলসফরের পথ। টয়ট্রেনের জানলায় ‘আরাধনার’ শর্মিলা ঠাকুরকে দেখতে দেখতে শোনা যাচ্ছে ‘মেরে সপনো কি রানি’র খোঁজের আর্তি। অপরূপ পাহাড়ি নিসর্গের মাঝে কু-ঝিকঝিক রেলগাড়িটিও যেন এক চলমান স্বপ্নসৌধ। সব কিছুই আগের মতো থাকতে পারে! শুধু রেলগাড়ির ধোঁয়া দূষণ থেকে মুক্তি। এ দেশের ঐতিহ্যশালী রেলপথে স্টিম বা ডিজ়েল ইঞ্জিনের বদলে এ বার হাইড্রোজেন চালিত ট্রেনের সূচনা ঘটছে।
চলতি বছরের শেষেই হয়তো রেল-সফরের এই নতুন অধ্যায়ের শুরু হবে। ডিসেম্বরে জার্মানির একটি বিশেষজ্ঞ সংস্থা হাইড্রোজেন চালিত ট্রেনের প্রযুক্তিগত নানা দিক এবং সুরক্ষা বৈশিষ্ট্যের কার্যকারিতা খতিয়ে দেখবে। সব ঠিক থাকলে সারা দেশের বিভিন্ন হেরিটেজ রুটে পর্যায়ক্রমে ওই ট্রেন চালানো হবে। দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়েও সেই তালিকায় রয়েছে। হিমাচলের সিমলা বা কাংড়া উপত্যকা, মহারাষ্ট্রের মাথেরন বা দক্ষিণের নীলগিরি পাহাড়েও থাকছে এ স্বপ্ন-সফরের হাতছানি।
রেল সূত্রে খবর, বিভিন্ন হেরিটেজ রুটগুলিতে যেখানে মূলত টয়ট্রেন চলে, ওই সব জায়গায় পরিবেশবন্ধু ব্যবস্থা হিসেবে হাইড্রোজেন চালিত ট্রেন চালানোর উপর জোর দিচ্ছে রেল। প্রথম ধাপে ৩৫টি ট্রেন তৈরি করার কথা। ২০৪৭ সালের মধ্যে নয়া প্রযুক্তিতে সারা দেশে ৫০টি ট্রেন চালাতে চায় রেল। পরিকল্পনা সফল হলে জার্মানি, ফ্রান্স, সুইডেন এবং চিনের পরে পঞ্চম দেশ হিসেবে ভারত এ গৌরব অর্জন করবে।
ফুয়েল সেল প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভারতে ওই প্রযুক্তির রেল ইঞ্জিন তৈরি করা হচ্ছে। এক-একটি ট্রেনের নির্মাণের জন্য ৮০ কোটি টাকা খরচ হবে। চলার পথে আচমকা এ ট্রেন বিগড়ে গেলে তা মেরামতির জন্য পাঁচটি টাওয়ার ভ্যান তৈরি করা হচ্ছে। প্রত্যেকটি ভ্যান নির্মাণে ১০ কোটি টাকা করে খরচ হবে। এ ছাড়াও রুট পিছু, বিভিন্ন পরিকাঠামো নির্মাণের জন্য আরও ৭০ কোটি টাকা খরচ ধরা হয়েছে। তার মধ্যে ট্রেনে জ্বালানি ভরার ব্যবস্থা, নির্দিষ্ট জায়গায় জ্বালানি সঞ্চয়ের পরিকাঠামো গড়ে তোলার কাজ রয়েছে।
ভারতে গ্রিন হাইড্রোজেন মিশন প্রকল্পের অধীনে বেসরকারি সংস্থার সাহায্য নিয়ে বাতাসের জলীয় বাষ্প থেকে হাইড্রোজেন গ্যাস তৈরির পরিকাঠামো বিভিন্ন জায়গায় গড়ে তোলা হচ্ছে। রেলের পরিকল্পনার আওতায় ৩৫টি হাইড্রোজেন চালিত ট্রেন তৈরির পাশাপাশি একটি ডিজেল ইঞ্জিনে বদল এনে (রেট্রো ফিটিং) তা হাইড্রোজেন চালিত করার কাজও চলছে। হায়দরাবাদের একটি বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে চেন্নাইয়ের ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরিতে ওই বদলের কাজ করা হচ্ছে।
হরিয়ানায় ঝিন্দ এবং সোনিপতের মধ্যে একটি রেলপথে ওই ট্রেন চালানো হবে। নিত্য হাইড্রোজেনের জোগান দিতে ঝিন্দে একটি জ্বালানি উৎপাদন কেন্দ্রও তৈরি করা হচ্ছে। তাতে দৈনিক ৪৩২ কেজি গ্যাস তৈরি এবং ৩০০০ কেজি গ্যাস সঞ্চয় করা যাবে। বাতাসের জলীয় বাষ্পের তড়িৎ বিশ্লেষণ করে হাইড্রোজেন গ্যাস তৈরি করা হবে। উত্তর রেলের নজরদারিতে প্রকল্পের কাজ চলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy