—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
কেউ অখ্যাত গ্রাম্য বধূ, আশাকর্মী। কেউ বা অ্যাম্বুল্যান্স চালক। দানার সঙ্গে যুদ্ধে প্রান্তিক ওড়িশার এমন নানা চরিত্রই এখন বীরের তকমা পাচ্ছেন। ওঁরা কেউ বিপন্ন শারীরিক প্রতিবন্ধীদের কয়েক কিলোমিটার দূরে ত্রাণ শিবিরে নিয়ে যাচ্ছেন, কেউ বা আসন্নপ্রসবাকে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পৌঁছে দিচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাঝি বা উপমুখ্যমন্ত্রী প্রভাতী পরিদা তাঁদের ছবি, ভিডিয়ো এক্স হ্যান্ডলে মেলে ধরেছেন।
ভিতরকণিকার ন্যাশনাল পার্ক লাগোয়া ডাঙামাল অঞ্চলে ত্রিলোচনপুর গ্রামের সবিতা বেহেরার ভিডিয়োও হাতে হাতে ঘুরছে। সবাই মুখর, ঝোড়ো হাওয়া মাথায় মেয়েটা গ্রামের আঁতিপাতি ঘুরে অশক্তদের বাঁচাতে হন্যে হয়ে উঠেছিল।
১৯৯৯ সালের সুপার সাইক্লোনের সময়ে সবিতা মোটে কয়েক দিনের। মায়ের কাছে শুনেছেন, তাঁদের সাতভায়া গ্রামে আঁতুড় থেকে তাঁকে নিয়ে মা বেরোনোর পরে পুজো করার পণ্ডিত ব্রাহ্মণ পাওয়া যাচ্ছিল না। সে আর কী-ই এমন! কিন্তু মা বলেন, খাবার, জল জোটানোই দুষ্কর ছিল দিনের পর দিন। ভয়ানক নোনতা গিরিয়া শাক মুখে দিয়ে বেঁচে ছিলেন সকলে। এখন সেই মেয়েই তাঁদের গ্রামে যেন প্রতিরোধের মুখ। নানা জনের হাতে ছড়ানো ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, কোথা থেকে পাওয়া একটা সাইকেল ঠেলে সবিতা ও তাঁর স্বামী সরোজকুমার পাত্র এক জন অশক্ত প্রতিবন্ধী মহিলাকে তাতে বসিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। অনিতা শেঠি নামের মহিলার দুটো পা-ই যে অকেজো! ঝোড়ো হাওয়া আর বৃষ্টির মধ্যে সবিতারা চলেছেন বুক চিতিয়ে।
স্থানীয় নেচার্স ক্লাব সংস্থার ‘ক্লাইমেট চ্যাম্পিয়ন’ তকমাপ্রাপ্ত সবিতা ফোনে ওড়িয়া, বাংলা মিশিয়ে বলছিলেন, “এমন নয় যে আমি ভয় পাই না। মহাবাত্যার এমন ভয়ঙ্কর রূপ আগে দেখি নাই। কিন্তু কিছু সময়ে সাহসী না-হয়ে উপায় থাকে না!”
দানার ‘ল্যান্ডফল’ বা প্রথম ধাক্কার সুবাদে বিশেষ ভাবে পরিচিত ভিতরকণিকার হাবালিখাটি নেচার ক্যাম্প থেকে ১০ কিলোমিটার দূরেই সবিতাদের গ্রাম। রাজনগর ব্লকের ডাঙামাল অঞ্চলের বাঙালি প্রধান এ গ্রামে দু’এক ঘর ওড়িয়া থাকেন। মহাবাত্যায় ত্রিলোচনপুর গ্রামে তাঁদের মাটির ঘরের চাল ভেঙে দেওয়াল ধসে গিয়েছে। দুর্যোগ শেষে জোড়াতালি দিয়ে সেখানেই সংসার পাতেন অপরাজিতা নারী।
১৪ বছরে বিয়ে হয়ে মাত্র ২৫ বছরেই ১১ এবং ৬ বছরের দুই পুত্রের মা সবিতা। তবে বিয়ের পরে ১২ ক্লাস পাশ করেছেন। কম্পিউটার শিখেছেন। বরের শরীর খুব ভাল থাকে না। তাই কাজের ঠিক নেই। সবিতাও অন্যের খেতে খাটেন। আর নেচার্স ক্লাবের হয়ে পরিবেশ সচেতনতার কাজ করেন। শ্রী পদ্ধতিতে চাষের মতো জীবন-জীবিকার নানা উদ্যোগেও শরিক। পারিবারিক আয় মেরেকেটে
১০ হাজার টাকা।
দানার মাটি ছোঁয়ার এলাকার গ্রামটিতে বিপদের সময়ে বেশির ভাগ লোকই বাসুদেব বারিক এবং মন্মথ মণ্ডলের পাকাবাড়িতে আশ্রয় নেন। ডাঙামালের পঞ্চায়েত সদর অবধি পৌঁছতে পারেননি। ঝড়ের শোঁ শোঁ-তে বিনিদ্র রাত যাপনের পরে গ্রামে চাষবাসের ক্ষতিতে সকলে বিমূঢ়। সবিতার মতে, ‘‘ফণীতেও এত ক্ষতি হয়নি।’’
১৯৭১, ১৯৯৯-এ ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত সবিতাদের সাতভায়া গ্রামের বাসিন্দাদের কেন্দ্রাপড়ার রাজনগরে বাগপাতিয়া অঞ্চলে পুনর্বাসন দেওয়া হয়। এ বার তা-ও ফসলের ক্ষতি, গরু, মোষের মৃত্যুতে ছারখার। ওড়িশা সরকারের হিসাব, ৮০-৮৫ হাজার হেক্টর চাষ জমি বিধ্বস্ত। ভিতরকণিকার বন্যপ্রাণ, ম্যানগ্রোভের ক্ষয়ক্ষতি এখনও পরিষ্কার নয়। ডিএফও সুদর্শন গোপীবাগ যাদব বলেন, “জলের জন্য সব জায়গায় পৌঁছনো সম্ভব হচ্ছে না।” মঙ্গলবার পর্যন্ত ভিতরকণিকা ন্যাশনাল পার্ক বন্ধ রাখার কথা জানান তিনি। ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী এ দিন ঝড়-জলে ধ্বস্ত ধামরা, ভদ্রকের অবস্থা দেখতে যান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy