হিমাচল প্রদেশের পরিস্থিতি। ছবি: পিটিআই।
রবিবার রাত থেকে হিমালয়ের পাদদেশে চলছে মেঘভাঙা বৃষ্টি এবং ধস। অতি ভারী বৃষ্টির ভয়াবহতা ধরা পড়েছে হিমাচল প্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ডের বিক্ষিপ্ত এলাকায়। একের পর এক ঘরবাড়ি তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ছে। ভেসে গিয়েছে বহু গ্রামও। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত হিমাচল প্রদেশে মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৭১-এ। সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও প্রচুর। ২৪ জুন পর্যন্ত হিমাচল প্রদেশে ৭২০০ কোটি টাকার সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছিল। বর্তমানে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে বলে প্রশাসনের দাবি। মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিংহ সুখু জানিয়েছেন, ক্ষয়ক্ষতি যা হয়েছে, তা মেরামত করতে এক বছরেরও বেশি সময় লেগে যাবে।
বিগত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে হিমাচল প্রদেশের শিমলা, কাংড়া এবং মান্ডি জেলার বিভিন্ন এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত। এমনকি, বদ্রীনাথ, কেদারনাথ যাওয়ার রাস্তাও ধসের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সূত্রে খবর, হিমাচল প্রদেশের বহু জায়গায় পর্যটক এবং স্থানীয়েরা আটকে রয়েছেন। উদ্ধারকাজ চালিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। হিমাচল প্রদেশ থেকে এখনও পর্যন্ত ৯৬০ জনকে উদ্ধার করে সুরক্ষিত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। উত্তরাখণ্ড এবং পঞ্জাব থেকে দশ হাজারের বেশি মানুষকে উদ্ধার করেছেন রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যেরা। রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর মোট ২৯টি দলকে মোতায়েন করা হয়েছে, যার মধ্যে ১৪টি দল ইতিমধ্যেই উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছে। আপৎকালীন পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে বাকি ১৫টি দলও ঘটনাস্থলে উপস্থিত রয়েছে। রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর পাশাপাশি পুলিশ, সেনাবাহিনী, বায়ুসেনা এবং স্থানীয় প্রশাসনও সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে। হেলিকপ্টার এবং মোটর বোটের মাধ্যমেও উদ্ধারকাজ চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হিমাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর।
পিটিআই সূত্রে খবর, হিমাচল প্রদেশে যা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা মেরামত করতে প্রায় এক বছর সময় লাগবে বলে দাবি করেছেন সুখবিন্দর। তিনি বলেন, ‘‘এ যেন পর্বতসমান চ্যালেঞ্জ। রাস্তা মেরামত করা, জল প্রকল্পগুলি আবার নতুন করে শুরু করা— প্রায় ১০,০০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। সব ঠিকঠাক করতে এক বছর সময় তো লাগবেই।’’
হিমাচল প্রদেশের সামার হিল, ফাগলি এবং কৃষ্ণ নগর এলাকায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। শিমলার ডেপুটি কমিশনার আদিত্য নেগি জানিয়েছেন, সামার হিল থেকে ১৩টি, ফাগলি থেকে পাঁচটি এবং কৃষ্ণ নগর থেকে একটি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার সামার হিল এলাকায় যে শিবমন্দির ভেঙে পড়েছিল, তার তলায় এখনও অনেকে আটকে রয়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। উদ্ধারকাজ যে জোরকদমে চলছে তার আশ্বাস দিয়েছেন আদিত্য। রাজ্যের আটশোটির বেশি সড়কপথ বন্ধ হয়ে রয়েছে। ধস এবং বৃষ্টির ফলে দশ হাজারেরও বেশি ঘরবাড়ি আংশিক অথবা সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। এই বিপর্যয়ে হিমাচল প্রদেশে যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা পুনরুদ্ধারের জন্য কেন্দ্রের কাছে ২ হাজার কোটি টাকার অনুরোধ করেছেন হিমাচল প্রদেশের উপমুখ্যমন্ত্রী মুকেশ অগ্নিহোত্রী।
বুধবার পাহাড়ি রাজ্যের পরিস্থিতি লক্ষ করে স্কুল এবং কলেজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিল প্রশাসন। বৃহস্পতিবারও সেই নির্দেশ বহাল রাখা হয়েছে। ভারী বর্ষণের কারণে শনিবার পর্যন্ত হিমাচল প্রদেশের সরকারি এবং বেসরকারি সমস্ত স্কুল এবং কলেজ বন্ধ রাখা হবে বলে প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে। তবে প্রবল বৃষ্টি যে এখনই থামছে না, তার আভাস দিয়েছে আবহাওয়া দফতর। মৌসম ভবন সূত্রের খবর, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় হিমাচল প্রদেশে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টির প্রকোপ থেকে রক্ষা পাবে না উত্তরাখণ্ডও। আগামী পাঁচ দিন উত্তরাখণ্ডেও ভারী বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে মৌসম ভবন।
হিমালয়ের পাদদেশেই নয়, উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতেও বৃষ্টির পূর্বাভাস জারি করেছে মৌসম ভবন। অরুণাচল প্রদেশ, অসম, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, ত্রিপুরা, মণিপুর এবং মিজোরামে রবিবার পর্যন্ত ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গ এবং সিকিমে, শুক্রবার পর্যন্ত ঝাড়খণ্ডে এবং শনিবার পর্যন্ত ওড়িশায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy