Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Hathras Gangrape

ঝরঝরে বাংলায় তনুশ্রী বললেন, কাউকেই ভয় পাই না। কাজ থামবে না

হাথরস-কান্ডে গোটা দেশে রইরই ফেলে-দেওয়া সাংবাদিক তনুশ্রী বললেন, ‘‘বহত অচ্ছা লাগ রহে হ্যায় স্যর। ম্যয় বহত খুশ হুঁ।’’

তনুশ্রী পান্ডে।

তনুশ্রী পান্ডে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২০ ০০:১৫
Share: Save:

সাকিন দক্ষিণ দিল্লির লাজপত নগর। বয়স ২৬ বছর। সাংবাদিকতার বয়স? মোটে ৫ বছর ১১ মাস। পরিচিতি? দেশজোড়া।

রবিবার বিকেল থেকে তাঁর মোবাইলে চেষ্টা চালিয়ে চালিয়ে হাল ছেড়ে দেওয়ার আগে একটা মরিয়া হোয়াটসঅ্যাপ পাঠিয়ে রেখেছিল আনন্দবাজার ডিজিটাল। রাত ১০টা নাগাদ ইংরেজিতে জবাব এল— ‘আমি এখন ফ্রি আছি। ফোন করতে পারেন। চাইলে আমিও করতে পারি।’

ফোন ঘোরাতে না ঘোরাতে তিনি নিজেই ঢুকে পড়লেন হোয়াট্সঅ্যাপ কল-এ, ‘‘ইয়েস স্যর। টেল মি।’’

আরও পড়ুন:হাতে মাইক, মনে জেদ, হাথরসের দুই আসল বীরাঙ্গনা

‘স্যর’? বলে কী! হাথরস-কান্ডে হইহই ফেলে-দেওয়া সাংবাদিক কিনা উল্টোদিককে সম্বোধন করছেন ‘স্যর’ বলে! অতঃপর তাঁকেও সেই বহুশ্রুত এবং আপাত-নির্বোধ প্রশ্নটি করা গেল, ঠিক যেমন তাঁর মতো নিউজ চ্যানেলের সাংবাদিক কোনও সফল পেশাদারকে করে থাকেন— কেমন লাগছে?

পরিবারের হাতে না দিয়ে এ ভাবেই শেষকৃত্য করা হয় হাথরসের নির্যাতিতার। এই দৃশ্য দেখেছে গোটা দেশ।

তনুশ্রী পান্ডে, হাথরস-কান্ডে গোটা দেশে রইরই ফেলে-দেওয়া সাংবাদিক তনুশ্রী পান্ডে বললেন, ‘‘বহত অচ্ছা লাগ রহে হ্যায় স্যর। ম্যয় বহত খুশ হুঁ।’’ তারপরেই চমকে দিয়ে ঝরঝরে বাংলায়, ‘‘আমি কিন্তু বাঙালি। খড়্গপুরে জন্মেছি। বড় হয়েছি। আপনি আমার সঙ্গে বাংলায় কথা বলতে পারেন।’’

আরও পড়ুন:হাথরসে গোপন বৈঠক! অভিযুক্তদের পাশে দাঁড়াতে কি একজোট উচ্চবর্ণের প্রতিনিধিরা​

বাঙালি!!

একেবারেই বাঙালি। গড়গড় করে যিনি বলছেন, ‘‘আমার বাবা খড়্গপুরের। মা কানপুরের। মা দারুণ বাংলা বলতে আর পড়তে পারেন। তার পরেও আমরা কেন পান্ডে, আমরা কেন নিজেদের বাঙালি বলি, এ সব নিয়ে অনেক কথা শুনতে হয়েছে। কিন্তু আমি আপনাকে বলছি, আমি পুরোপুরি বাঙালি। বাঙালি ছাড়া নিজেকে আর কিছু মনেই করি না। এখন বাবা-মা গুরগাঁওয়ে থাকেন। আমি দিল্লিতে এক বান্ধবীর সঙ্গে। ও একটা কাগজের এন্টারটেনমেন্ট রিপোর্টার। আমি ওঁদের সঙ্গে থাকি না। কারণ, কখন ফোন এলে কোথায় বেরিয়ে যেতে হয়! এমনিতেই মা আমায় নিয়ে খুবই চিন্তিত থাকেন। কলকাতায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদযাত্রা যেদিন কভার করতে গিয়েছিলাম, সেদিন তো মা লাফালাফি শুরু করে দিয়েছিলেন! আর এখানে আমার সঙ্গে থাকলে তো আরও চিন্তা করতেন। আসলে আমার পরিবারে কেউ কখনও সাংবাদিকতা করেনি। আমিই প্রথম। আর এই ধরনের ঘটনাও আমার জীবনে প্রথম ঘটল। তাই খুব খুশি হয়েছি।’’

আরও পড়ুন:কংগ্রেসের ‘ড্রাইভিং সিটে’ কি এ বার প্রিয়ঙ্কা, জল্পনার জন্ম হাথরসে​

সবচেয়ে খুশি কি বিখ্যাত হতে পেরে?

খানিক নীরবতা। তারপর জবাব এল, ‘‘নাহ্ স্যর। সবচেয়ে খুশি হয়েছি ওই ভিস্যুয়্যালটা দেখাতে পেরে। যেখানে ওই মেয়েটির দেহটা ওইভাবে জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছিল। আর ওর বাবা-মা-দাদাকে ঘরে আটকে রেখেছিল পুলিশ। আমি সবচেয়ে খুশি হয়েছি ওই ভিস্যুয়্যালটা মানুষকে দেখাতে পেরে। আসলে ছোটবেলা থেকেই আমি একটু প্রতিবাদী ধরনের। কোথাও কোনও অন্যায়, অবিচার দেখলে চুপ করে থাকতে পারি না। কতবার যে কত লোকের সঙ্গে রাস্তাঘাটে এই নিয়ে ঝামেলা করেছি! অন্যায় দেখলে মুখ বন্ধ করে রাখাটা আমার কাছে ক্রাইম বলে মনে হয়। আই হ্যাভ অলওয়েজ বিন আ রেবেল! প্রতিবাদী। তাই ছোটবেলা থেকেই ভেবেছিলাম হয় আইনজীবী হব অথবা সাংবাদিক। যাতে সমাজের এই সব অপরাধের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারি। শেষপর্যন্ত ২০১৪ সালের নভেম্বরে ফুলটাইম সাংবাদিক হলাম।’’

আরও পড়ুন:হাথরস-কাণ্ডে ধর্ষণের অভিযোগ মুছতে পিআর সংস্থার দ্বারস্থ যোগী​

প্রথমে ‘সিএনএন-আইবিএন’। তার পর ‘ইন্ডিয়া টুডে-আজ তক’। যাদের হয়ে হাথরসের ময়দানে নেমেছিলেন তিনি। তাঁর মতোই নেমেছিলেন এবিপি নিউজের প্রতিমা মিশ্র। যাঁকে তনুশ্রী বিলক্ষণ চেনেন। বলেন, ‘‘খুব ভাল চিনি ওকে। শি ইজ আ ভেরি গুড ফ্রেন্ড।’’

কাউকেই ভয় করেন না। কাজ করতেই হবে, এমনটাই মনে করেন তনুশ্রী।

তনুশ্রীর ফোনে আড়ি পেতে তাঁর সঙ্গে নির্যাতিতার ভাইয়ের কথোপকথন রেকর্ড করে তা প্রকাশ্যে এনেছে যোগী প্রশাসন। তাদের বক্তব্য, পেশাদার সাংবাদিক হয়েও তনুশ্রী ওই পরিবারকে প্রশাসনের বিরুদ্ধে উস্কাচ্ছিলেন। যার প্রেক্ষিতে তনুশ্রীর প্রতিষ্ঠান বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, তাদের সাংবাদিক নির্যাতিতার দাদা সন্দীপকে ফোন করে বলছিলেন, তাঁর বাবার একটি ভিডিয়ো বিবৃতি ফোনে রেকর্ড করে পাঠাতে। পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে এর মধ্যে অন্যায়টা কোথায়?

অন্যায় নেই। কিন্তু ঝুঁকি আছে। বিশেষত, পরিচিত মুখ হয়ে গেলে। তিনি ভয় পাচ্ছেন না? এর পর কাণ্ডে গেলে তো লোকে তাঁকে চিনে ফেলবে। প্রশাসন এবং রাষ্ট্র তো আরও খড়্গহস্ত হবে। তনুশ্রী বললেন, ‘‘আমার এডিটর রাজদীপ স্যর (রাজদীপ সরদেশাই) আমাকে একটা কথা বলেছিলেন। খবর করতে গিয়ে নিজে যেন খবর না-হয়ে যাই। জানি, আমি ওদের রাডারে আছি। লোকে আমার মুখটা চিনে গিয়েছে। মনে রাখবে। সেটা ভাবলে একটু চিন্তা হচ্ছে। তবে ভয় নয়। ভয় আমি কাউকেই করি না। আমার কাজ থেমে থাকবে না। কাজ তো আমাকে করতেই হবে। করবও।’’

আরও পড়ুন:প্রিয়ঙ্কার রণে ‘দাদির তেজ’, পোশাকে টান দিল ‘বীরপুরুষ’​

—গুডনাইট ম্যাডাম।

সম্ভ্রমের ‘ম্যাডাম’টা আপনা থেকেই বেরিয়ে গেল। বয়স ২৬ তো কী!

অন্য বিষয়গুলি:

Hathras Gangrape Rape UP Rape Tanushree Pandey
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy