হরিয়ানার ক্রীড়ামন্ত্রী ভারতীয় হকি দলের প্রাক্তন সদস্য এবং ওলিম্পিয়ান। ফাইল চিত্র।
যৌন হেনস্থায় অভিযুক্ত হরিয়ানার ক্রীড়ামন্ত্রী গ্রেফতার হলেই আরও বহু নির্যাতিতা মুখ খুলবেন। এমনটাই দাবি করলেন ক্রীড়ামন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগকারী হরিয়ানার জুনিয়র অ্যাথলেটিক কোচ। রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল ভিজের সঙ্গে সাক্ষাতে তিনি বলেন, ‘‘আর কতদিনই বা চুপ করে থাকবেন এই নির্যাতিতারা?’’ যদিও তিনি ঠিক কাদের কথা বলতে চাইছেন, সেই সমস্ত মহিলাও হরিয়ানার ক্রীড়ামন্ত্রী তথা ওলিম্পিয়ান এবং ভারতীয় হকি দলের প্রাক্তন ক্যাপ্টেন সন্দীপ সিংহেরই হেনস্থার শিকার কি না তা স্পষ্ট করে জানাননি অভিযোগকারিণী।
গত বৃহস্পতিবার আইএনএলডি-র দফতরে বসে একটি সাংবাদিক বৈঠকে এই অভিযোগ করেছিলেন ওই জুনিয়র অ্যাথলেটিক কোচ। পরে শনিবার তিনি চণ্ডীগড় পুলিশে এই ঘটনার অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্তের আশ্বাস দিয়েছিলেন হরিয়ানার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল। রবিবার অনিলের সঙ্গেই সাক্ষাৎ করে আরও নির্যাতিতার মুখ খোলার কথা জানিয়েছেন ওই প্রশিক্ষক। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, মন্ত্রী সন্দীপকে তিনি বহুবার নিরস্ত করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তিনি তাঁর আচরণ বদলাননি।
হরিয়ানার পেহোয়ার বিজেপি বিধায়ক সন্দীপের বিরুদ্ধে একটি সাংবাদিক বৈঠকে যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছিলেন ওই প্রশিক্ষক। তিনি অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর সঙ্গে জিমে প্রথমবার দেখা হয়েছিল মন্ত্রীর। তার পর থেকেই সমাজমাধ্যমে ক্রমাগত তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চালিয়ে যেতেন মন্ত্রী। যোগাযোগ হলে দেখা করতে বলতেন। প্রশিক্ষক জানিয়েছেন, তাঁরই একটি হারিয়ে যাওয়া শংসাপত্রের ব্যাপারে সন্দীপ তাঁকে দেখা করতে বলতেন। সে ব্যাপারেই মন্ত্রীর বাড়িতে দেখা করতে গেলে তাঁকে যৌন হেনস্থা করেন সন্দীপ।
রবিবার ওই প্রশিক্ষক সংবাদ মাধ্যমকেও বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে ক্রীড়ামন্ত্রীর মানসিক অত্যাচারের শিকার হয়েছি। কিন্তু এক একটা সময় আসে যখন নিজের কথাটা জোর গলায় বলা জরুরি হয়ে পড়ে। তাই আমি বলেছি। আর আমি নিশ্চিত, সুবিচার পাবই।’’ প্রশিক্ষক জানান, তাঁকে নিরপেক্ষ তদন্তের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। পুলিশকে তিনি তাঁর নিজের নিরাপত্তার কথাও জানিয়েছেন। কারণ, বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই সমাজমাধ্যমে ভয় দেখানো হচ্ছে তাঁকে। জুনিয়র অ্যাথলেটিক প্রশিক্ষক বলেছেন, ‘‘ভয়ে আমি ফোন ধরা বন্ধ করে দিয়েছি। মন্ত্রী ফেব্রুয়ারি থেকে নভেম্বরের মধ্যে তাঁর দফতর এবং অন্যান্য জায়গায় আমাকে হয়রান করেছেন। এক বার সেক্টর সাতে আমাকে দেখা করতে বলেছিলেন। চণ্ডীগড়ের বাড়িতেও তিনি আমাকে আপত্তিকর ভাবে স্পর্শ করেছিলেন। পুলিশকে আমি সব ঘটনাই জানিয়েছি।’’
প্রসঙ্গত, প্রশিক্ষকের অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পর রবিবারই ক্রীড়া দফতরের দায়িত্ব মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টরের হাতে তুলে দেন সন্দীপ। তাঁর দাবি, এটা বিরোধী দলের চক্রান্ত এবং তাঁর ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা। তবে বিতর্ক তৈরি হওয়ায় তিনি দফতরের দায়িত্ব থেকে আপাতত সরে দাঁড়িয়েছেন। তদন্ত শেষ হলে যথন সত্যি ঘটনা প্রকাশ্যে আসবে, তার পর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন। এই ঘটনায় ক্রীড়ামন্ত্রীর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৪, ৩৫৪এ, ৩৫৪বি, ৩৪২ এবং ৫০৬ ধারায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে বলে জানিয়েছেন হরিয়ানা পুলিশের এক মুখপাত্র।
উল্লেখ্য, ক্রীড়ামন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগকারী ওই জুনিয়র অ্যাথলেটিক প্রশিক্ষক জুনিয়র মহিলা অ্যাথলেটিক্স দলের কোচ। তিনিও রিয়ো অলিম্পিক্সে ৪০০ মিটার দৌড়ের দলে ছিলেন। তিন মাস আগে তাঁকে জুনিয়র দলের কোচ নিয়োগ করা হয়। মহিলা কোচের অভিযোগ, সন্দীপ তাঁকে বার্তা পাঠালেও তাঁর কোনও প্রমাণ নেই। কারণ হোয়াটসঅ্যাপের একটি বিশেষ ফিচার ব্যবহার করে সেই বার্তা পাঠানো হয়েছিল, যা নির্দিষ্ট সময় পরে আপনা থেকেই মুছে যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy