গ্রেফতারির পর জিতেন্দ্র ত্যাগী। ছবি: পিটিআই।
নিরন্তর অন্য ধর্মের প্রতি গালিগালাজ করে যাওয়া হিন্দুত্ববাদী ধর্মগুরু যতি নরসিংহানন্দ এ বার শাপশাপান্ত করলেন পুলিশকে। তাঁর গাড়িতে বসে থাকা জিতেন্দ্র ত্যাগীকে গ্রেফতার করতে আসা পুলিশকে উদ্দেশ করে বৃহস্পতিবার গুরু যতিকে চিৎকার করে বলতে দেখা যায়, “তোমরা সবাই মরবে... এমনকি তোমাদের বাচ্চারাও!”
উত্তরপ্রদেশ শিয়া সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ডের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ওয়াসিম রিজভিকে ধর্মান্তর করিয়ে হিন্দু করেছেন নরসিংহানন্দ, নাম দিয়েছেন জিতেন্দ্র সিংহ নারায়ণ ত্যাগী। হরিদ্বারে নরসিংহানন্দ যে ‘ধর্ম সংসদ’-এর আয়োজন করেছিলেন, সেখানে আরও অনেক বক্তার সঙ্গে এই জিতেন্দ্রও অন্য ধর্মের প্রতি ঘৃণায় ভরা নানা কথা বলেছিলেন। যদিও মাত্রা ছাড়িয়ে রক্তপাত ও খুন-জখমের জিগির তুলেছিলেন মূলত নরসিংহানন্দ এবং সাধ্বী অন্নপূর্ণা, কিন্তু ঘটনার পরে সুপ্রিম কোর্টের চাপে পড়ে সদ্য হিন্দু হওয়া জিতেন্দ্রের বিরুদ্ধেই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে বিজেপি সরকারের পুলিশ। এফআইআর-এ নরসিংহানন্দ ও অন্নপূর্ণা-সহ জনা দশেকের নাম দেওয়া হলেও বাকিদের শুধু তদন্তে সহযোগিতা করার আর্জি জানিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিংহ ধামীর প্রশাসন।
গত মাসের ১৭ থেকে ১৯ তারিখে হরিদ্বারে ওই অনুষ্ঠানটি হওয়ার পরে দেশ জুড়ে তার ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়ে। হিন্দুত্ববাদী বক্তাদের বক্তৃতায় অন্য ধর্মের প্রতি ঘৃণায় ভরা ও দাঙ্গার উস্কানিমূলক নানা আস্ফালন শোনার পরে দেশের সর্ব অংশের মানুষ প্রতিবাদে সরব হন। তবে রাজ্যের বিজেপি সরকার বিষয়টি নিয়ে গা করেনি। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট এ বিষয়ে একটি মামলা গ্রহণ করে অসাংবিধানিক ও বেআইনি কার্যকলাপের পরে রাজ্য সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তার হলফনামা তলব করে। এর পরেই নড়ে বসে নরসিংহানন্দ, জিতেন্দ্র-সহ ১০ জনের নাম দিয়ে এফআইআর করে হরিদ্বার পুলিশ। জিতেন্দ্রের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরে গত কাল উত্তরাখণ্ডের রুরকি থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গ্রেফতারের সময়ের ভিডিয়োই সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়েছে, যেখানে নরসিংহানন্দকে দুর্বাসা মুনির ভূমিকা নিয়ে পুলিশকে অভিশাপ দিতে দেখা গিয়েছে। পুলিশ গাড়িটি থামালে নরসিংহানন্দ তাঁর সফরসঙ্গী জিতেন্দ্রকে গ্রেফতারে বাধা দেন। পুলিশকে তিনি যে মোক্ষম প্রশ্নটি করেন, সেই প্রশ্ন অবশ্য অনেকেরই।
নরসিংহানন্দ পুলিশকে বলেন, “ও তো একা কোনও কাজ করেনি। আমরা সবাই তাঁর সঙ্গে ছিলাম। ও যা বলেছে, আমরাও সেই কথা বলেছি। তা হলে শুধু ওকে কেন তোমরা গ্রেফতার করবে?” উত্তরে পুলিশকে দেখা যায় গাড়ি থেকে নেমে এসে কাজে সহযোগিতার জন্য নরসিংহানন্দকে জোড় হাতে অনুনয় বিনয় করতে। তাঁরা যে বাধ্য হয়ে এই কাজ করছে, নাচার পুলিশ সেই কথাও জানান নরসিংহানন্দকে। সেই সময়েই উগ্র হয়ে উঠে শাপশাপান্ত করেন বিতর্কিত ধর্মগুরু। বলেন, “ও (জিতেন্দ্র) নতুন হিন্দু হয়েছে, সকলকে ওর পাশে থাকা উচিত। তা না করে...”
উত্তরাখণ্ডেও বিধানসভা ভোট আগামী মাসে। তার আগে এমন একটি বিষয় নিয়ে খানিকটা হলেও বিপাকে সরকার। পুরোটা নয়, কারণ বিজেপির একটা বড় অংশের ধারণা— এই অবসরে হরিদ্বারের সেই ধর্ম-সভার বার্তা ‘ভক্ত’-দের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে ভোটারদের মধ্যে ধর্মীয় মেরুকরণ তৈরি করবে। এর সুফল পেতে পারে বিজেপি। বিজেপির আইটি সেলের কর্মীরা তাই নিয়মিত এই সভার বক্তৃতামালা সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করে চলেছে।
পাঁচ রাজ্যে ভোটের আগে ধর্মীয় মেরুকরণ তীব্র করতে কোনও চেষ্টাই বাকি রাখছে না হিন্দুত্ববাদীরা। মধ্যপ্রদেশের খান্ডওয়ায় হিন্দুত্ববাদী যুব সংগঠন বজরং দলের কেন্দ্রীয় সম্মেলনে এ দিন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা মিলিন্দ পরান্দে ফের বলেন, “হিন্দুত্ব বিপন্ন। যে হারে হিন্দু জনসংখ্যা কমছে, তাতে খুব শীঘ্রই ভারতে তারা সংখ্যালঘু হয়ে যাবে।” কী ভাবে তা মোকাবিলা করা যাবে? ‘হিন্দু যুবাদের’ প্রতি পরান্দের পরামর্শ, প্রত্যেককে ২ বা ৩টি সন্তান নিতে হবে। বাড়াতে হবে হিন্দুর সংখ্যা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy