Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Gyanvapi Mosque

জ্ঞানবাপীর সেই ‘শিবলিঙ্গের’ বয়স জানতে পরীক্ষা? পুরাতত্ত্ববিদদের আট সপ্তাহ সময় দিল আদালত

পাঁচ হিন্দু মহিলা জ্ঞানবাপী মসজিদে দেবদেবীর মূর্তি আছে দাবি করে পুজোর অনুমতি চেয়েছেন। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতেই মসজিদ চত্বরে অনুসন্ধান চালানোর আবেদন জানানো হয় আদালতে।

জ্ঞানবাপী মামলা এ বার ইলাহাবাদ হাই কোর্টে।

জ্ঞানবাপী মামলা এ বার ইলাহাবাদ হাই কোর্টে। ফাইল চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
ইলাহাবাদ (প্রয়াগরাজ) শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২৩ ১২:৫১
Share: Save:

জ্ঞানবাপী মসজিদ চত্বরে পাওয়া তথাকথিত ‘শিবলিঙ্গে’র বয়স নির্ধারণের জন্য কার্বন ডেটিং পদ্ধতি ব্যবহার করা যাবে কি না, সে বিষয়ে মতামত জানানোর জন্য ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ (আর্কিয়োলজিকাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া বা এএসআই)-কে আরও ৮ সপ্তাহ সময় দিল ইলাহাবাদ হাই কোর্ট।

শুক্রবার এএসআই-এর আইনজীবী হাই কোর্টকে জানান, পুরাতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা মতামত জানাতে আরও সময় চেয়েছেন। এএসআই-এর আইনজীবীর আবেদনের প্রেক্ষিতে আরও ৮ সপ্তাহ সময় মঞ্জুর করেন বিচারপতি জেজে মুনির। আগামী ২০ মার্চ এই মামলার পরবর্তী শুনানি। ওই দিন এএসআই-এর মহানির্দেশককে এ বিষয়ে লিখিত ভাবে মতামত জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি মুনির।

প্রসঙ্গত, তথাকথিত ‘শিবলিঙ্গে’র বয়স নির্ধারণের জন্য হিন্দু পক্ষের তরফে পরীক্ষার আবেদন জানানো হলেও বারাণসী জেলা আদালত গত ১৪ অক্টোবর তা নাকচ করে দিয়েছিল। মসজিদ চত্বরের ওজুখানায় শিবলিঙ্গের উপস্থিতি দাবি করে তার বয়স জানার জন্য কার্বন ডেটিং পরীক্ষার যে আবেদন জানানো হয়েছিল সিনিয়র বিচারক অজয়কুমার বিশ্বেশ তা খারিজ করে বলেছিলেন, ‘‘শিবলিঙ্গের অস্তিত্ব খোঁজার জন্য জ্ঞানবাপী চত্বরে কোনও রকম বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের কাজ করা যাবে না।’’

বিচারক বিশ্বেশের সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ইলাহাবাদ হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন লক্ষ্মী দেবী-সহ চার আবেদনকারী। তার প্রেক্ষিতে গত ৭ নভেম্বের এএসআই-এর মত চেয়েছিল ইলাহাবাদ হাই কোর্ট। কার্বন ডেটিংয়ের পাশাপাশি, হাই কোর্টের তরফে এএসআইয়ের প্রধানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, গ্রাউন্ড পেনিট্রেটিং রেডারের মাধ্যমে জ্ঞানবাপীর অন্দরে পরীক্ষার জন্য খননকার্য চালানো সম্ভব কি না, তা জানাতে। গ্রাউন্ড পেনিট্রেটিং রেডার ব্যবহার করলে প্রাচীন কাঠামোর কোনও ক্ষতির সম্ভবনা আছে কি না, সুনির্দিষ্ট ভাবে তা জানতে চেয়েছিলেন বিচারপতি মুনির।

২০২১ সালের অগস্টে পাঁচ হিন্দু মহিলা জ্ঞানবাপীর ‘মা শৃঙ্গার গৌরী’ (ওজুখানা ও তহখানা নামে পরিচিত) এবং মসজিদের অন্দরের পশ্চিমের দেওয়ালে দেবদেবীর মূর্তির অস্তিত্বের দাবি করে তা পূজার্চনার অনুমতি চেয়ে যে মামলা দায়ের করেছিলেন তারই প্রেক্ষিতে মসজিদের অন্দরের ভিডিয়ো সমীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন বারাণসীর নিম্ন আদালতের বিচারক রবিকুমার দিবাকর। এর পরেই হিন্দু পক্ষের তরফে প্রাপ্ত নমুনাগুলির কার্বন ডেটিং পরীক্ষার আবেদন জানানো হয় গত ২২ সেপ্টেম্বর।

সেই সমীক্ষা ও ভিডিয়োগ্রাফির কাজ শেষ হওয়ার পরে গত ২০ মে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে মামলার শুনানির দায়িত্ব পান বারাণসী জেলা আদালতের বিচারক বিশ্বেশ। পর্যবেক্ষক দলের ভিডিয়োগ্রাফির রিপোর্টে মসজিদের ওজুখানার জলাধারে শিবলিঙ্গের মতো আকৃতির যে কাঠামোর খোঁজ মিলেছে, সেটি আসলে ফোয়ারা বলে মুসলিম পক্ষ দাবি করে। অন্য দিকে, হিন্দুপক্ষের তরফে প্রাপ্ত নমুনাগুলির কার্বন ডেটিং পরীক্ষার আবেদন জানানো হয় গত ২২ সেপ্টেম্বর।

‘শিবলিঙ্গে’র বয়স নির্ধারণে কার্বন ডেটিং পদ্ধতির প্রয়োগ নিয়ে অবশ্য ধন্দ রয়েছে বিশেষজ্ঞদের একাংশের মধ্যে। তাঁরা জানাচ্ছেন, কার্বন ডেটিংয়ের মাধ্যমে মূলত জীবাশ্ম বা দেহাবশেষের বয়স নির্ধারণ করা হয়। পরিবেশে কার্বনের সবচেয়ে বেশি যে আইসোটোপ পাওয়া যায় তা হল কার্বন-১২। সেই সঙ্গে খুব অল্প পরিমাণ কার্বন-১৪-ও পাওয়া যায়। পরিবেশে এই দুই আইসোটোপের অনুপাত প্রায় স্থির।

বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, প্রাণী বা উদ্ভিদ পরিবেশ থেকে এই দুই ধরনের কার্বন আইসোটোপই গ্রহণ এবং ত্যাগ করে। মৃত্যুর পরে সেই প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। কার্বন-১২ আইসোটোপের ক্ষয় হয় না। কিন্তু কার্বন-১৪ আইসোটোপ তেজস্ক্রিয়। ৫,৭৩০ বছর পরে কার্বন-১৪-এর পরিমাণ অর্ধেক হয়ে যায়। বৈজ্ঞানিক ভাষায় যার নাম ‘হাফ লাইফ’। ফলে প্রাণী বা উদ্ভিদের ক্ষেত্রে মৃত্যুর পরে কার্বনের এই দুই আইসোটোপের অনুপাত বদলায়। কার্বন ডেটিং পদ্ধতিতে সেই পরিবর্তনের হিসাব করে ওই প্রাণী বা উদ্ভিদের মৃত্যুর আনুমানিক সময় নির্ধারণ করা সম্ভব।

কিন্তু পাথর বা শিলার মতো বস্তুর ক্ষেত্রে এ ভাবে বয়স নির্ধারণ কঠিন বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। অনেক ক্ষেত্রে কোনও প্রাচীন শিলা বা প্রস্তরখণ্ডের নীচে চাপা পড়ে থাকা প্রাণী বা উদ্ভিদের দেহাবশেষ পরীক্ষা করে তার বয়স নির্ধারণের চেষ্টা করা হয়। সে ক্ষেত্রে গ্রাউন্ড পেনিট্রেটিং রেডার ব্যবহারেরও প্রচলন রয়েছে। কিন্তু জ্ঞানবাপীর মতো প্রাচীন ওই ঐতিহাসিক কাঠামোর এমন পরীক্ষা উচিত কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy