ছবি: পিটিআই।
আপাতত সামান্য স্বস্তি। আজ জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে (জেএনইউ) বর্ধিত ফি এবং হস্টেলের নতুন নিয়মবিধি সংক্রান্ত মামলার প্রথম দিনের শুনানি শেষে আপাতত পুরনো ফি-ই বজায় রাখার অন্তর্বর্তী নির্দেশ দিল দিল্লি হাইকোর্ট। জারি রাখতে বলল হস্টেলের পুরনো নিয়মকানুনও। যা প্রায় তিন মাস আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া পড়ুয়াদের কাছে স্বস্তির।
শুধু তা-ই নয়। মামলার শুনানিতে বিচারপতি রাজীব শাকধেরের বেঞ্চ যে-ভাবে শিক্ষায় সরকারি ব্যয়ের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছে, তা-ও খুশি করেছে পড়ুয়াদের। কারণ, গত প্রায় তিন মাস ধরে ক্যাম্পাসে এবং ক্যাম্পাসের বাইরে এর পক্ষে লাগাতার সওয়াল করছিলেন তাঁরা। স্লোগান তুলছিলেন, ‘‘শিক্ষা পে যো খরচা হো, বাজেট কা আচ্ছা হিস্সা হো।’’ অর্থাৎ, বাজেটের ভাল অংশ যেন শিক্ষায় বরাদ্দ হয়।
আদালতের নির্দেশকে স্বাগত জানিয়েছে জেএনইউয়ের ছাত্র সংসদ জেএনইউএসইউ। বাকি পড়ুয়াদের আগামী সপ্তাহের মধ্যে পুরনো ফি গুনে নাম নথিভুক্ত করানোর আর্জি জানানোর পাশাপাশি আলোচনায় যে তারা রাজি, সেই বার্তা জেএনইউ কর্তৃপক্ষকে দিয়েছে তারা। তবে উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনায় তারা রাজি হবে কি না, তা স্পষ্ট নয়। আদালত অবশ্য এর পরে বক্তব্য শুনবে জেএনইউ কর্তৃপক্ষের। চূড়ান্ত রায় তার পরে।
আরও পড়ুন: জনসংখ্যা নিয়ে প্রচারে প্রধান বিচারপতিরাও?
আজ শুনানির সময়ে বিচারপতি রাজীব শাকধেরের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ বলেছে, শিক্ষার দায়িত্ব থেকে হাত ধুয়ে ফেলতে পারে না সরকার। সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে টাকা জোগাতে হবে সরকারকেই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বেতন কোথা থেকে আসবে, তার দায় পড়ুয়াদের উপরে বর্তাতে পারে না। প্রতিপক্ষ আইনজীবী তথা অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল পিঙ্কি আনন্দের সওয়াল ছিল, হস্টেলের নতুন নিয়মবিধি মেনেই নাম নথিভুক্ত করেছেন প্রায় ৯০ শতাংশ পড়ুয়া। তা শুনে বিচারপতি শাকধেরের মন্তব্য, ‘‘অন্য রাস্তা খোলা না-থাকলে কী আর করার থাকে?’’
হাইকোর্টের নির্দেশ
• যে সব পড়ুয়ার এখনও সিমেস্টারের জন্য নাম নথিভুক্ত করা বাকি, পুরনো ফি ও হস্টেলের পুরনো নিয়ম মেনেই তা করতে দিতে হবে।
• নথিভুক্তির সময়সীমা বাড়াতে হবে দেরির জন্য কোনও রকম জরিমানা (লেট ফি) ছাড়াই।
• সংরক্ষণ-সহ যে সব সুবিধা পড়ুয়াদের জন্য চালু আছে, তা আপাতত বহাল রাখতে হবে।
• চেষ্টা করতে হবে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানসূত্র খোঁজার।
তিন মাস ছুঁইছুঁই আন্দোলনে ক্যাম্পাস অচল। তবু এখনও কার্যত অনড় দু’পক্ষই (জেএনইউ কর্তৃপক্ষ এবং জেএনইউএসইউ)। এই পরিস্থিতিতে ২১ জানুয়ারি বর্ধিত ফি এবং হস্টেলের নতুন নিয়মবিধির বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত আদালতের দ্বারস্থ হয় জেএনইউএসইউ। তাদের তরফে মামলা করেন সভানেত্রী ঐশী ঘোষ, সহ-সভাপতি সাকেত মুন-সহ চার কার্যনির্বাহী কর্তা। অভিযোগ ছিল, পড়ুয়া-প্রতিনিধিদের সঙ্গে কোনও রকম আলোচনা ছাড়াই ওই নতুন নিয়মবিধি চাপিয়ে দেওয়া বেআইনি, অযৌক্তিক, প্রতারণামূলক এবং পড়ুয়াদের স্বার্থের পরিপন্থী। তার প্রথম দিনের শুনানির পরেই এই নির্দেশ।
আন্দোলনরত পড়ুয়াদের অনেকে বলছেন, গত তিন মাসে আন্দোলনে চিড় ধরানোর চেষ্টা হয়েছে। উপাচার্য এবং সরকারি মদতে ক্যাম্পাসে চড়াও হয়েছে মুখঢাকা দুষ্কৃতীরা। রডের আঘাতে মাথা ফেটেছে ঐশীর। তবু সার্ভার রুম তছনছ করার দায়ে তাঁদের কয়েক জনের নামেই উল্টে এফআইআর দায়ের করেছেন কর্তৃপক্ষ। রাস্তায় মিছিলের সময়ে বহু বার জুটেছে পুলিশের লাঠি। কিন্তু এই সমস্ত কিছুর পরে যে আপাতত এই স্বস্তিটুকু মিলেছে, তাতে খুশি তাঁরা।
তবে থাকছে অস্বস্তির কাঁটাও। কারণ, আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খুঁজতে বলেছে আদালত। অথচ পড়ুয়ারা বলে এসেছেন, উপাচার্য এম জগদীশ কুমারের সঙ্গে আলোচনার কোনও জায়গা নেই। তাঁকে বরখাস্তের দাবি মানবসম্পদ মন্ত্রককে জানিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু গত কাল সেই সম্ভাবনায় জল ঢেলে মন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল নিশঙ্ক বলেছেন, কাউকে সরানো সমাধান হতে পারে না। তাই এখন যুযুধান দুু’পক্ষ আলোচনার টেবিলে বসে কি না, নজর সে-দিকেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy