Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Voter

Law: আইন তো হচ্ছে, ভোটারদের তথ্য সুরক্ষার কী হবে

আধারের সঙ্গে ভোটার কার্ডের সংযুক্তিকরণ করার জন্য নির্বাচন কমিশন ভোটারদের সমস্ত তথ্য অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলঙ্গানা সরকারের হাতে তুলে দিয়েছিল।

ফাইল ছবি

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২১ ০৭:৫২
Share: Save:

২০১৯-এর অন্ধ্রপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচন। জগন্মোহন রেড্ডির ওয়াইএসআর কংগ্রেস নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানাল, চন্দ্রবাবু নায়ডুর তেলুগু দেশম পার্টির কাছে ভোটারদের সমস্ত তথ্য রাজ্য সরকারের তথ্যভান্ডার থেকে ফাঁস হয়ে গিয়েছে।

কী ভাবে? আধারের সঙ্গে ভোটার কার্ডের সংযুক্তিকরণ করার জন্য নির্বাচন কমিশন ভোটারদের সমস্ত তথ্য অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলঙ্গানা সরকারের হাতে তুলে দিয়েছিল। অন্ধ্রের নাগরিকদের নাম-ধাম-বয়স সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য রাজ্যের তথ্যভান্ডারে ছিল। সেই তথ্যভান্ডারের সঙ্গে আধার সংখ্যা কাজে লাগানো হয়। যাঁদের নাম-ধাম তথ্য কাজে লাগানো হচ্ছে, তাঁদের অনুমতিও চাওয়া হয়নি। তা করতে গিয়ে ভোটারদের সমস্ত তথ্য সে সময় অন্ধ্রে ক্ষমতাসীন তেলুগু দেশম পার্টির হাতে চলে যায় বলে অভিযোগ ওঠে।

এ বার নরেন্দ্র মোদী সরকার যখন গোটা দেশে আধারের সঙ্গে ভোটার কার্ডের সংযুক্তিকরণের জন্য সংসদে বিল পাশ করাচ্ছে, তখন প্রশ্ন উঠছে— ভোটারদের তথ্য একই ভাবে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের কাছে ফাঁস হয়ে যাবে না তো? কেন্দ্র বলছে, ভুয়ো ভোটার ধরাই এর উদ্দেশ্য। ভুয়ো ভোটার ধরতে গিয়ে তালিকা থেকে তেলঙ্গানায় প্রকৃত ভোটারদের নাম বাদ চলে যাওয়ার উদাহরণ নিয়েও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

ডিজিটাল দুনিয়ায় নাগরিক অধিকারের পক্ষে সওয়ালকারী ‘ইন্টারনেট ফ্রিডম ফাউন্ডেশন’-এর কার্যকরী অধিকর্তা অপার গুপ্তের বক্তব্য, “আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য আমরা আধার ও ভোটার কার্ডের সংযুক্তিকরণের বিরোধিতা করছি না। ভোটারদের নাম বাদ পড়া ও ভোটারদের তথ্য জোগাড় করার ঘটনার কথা মনে রেখেই বিরোধিতা করা হচ্ছে।”

২০১৪-য় অন্ধ্রপ্রদেশের আইএএস অফিসার অহমেদ বাবু হায়দরাবাদ ও নিজামাবাদে আধারের সঙ্গে ভোটার কার্ডের সংযুক্তিকরণের ‘পাইলট প্রকল্প’ শুরু করেছিলেন। লক্ষ্য ছিল, ভোটার তালিকা থেকে ভুয়ো ভোটার বাদ দেওয়া। সুপ্রিম কোর্টের রায় অমান্যের অভিযোগ ওঠে। আদালতের নির্দেশ ছিল, শুধুমাত্র নগদ ভর্তুকি বা সরকারি সুবিধার জন্যই আধার কাজে লাগানো যাবে। সুপ্রিম কোর্ট ২০১৫-র অগস্টে ভোটার কার্ডের সঙ্গে আধারের সংযুক্তিকরণের কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। তত দিনে অন্ধ্রপ্রদেশের ভোটার তালিকা থেকে ২৫ লক্ষ ও তেলঙ্গানার ভোটার তালিকা থেকে ৪০ লক্ষ নাম বাদ পড়ে গিয়েছে। এবং যাঁদের নাম বাদ পড়েছে, তাঁরা জানতেও পারেননি সে কথা। ২০১৮ সালে তেলঙ্গানার বিধানসভার ভোটের সময় লক্ষ লক্ষ মানুষ ভোট দিতে এসে তবে জানতে পারেন, তাঁদের নাম ভোটার তালিকা থেকে স্রেফ মুছে গিয়েছে।

অন্ধ্রে তেলুগু দেশমের কাছে ভোটারদের তথ্য ফাঁস হওয়ার ঘটনায় নির্বাচন কমিশন রাজ্যের নির্বাচনী অধিকারিককে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল। নির্বাচনী আধিকারিকের বক্তব্য ছিল, তাদের তরফ থেকে তথ্য ফাঁস হয়নি। রাজ্য ভাগের পরে তখনও অন্ধ্র-তেলঙ্গানার তথ্যভান্ডার একই ছিল বলে তেলঙ্গানার তথ্যও ফাঁস হওয়ার অভিযোগ ওঠে। তেলঙ্গানা সরকার এসআইটি গঠন করে তদন্ত করে। এসআইটি-র বক্তব্য ছিল, রাজ্যের তথ্যভান্ডার বা আধার কর্তৃপক্ষ থেকেই তথ্য ফাঁস হয়েছে।

মানবাধিকার কর্মী কবিতা শ্রীবাস্তব বলেন, “ভোটাধিকার, ব্যালটের গোপনীয়তার সঙ্গে আপস নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। এটা সুপ্রিম কোর্টের ব্যক্তি পরিসরের অধিকারের বিরুদ্ধে। ফলে আধার-ভোটার কার্ড সংযুক্তিকরণ অসাংবিধানিক।” অপার তার সঙ্গে যোগ করেন, “শুধু ব্যক্তি পরিসরের অধিকার নয়, নির্বাচনী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনকেও লঘু করছে এই পদক্ষেপ। এখনও দেশে তথ্য সুরক্ষা আইন নেই। যে আইন নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে, তাতে প্রচুর ছিদ্র।”

অন্য বিষয়গুলি:

Voter Voter Card parliament
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy