বাঁ দিক থেকে, রামনাথ কোবিন্দ, রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং অমিত শাহ। ছবি: পিটিআই।
লোকসভা নির্বাচন ঘোষণার আগেই রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে রিপোর্ট জমা দিল, ‘এক দেশ এক ভোট’ (ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশন) নীতি কার্যকর করার লক্ষ্যে নরেন্দ্র মোদী সরকারের গড়া কমিটি। বৃহস্পতিবার ওই কমিটির প্রধান তথা প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়ে দ্রৌপদীর হাতে রিপোর্টটি তুলে দেন। সেখানে হাজির ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-সহ কমিটির অন্য সদস্যরা।
চলতি সপ্তাহেই লোকসভা নির্বাচন ঘোষণা হতে পারে। তার আগে এই পদক্ষেপ ঘিরে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন। কারণ, কংগ্রেস, তৃণমূল, সিপিএম-সহ বিরোধী দলগুলি গোড়া থেকেই ‘এক দেশ এক ভোট’ পদ্ধতির সমালোচনায় মুখর। তাদের মতে, এই নীতি নিয়ে মোদী সরকার ঘুরপথে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ধাঁচের ব্যবস্থা চালু করতে চাইছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো এবং সংসদীয় গণতান্ত্রিক ভাবনার পরিপন্থী বলেও বিরোধী নেতৃত্বের অভিযোগ।
বিশেষত বিজেপি-বিরোধী আঞ্চলিক দলগুলির আশঙ্কা, ‘এক দেশ এক ভোট’ নীতি কার্যকর হলে লোকসভার ‘ঢেউয়ে’ বিধানসভাগুলি ‘ভেসে যাবে’। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয়, সাংসদ এবং বিধায়ক নির্বাচনের ক্ষেত্রে যেটুকু বৈচিত্রের সম্ভাবনা রয়েছে, বিজেপির আগ্রাসী প্রচারের মুখে তা ভেঙে পড়বে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, বিজেপির অঙ্ক হল, শুধু লোকসভা ভোট হলে বিরোধী দলগুলির পক্ষে আসন সমঝোতা করা সহজ হবে। কিন্তু একই সঙ্গে বিধানসভা ভোট জুড়ে দিতে পারলে কংগ্রেসের সঙ্গে সহযোগী আঞ্চলিক দলগুলির বিরোধ অনিবার্য।
বিরোধীদের একাংশের আশঙ্কা, পরবর্তী পর্যায়ে এই নীতিতে হেঁটে রাজ্য নির্বাচন কমিশনগুলিকে কার্যত ক্ষমতাহীন করে দিয়ে পঞ্চায়েত-পুরসভা ভোটকেও এই প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ঘটনাচক্রে, সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টে জম্মু ও কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বিলোপ সংক্রান্ত মামলায় ধাপে ধাপে উপত্যকার পঞ্চায়েত থেকে বিধানসভার ভোটের আয়োজনের কথা বলেছে মোদী সরকার। তা ছাড়া, ‘এক ভোট’ ব্যবস্থা চালুর পরে কেন্দ্রে বা কোনও রাজ্যে পাঁচ বছরের আগেই নির্বাচিত সরকার পড়ে গেলে কী হবে, প্রশ্ন রয়েছে তা নিয়েও।
যদিও লোকসভা ভোটের সঙ্গেই সব রাজ্যের বিধানসভা ভোট সেরে ফেলার পক্ষে মোদী সরকারের যুক্তি হল, এতে নির্বাচনের খরচ কমবে। একটি ভোটার তালিকাতেই দু’টি নির্বাচন হওয়ায় সরকারি কর্মীদের তালিকা তৈরির কাজের চাপ কমবে। ভোটের আদর্শ আচরণ বিধির জন্য বার বার সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ থমকে থাকবে না। নীতি আয়োগ, আইন কমিশন, নির্বাচন কমিশনও এই ভাবনাকে নীতিগত সমর্থন জানিয়েছে বলে কেন্দ্রের দাবি। প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে প্রথম বার প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়ার পরেই মোদী ‘এক দেশ এক ভোট’ তত্ত্ব প্রকাশ্যে এনেছিলেন।
গত বাদল অধিবেশনে রাজ্যসভায় কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অর্জুনরাম মেঘওয়াল জানিয়েছিলেন, ‘এক দেশ এক ভোট’ চালু করার জন্য আইন কমিশনের দ্বারস্থ হচ্ছে কেন্দ্র। তিনি বলেন, ‘‘এর ফলে যে বিপুল অর্থের সাশ্রয় হবে, তা রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের প্রচারে ব্যয় হতে পারে। এই নীতি কার্যকর হলে উন্নয়নমূলক প্রকল্পের গতিও বাড়বে।’’ গত ১ সেপ্টেম্বর ওই নীতি কার্যকরের উদ্দেশে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি কোবিন্দের নেতৃত্বে কমিটি গড়েছিল মোদী সরকার। বৃহস্পতিবার আট খণ্ডে বিভক্ত ১৮ হাজার পাতার রিপোর্টটি রাষ্ট্রপতির হাতে তুলে দেওয়ার পরে শাহের দাবি, ঐকমত্যের ভিত্তিতেই সুপারিশগুলি পেশ করা হয়েছে রাষ্ট্রপতির কাছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy