সাহিল সিংহ। ছবি: সংগৃহীত।
পকেটে নয়া পয়সাও নেই। যে গাড়িতে চড়ে ঘুরে ঘুরে খাবার সরবরাহের কাজ করেন তিনি, সেই গাড়িতে নেই জ্বালানি। অনলাইনে খাবার সরবরাহকারী অ্যাপের এক কর্মী তাই তিন কিলোমিটার পথ হেঁটে এসেছিলেন গ্রাহককে খাবার পৌঁছে দিতে। তার পরেই মোড় ঘুরে গেল তাঁর জীবনের।
জম্মু থেকে কাজের সন্ধানে ভারতের এক ব্যস্ত শহরে এসেছিলেন সাহিল সিংহ। লকডাউনের পর তখন দেশে কাজের হাহাকার। স্নাতক হওয়ার পর সাহিল বাইজুসের মতো সংস্থাতেও কাজ করেছেন। কিন্তু লকডাউনে হঠাৎই কাজ চলে যায়। ৩০ বছরের সাহিল এর পর অন্য শহরে এসে অল্প বেতনের খাবার সরবরাহ অ্যাপের সরবরাহকারীর কাজ নেন। কিন্তু সেখানেও সমস্যা। ভাড়াবাড়িতে তাঁর সঙ্গে থাকা এক যুবক তাঁর থেকে টাকা ধার নিয়েও ফেরত না দেওয়ায় মাসের মাঝখানে কপর্দকহীন অবস্থা হয় সাহিলের। সম্প্রতি তাঁর কথা সমাজ মাধ্যমে জানিয়েছেন প্রিয়দর্শিনী নামে এক তরুণী।
প্রিয়দর্শিনী জানিয়েছেন, দিন কয়েক আগে অনলাইনে খাবার সরবরাহ অ্যাপে খাবার অর্ডার করেছিলেন। তবে খাবার পৌঁছয় কিছুটা দেরিতে। তিনি সে কথা সরবরাহকারী অ্যাপের প্রতিনিধি জানাবেন বলে বাইরে বেরিয়ে দেখেন, তাঁর বাড়ির চৌকাঠে কিছুটা বিধ্বস্ত অবস্থায় বসে পড়েছেন সরবরাহকারী। প্রিয়দর্শিনী তাঁর নাম জিজ্ঞাসা করেন। কোনও অসুবিধা হচ্ছে কি না জানতে চান। তার জবাবেই সাহিল তাঁকে জানান, তিনি ৩ কিলোমিটার পথ হেঁটে খাবার সরবরাহ করতে এসেছেন, তাই ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন।
প্রিয়দর্শিনী জানিয়েছেন, তিনি ওই যুবককে জল খেতে দেন। কেন হেঁটে আসতে হয়েছে তা জানতেও চান। তার পরেই সাহিল নিজের সমস্যার কথা জানান তাঁকে। সাহিল বলেন, গত কয়েক দিন ধরে শুধু জল খেয়েই পেট ভরাচ্ছেন তিনি। খাবার পিঠে বয়ে নিয়ে গেলেও নিজের খাবার কেনার পয়সা নেই তাঁর। এ পর্যন্ত বাইকে জ্বালানি ছিল। কিন্তু এখন তা-ও শেষ হয়ে গিয়েছে। নতুন করে জ্বালানি ভরার অর্থও তাঁর কাছে নেই। তিনি এখানে একটু জিরিয়ে নিচ্ছিলেন, কারণ তাকে দ্রুত আরও একটি খাবার সরবরাহ করতে যেতে হবে। ১২টার মধ্যে সেই কাজ শেষ করতে না পারলে তাঁকে অনেক দূরে অর্ডার পৌঁছতে দেওয়া হবে। আর যে হেতু তাঁর বাইক নেই, তাই তিনি সেই কাজ করতে পারবেন না।
প্রিয়দর্শিনী জানিয়েছেন, সাহিল তাঁকে এর পর জানান, তিনি স্নাতক পাশ করেছেন, এমনকি বহুজাতিক সংস্থায় কাজ করার অভিজ্ঞতাও রয়েছে। তাঁর সন্ধানে কি কোনও ভাল চাকরি রয়েছে? সাহিল বলেন, অন্য একটি ভাল কাজ পেলে তাঁর জীবনযাপন কিছুটা সহজ হতে পারে। এর পরেই সাহিলের কথা সমাজমাধ্য়মে পোস্ট করে জানান প্রিয়দর্শিনী। তাঁর স্কুল-কলেজের রেজাল্ট এবং চাকরির অভিজ্ঞতার প্রমাণপত্র লিঙ্কডইনে পোস্ট করে নেটাগরিকদের আবেদন করেন।
পরে প্রিয়দর্শিনী জানিয়েছেন, সে দিন তিনি সাহিলকে খাবার জন্য ৫০০ টাকা দিয়েছিলেন। পরে নেটাগরিকদের অনেকেই সাহিলের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠান। এমনকি, দিন কয়েক পরে সাহিল একটি অফিসে কাজও পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। সাহিলের এই ঘটনাটিতে অনেকেই সাধুবাদ জানিয়েছেন প্রিয়দর্শিনীকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy