প্রজাতন্ত্র দিবসে প্রধানমন্ত্রী। রবিবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।
গত বছর লোকসভা নির্বাচনের প্রচারের কেন্দ্রে ছিল সংবিধান। ২০২৫ সালের প্রজাতন্ত্র দিবসেও দেখা গেল সেই সংবিধান নিয়ে যুযুধান দু’পক্ষ, শাসক বিজেপি এবং বিরোধী কংগ্রেসকে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যেখানে প্রজাতন্ত্র দিবসের সকালে সংবিধান প্রণেতাদের শ্রদ্ধা নিবেদন করলেন, সেখানে কংগ্রেস মনে করাল, মোদী জমানাতেই সবচেয়ে বিপদে সংবিধান।
প্রজাতন্ত্র দিবসের সকালে দেশের সংবিধানের আদর্শ রক্ষার বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী। দিল্লির কর্তব্যপথে কুচকাওয়াজ শুরুর প্রাক্কালে এক্স হ্যান্ডলে দেশবাসীকে প্রজাতন্ত্র দিবসের শুভেচ্ছা জানালেন মোদী। তিনি লেখেন, ‘প্রজাতন্ত্রের গৌরবময় ৭৫টি বর্ষ উদ্যাপন করছি আমরা। যাঁরা আমাদের দেশের সংবিধান তৈরি করেছেন, সেই সকল মহিলা ও পুরুষের সামনে মাথা নত করছি। তাঁরা নিশ্চিত করেছেন যাতেআমাদের দেশ গণতন্ত্র, মর্যাদা এবং ঐক্যের পথে চলে। সংবিধানের আদর্শ রক্ষার পথকে প্রজাতন্ত্র দিবসের এই উদ্যাপন আরও দৃঢ় করবে এবং সর্বোপরি দেশের উন্নতির পথপ্রশস্ত করবে।’
প্রধানমন্ত্রীর কথায়, “ভারতের জাতিগত, ভাষাগত এবং ধর্মীয় বৈচিত্র একটি অমূল্য সম্পদ, যা আমাদের একতাবদ্ধ করে রাখে। দেশের উন্নতির জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে, আমরা সকলেই একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং সংবিধানের প্রতি পূর্ণ আস্থাশীল থাকি। কারণ ভারতের সংবিধান শুধু একটি আইন সংকলন নয়, এটি আমাদের সমাজের নৈতিক ভিত্তিও বটে।” প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, সরকারের লক্ষ্য হবে দেশের প্রতিটি কোণায় এই আদর্শগুলি প্রতিষ্ঠিত করা, যাতে উন্নয়ন, শান্তি ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা যায়।
প্রজাতন্ত্র দিবসে সংবিধানকেই অস্ত্র করে সরকারকে বিঁধেছে কংগ্রেস। প্রজাতন্ত্র দিবসে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে। মোদী সরকারকে কাঠগড়ায় তুলে তাঁর বক্তব্য, ভারতীয় সংবিধানের সব রক্ষাকর্তাই আজ বিপন্ন। কংগ্রেস সভাপতির বার্তা, ‘মোদী সরকার সংবিধানের সব পবিত্র প্রহরীকে বিপন্ন করে তুলেছে। ধর্মীয় মৌলবাদের আগ্রাসনে সমাজে বিভাজন ছড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। সংখ্যালঘু, দলিত, অনগ্রসর এবং গরিবদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। ধর্মনিরপেক্ষদের গোয়েবেলীয় ধাঁচে বদনাম করা হচ্ছে।’ কংগ্রেস সভাপতির দাবি, এই মুহূর্তে সংবিধানের মূল্যবোধ রক্ষা করা জরুরি। তাঁর বিবৃতিতে মণিপুর প্রসঙ্গও উঠেছে।
গত এক বছর ধরে বিরোধীদের অভিযোগ, মোদীর আমলে সংবিধান বিপদে। তারা চব্বিশের লোকসভার আগে সফল ভাবে উত্তরপ্রদেশ-সহ বিভিন্ন রাজ্যের মানুষের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দিতে পেরেছে যে কেন্দ্রে চারশোর বেশি আসন নিয়ে মোদী-অমিত শাহেরা ক্ষমতায় ফিরলে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার জেরে তাঁরা সংবিধান বদলে দিতে পারবেন। সংসদের ভিতরে এবং বাইরে বিজেপি-র বিরুদ্ধে প্রচারে বার বার সংবিধান তুলে ধরে নিজের অবস্থান জানিয়েছেন রাহুল গান্ধী। সেই অভিযোগ প্রজাতন্ত্র দিবসেও প্রকারান্তরে তুলে ধরলেন কংগ্রেস সভাপতি।
আজ দিল্লির ‘ন্যাশনাল ওয়ার মেমোরিয়াল’-এ শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী। এর পরে, তিনি রাজপথে অনুষ্ঠিত কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ করেছেন, যেখানে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রবোও সুবিয়ান্তো প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বায়ুসেনার এমআই-১৭ হেলিকপ্টার থেকে পুষ্পবৃষ্টি করা হয়। ‘সোনালি ভারত- ঐতিহ্য এবং বিকাশ’— এই থিম এ বারের ৭৬ তম প্রজাতন্ত্র দিবস উদ্যাপনের। সেই থিমের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিশেষ পাগড়ি পরেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সোনালি ভারতের চিহ্ন হিসেবে তাঁর পাগড়িতে ছিল কাঁচা সোনার উজ্জ্বল হলুদ রং। লাল রঙের ছোঁয়াও ছিল প্রধানমন্ত্রীর পাগড়িতে।
স্বাধীনতা দিবস হোক বা প্রজাতন্ত্র দিবস— প্রত্যেকটি জাতীয় অনুষ্ঠানেই নজর কাড়ে প্রধানমন্ত্রীর পোশাক। বিশেষত মোদী কেমন পাগড়ি পরছেন, সেই নিয়ে চলে চুলচেরা বিশ্লেষণ। প্রধানমন্ত্রীর পাগড়ির নেপথ্যে কোনও রাজনৈতিক বার্তা রয়েছে কিনা, আলোচনা হয় সেই নিয়েও। তাই প্রতিবারই নতুন ধরনের সাজে এই বিশেষ দিনগুলি পালন করেন তিনি। উল্লেখ্য, গত বছর প্রজাতন্ত্র দিবসে মোদীর সাজে ছিলগুজরাতি ছোঁয়া। বাঁধনির পাগড়ি বা সাফা পরে উপস্থিত হয়েছিলেন তিনি। সঙ্গে সাদা শার্ট এবং খয়েরি জওহর কোট। আবার ৭৪ তম প্রজাতন্ত্র দিবসে রাজস্থানি সাফা পরেছিলেন। প্রসঙ্গত, ২০১৪ সাল থেকেই স্বাধীনতা দিবসে নজর কেড়েছে প্রধানমন্ত্রীর পাগড়ি। গত ১০ বছরে ১০টি আলাদা রকমের পাগড়ি পরে পতাকা উত্তোলন করেছেন মোদী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy