মহম্মদ রফি বাট
উধাও হয়ে গিয়েছিলেন শুক্রবার। তাঁকে খুঁজে বার করার দাবিতে উত্তাল হয়েছিল কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়। শেষ পর্যন্ত কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মহম্মদ রফি বাটের মোবাইলের সূত্র ধরেই দক্ষিণ কাশ্মীরের শোপিয়ানে হিজবুল জঙ্গিদের ডেরায় পৌঁছে গেল যৌথ বাহিনী। সদ্য হিজবুলে যোগ দেওয়া অধ্যাপক বাটকে আত্মসমর্পণে রাজি করাতে পারেননি তাঁর পরিবারের সদস্যেরাও। ফোনে বাবা, মা, ভাই, স্ত্রীর কাছে ক্ষমা চেয়ে তিনি বলেন, ‘‘তোমাদের আঘাত দিয়ে থাকলে ক্ষমা করে দিয়ো। কিন্তু আত্মত্যাগের পথ ছেড়ে ফিরতে পারব না।’’
দক্ষিণ কাশ্মীরের শোপিয়ানে ওই সংঘর্ষে নিহত হয়েছে আরও চার জঙ্গি। তাদের মধ্যে রয়েছে হিজবুল কম্যান্ডার সাদাম পাদের। বাহিনী-জনতা সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন ছ’জন স্থানীয় বাসিন্দা।
কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিদ্যার শিক্ষক বছর চৌত্রিশের মহম্মদ রফি বাটের বা়ড়ি গান্ধেরবাল জেলার চুনডিনা গ্রামে। ধর্মের প্রতি অনুরাগ থাকলেও মৌলবাদ বা জঙ্গি সংগঠনের প্রতি তাঁর আকর্ষণের কথা জানা ছিল না কারও। ২০১৫ সালে বিয়ে করেছিলেন তিনি।
শুক্রবারও বাবা, মা ও স্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন রফি। কিন্তু সে দিনের নমাজের পরে আর তাঁর খোঁজ পাওয়া যায়নি। নিখোঁজ শিক্ষককে খুঁজে বের করার দাবিতে বিক্ষোভ হয় কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য খুরশিদ আনরাবি জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের ডিজি এস পি বৈদ্যকে চিঠি লিখে রফিকে দ্রুত খুঁজে বের করার বিষয়ে সাহায্য চান। ডিজি জানান, এই বিষয়ে যত দ্রুত সম্ভব পদক্ষেপ করবে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, গতকাল সারা দিন রফির মোবাইল বন্ধ ছিল। রাত সাড়ে এগারোটা হঠাৎ সেই মোবাইল মিনিট তিনেকের জন্য ‘অন’ করা হয়। পুলিশ জানতে পারে, মোবাইলটি শোপিয়ানের জাইনাপোরায় বাদিগামের কাছে রয়েছে। ফোনের ‘কললিস্ট’ পরীক্ষা করে গোয়েন্দারা বুঝতে পারেন, গত কয়েক দিনে হিজবুল জঙ্গিদের সঙ্গে কথা বলছিলেন তিনি। তখন থেকেই ওই শিক্ষকের সঙ্গে জঙ্গিদের যোগাযোগ নিয়ে খোঁজখবর করতে শুরু করে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা।
আজ ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ বাদিগামের একটি এলাকা ঘিরে ফেলে সেনা ও পুলিশ। মহম্মদ রফি বাটের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ওই এলাকার দিকে রওনা দেয় পুলিশের গাড়ি। লাউডস্পিকারে জঙ্গিদের আত্মসমর্পণ করতে বলে বাহিনী। রফির পরিজনেরাও ফোনে বার বার তাঁকে আত্মসমর্পণ করতে বলেন। তবে তাতে কাজ হয়নি।
হিজবুল জঙ্গি বিলাল বাহিনীর দিকে গুলি ছুড়লে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষে এক সেনা ও দু’জন পুলিশকর্মী আহত হন। নিহত জঙ্গিদের মধ্যে সাদাম পাদের হিজবুল কম্যান্ডার বুরহান ওয়ানির ঘনিষ্ঠ ছিল। এর ফলে বুরহানের দলের আর কোনও সদস্য অবশিষ্ট রইল না।
সংঘর্ষের খবর পেয়ে শোপিয়ান ও কুলগামে বাহিনীকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়তে শুরু করেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রথমে কাঁদানে গ্যাস, ছররা ও পরে গুলি চালাতে বাধ্য হয় বাহিনী। গুলিতে দুই ১৭ বছরের কিশোর-সহ ছ’জন স্থানীয় বাসিন্দা নিহত হয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের মৃত্যুতে দুঃখপ্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতির বার্তা, ‘‘বন্দুক সমস্যার সমাধান করতে পারবে না।’’ বিরোধী ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লার মতে, ‘‘কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলেই কাশ্মীরের যুবকেরা ভারতের মূলস্রোতে ফিরবেন বলে মত অনেকের। শিক্ষক রফি বাটের ঘটনাই প্রমাণ করছে সেটা সত্য নয়।’’
বস্তুত বুরহান ওয়ানি বা সাদাম পাদেরের মতো তথাকথিত ‘পোস্টার বয়’দের তুলনায় রফি বাটের মতো শিক্ষিত জঙ্গিদের নিয়েই অনেক বেশি চিন্তিত কেন্দ্র ও রাজ্যের কর্তারা। বিরোধী নেতাদের মতে, এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে কেবল চাকরি বা উন্নয়ন দিয়ে কাশ্মীরের সমস্যা মেটানো যাবে না। কাশ্মীরিদের বিচ্ছিন্নতার মূল অনেক গভীরে। সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান খুঁজলে তবেই সেই মূলে পৌঁছনো সম্ভব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy