Advertisement
০৯ জানুয়ারি ২০২৫

অর্থ মন্ত্রকেই নগদ নেই, তাই জুন মাসের বেতন দেরিতে

কেন্দ্রের সব খরচ দেখভালের দায়িত্ব যার হাতে, অর্থ মন্ত্রকের অধীনস্থ সেই ব্যয় দফতরেই এমন নির্দেশিকা জারি হয়েছে। মোদী সরকারের জন্য প্রবল অস্বস্তির কারণ হল, ওই ‘গোপন’ নির্দেশিকা ফাঁস হয়ে গিয়েছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৯ ০৩:৪০
Share: Save:

অর্থ মন্ত্রকেই নগদ টাকার অভাব। তাই কেন্দ্রীয় সরকারের কিছু অফিসারের জুন মাসের বেতন মিলতে দেরি হবে বলে নির্দেশিকা জারি করল অর্থ মন্ত্রক।

কেন্দ্রের সব খরচ দেখভালের দায়িত্ব যার হাতে, অর্থ মন্ত্রকের অধীনস্থ সেই ব্যয় দফতরেই এমন নির্দেশিকা জারি হয়েছে। মোদী সরকারের জন্য প্রবল অস্বস্তির কারণ হল, ওই ‘গোপন’ নির্দেশিকা ফাঁস হয়ে গিয়েছে। শনিবার সকাল থেকেই তা হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়ে পড়ে। দেশ জুড়েই কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে বেতন নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়। স্বাধীনতার পরে এমন ঘটনা আর ঘটেছে বলে মনে করতে পারছেন না সরকারি আমলারা।

অস্বস্তির মুখে অর্থ মন্ত্রকের ব্যাখ্যা, অন্তর্বর্তী বাজেটে অনুমোদিত টাকার থেকে যাতে খরচ বেশি না হয়ে যায়, তার জন্যই এই সাময়িক নির্দেশিকা। তা-ও শুধু ব্যয় দফতরের অধীন একটি নির্দিষ্ট বিভাগ, ‘কন্ট্রোলার অব জেনারেল অ্যাকাউন্টস’ এবং পাবলিক ফিনান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমস (পিএফএমএস) প্রোজেক্ট সেলের কর্মীদের জন্য প্রযোজ্য। সেই বিভাগেও শুধু গ্রুপ এ এবং গ্রুপ বি, অর্থাৎ উঁচু পদে থাকা অফিসারদের জন্য এই নির্দেশিকা প্রযোজ্য। গ্রুপ সি, ও তার নিচু তলার কর্মচারীদের জুন মাসের বেতন ঠিক সময়েই মিলবে।

কিন্তু কেন এই দশা? সংবিধান অনুযায়ী, সরকারি কোষাগার থেকে টাকা তোলার জন্য কেন্দ্রকে সংসদের অনুমতি নিতে হয়। প্রথা অনুযায়ী, লোকসভা ভোটের বছরে বিদায়ী সরকার অন্তর্বর্তী বাজেট পেশ করে নতুন সরকার গঠন হওয়া পর্যন্ত খরচ চালানোর মতো টাকা কোষাগার থেকে তোলার অনুমতি নিয়ে রাখে। গত ফেব্রুয়ারিতে সেটাই করেছিলেন ভারপ্রাপ্ত অর্থমন্ত্রী পীযূষ গয়াল। ওই বাজেটে এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত খরচ চালানোর জন্য ৩৪.১৭ লক্ষ কোটি টাকার অনুমোদন নেওয়া হয়।

অর্থ মন্ত্রকের যুক্তি, এখন খরচ সেই সীমা পেরিয়ে যাচ্ছে বলেই উচ্চপদস্থ অফিসারদের জুনের বেতন মিলতে দেরি হবে। ৫ জুলাই পূর্ণাঙ্গ বাজেট। সংসদে তা পাশ হলেই, পুরো বছরের খরচের টাকা কোষাগার থেকে তোলার অনুমতি মিলে যাবে। বকেয়া বেতনও মিটিয়ে দেওয়া হবে। ওই গোপন নির্দেশিকা ছড়ালে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও সতর্ক করেছে সরকার। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের সংগঠনের বক্তব্য, ৫ জুলাই বাজেট পেশ হলেই তা সঙ্গে সঙ্গে সংসদে পাশ হয়ে যাবে না। তাতে আরও কয়েক দিন দেরি হবে।

তাৎপর্যপূর্ণ হল, ‘কন্ট্রোলার অব জেনারেল অ্যাকাউন্টস’-ই সরকারি খরচাপাতির হিসেব রাখে। বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বরাদ্দ অর্থের কোন রাজ্যে কত টাকা ব্যয় হচ্ছে, তাতে নজর রাখেন পিএএফএমএস প্রোজেক্ট সেলের আধিকারিকরা। সেই দফতরের বেতন কেন হিসেবের বাইরে চলে গেল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

অর্থ মন্ত্রকের একটি সূত্রের ব্যাখ্যা, ওই নির্দেশিকা থেকে স্পষ্ট যে আধিকারিকরা অন্তর্বর্তী বাজেটে অনুমোদিত টাকার বেশি খরচ করে ফেলেছিলেন। ফলে নগদে টান পড়েছে। তাই ব্যয়সচিব নিজে উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের জুন মাসের বেতন পরে মেটানোর সিদ্ধান্ত নেন।

আমলা মহলে প্রশ্ন, অন্যান্য মন্ত্রকেও কি এমন নির্দেশিকা জারি হতে চলেছিল? একটি নির্দেশিকা ফাঁস হয়ে যাওয়ায় কি সরকার তা থেকে পিছু হটল? কারণ, শুধু একটি মন্ত্রক বা একটি দফতরের খরচ বরাদ্দের সীমা পেরিয়ে যাচ্ছে, এমনটা অস্বাভাবিক।

আরও আশঙ্কার কথা হল, যদি বেতন দেওয়ারই অর্থে টানাটানি পড়ে, তা হলে উন্নয়নমূলক প্রকল্পের খরচেও কি রাশ টানা হচ্ছে? অর্থনীতিবিদদের বক্তব্য, এমনিতেই আর্থিক বৃদ্ধির হার কমতির দিকে। এর পর সরকারি খরচে রাশ টানলে অর্থনীতির গতি আরও কমে যেতে পারে।

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।

অন্য বিষয়গুলি:

Finance ministry salary
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy