Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
Farmers Protest

কে এই দীপ সিধু? লালকেল্লার পতাকা-কাণ্ডের পিছনে ষড়যন্ত্র দেখছেন কৃষক নেতারা

মঙ্গলবার আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ হিংসাত্মক রূপ নেওয়ার পিছনে উঠে এসেছে পঞ্জাবি গায়ক-অভিনেতা দীপ সিধুর ইন্ধনের অভিযোগ।

দীপ সিধু।

দীপ সিধু। ছবি: সংগৃহীত।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ জানুয়ারি ২০২১ ০৩:৪০
Share: Save:

প্রজাতন্ত্র দিবসে দিল্লিতে কৃষকদের ট্র্যাক্টর র‌্যালি ঘিরে কার্যত রণক্ষেত্রে পরিণত হল রাজধানী দিল্লি। বিক্ষোভকারীদের পুলিশের লাঠি-কাঁদানে গ্যাস, পুলিশের উপর আন্দোলনকারীদের পাল্টা হামলা, ট্র্যাক্টর উল্টে এক কৃষকের মৃত্যু, জখম ৮৬ জন পুলিশকর্মী, সম্পত্তি নষ্টের অভিযোগ, লালকেল্লায় পতাকা উত্তোলন— মঙ্গলবার আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ হিংসাত্মক রূপ নেওয়ার পিছনে উঠে এসেছে পঞ্জাবি গায়ক-অভিনেতা দীপ সিধুর ইন্ধনের অভিযোগ। গোটা ঘটনায় ষড়যন্ত্রের ছাপ দেখছেন আন্দোলনরত কৃষক ইউনিয়নের নেতা তথা নাগরিক সমাজের একাংশ। কিন্তু কে এই দীপ সিধু?

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়া টুডে’-র একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, পঞ্জাবের মুখ্‌তসর জেলায় ১৯৮৪ সালে জন্ম সিধুর। আইন নিয়ে পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে স্বল্প সময়ের জন্য তা-ই পেশা করেছিলেন সিধু। এর পর ম়ডেলিংয়ের দিকে ঝোঁকেন। ‘কিংফিশার মডেল হান্ট’ প্রতিযোগিতা জিতে অভিনয় জগতে পা রাখেন ২০১১৫-তে। সে বছর ‘রামতা যোগী’ নামে একটি পঞ্জাবি ফিল্মে আত্মপ্রকাশ করেন সিধু। তবে ফিল্মি পর্দায় সাফল্য আসে তার বছর তিনেক পর। ’১৮-তে মুক্তি পায় ‘জোড়া ‘দশ নম্বরিয়া’। ওই পঞ্জাবি ফিল্মে গ্যাংস্টারের চেহারায় সিধুকে দেখা গিয়েছিল মুখ্য ভূমিকায়। এর পর খান তিনেক ফিল্মেও অভিনয় করেছেন তিনি। তবে ২০১৯ সাল থেকে সিধুকে রাজনীতির আঙিনায়ও দেখা যেতে শুরু করে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় সিধুর একের পর এক ছবি পোস্ট এবং রি-পোস্ট হতে থাকে। তারই একটি ছবিতে দেখা গিয়েছে, ’১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী তথা অভিনেতা সানি দেওলের প্রচারসঙ্গী হিসেবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন সিধু। গুরুদাসপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছিলেন সানি। অন্য একটি টুইটে সানি এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পাশেও সিধু রয়েছেন। ইউটিউবার ধ্রুব রাঠী সেই ছবিটি পোস্ট করেছেন। একটি ছবিতে দেখা গিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রয়েছেন সিধুর পাশে। এই দু’টি ছবিই টুইট করেছেন আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণও।

বিজেপি-র হেভিওয়েটদের সঙ্গে তাঁর ওঠাবসার মাঝেই গত বছর কৃষক আন্দোলনেও শামিল হন সিধু। ২৫ সেপ্টেম্বর দিল্লি-হরিয়ানা সীমানায় শম্ভু এলাকায় তিন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে শামিল হয়েছিলেন বহু সমাজকর্মী-আন্দোলনকারী তথা শিল্পী। ওই বিক্ষোভে কৃষকদের সঙ্গে ধর্নায় বসেন সিধুও। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের ফলোয়ারদের উদ্দেশেও কৃষক আন্দোলনের পক্ষে বিভিন্ন বক্তব্য করেন তিনি। শম্ভু সীমানায় পাকাপাকি ভাবে ধর্নায় বসার কথাও সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘোষণা করেছিলেন। তবে সে সময় থেকেই এই আন্দোলনে সিধুর শামিল হওয়া নিয়ে আপত্তি তুলেছিল বহু কৃষক ইউনিয়ন। সোশ্যাল মিডিয়ায় মোদী-শাহের সঙ্গে একসঙ্গে থাকা সিধুকে ‘আরএসএসের এজেন্ট’ বলেও তকমা দেন তারা।

কৃষক আন্দোলনের একাংশ কাছে ব্রাত্য সিধুর সঙ্গে সে সময় থেকে নাকি দূরত্ব বাড়াতে শুরু করেন বিজেপি সাংসদ সানিও। ঘটনাচক্রে, প্রজাতন্ত্র দিবসে লালকেল্লায় পতাকা-কাণ্ড নিয়ে টুইটারে দুঃখপ্রকাশ করেছেন সানি। মঙ্গলবার টুইটারে সানির সাফ কথা, ‘৬ ডিসেম্বরই টুইটারে জানিয়েছিলাম, আমি বা আমার পরিবারের কারও দীপ সিধুর প্রতি আগ্রহ নেই’।

মঙ্গলবার লালকেল্লায় পতাকা উত্তোলন করার পর নিজের পক্ষে সাফাই দিয়েছেন সিধু। ফেসবুকে একটি লাইভ ভিডিয়োবার্তায় তিনি বলেছেন, ‘‘নিজেদের গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রয়োগ করে লালকেল্লার কেবলমাত্র নিশান সাহিবের পতাকা (শিখ সম্প্রদায়ের ধর্মীয় পতাকা) উত্তোলন করেছি আমরা। সেখান থেকে জাতীয় পতাকা সরানো হয়নি।’’ তবে সিধুর ভূমিকা নিয়ে ইতিমধ্যেই তদন্তের দাবি তুলেছেন আন্দোলনকারী তথা স্বরাজ ইন্ডিয়ার প্রধান যোগেন্দ্র যাদব। তিনি বলেন, ‘‘দীপ সিধু মাইক হাতে কী ভাবে লালকেল্লায় পৌঁছলেন, তা তদন্ত করে দেখা উচিত।’’

কৃষকদের র‌্যালিতে ঘিরে হিংসায় ইন্ধনেরও অভিযোগ উঠেছে সিধুর বিরুদ্ধে। তাঁর ভূমিকায় বিজেপি তথা আরএসএসের হাত রয়েছে বলেও দাবি করেছেন কৃষক ইউনিয়নের নেতারা। ৪১টি কৃষক ইউনিয়ন যে ছাতার তলায় দাঁড়িয়ে আন্দোলন চালাচ্ছেন সেই সংযুক্ত কিসান মোর্চার দাবি, গোটা ঘটনায় ‘দুষ্কৃতীদের’ হাত রয়েছে। অন্য দিকে, ভারতীয় কিসান ইউনিয়ন (বিকেইউ)-এর প্রধান গুরনাম সিংহের অভিযোগ, ‘‘দীপ সিধুই আন্দোলনকারীদের উস্কানি দিয়েছিলেন। তিনিই তাঁদের বিপথে চালিত করেন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

BJP RSS Delhi Farmers Protest Deep Sidhu
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE