নরেন্দ্র মোদী। ছবি পিটিআই।
নয়া কৃষি আইনের প্রতিবাদে ট্রাক্টর পুড়িয়ে বিরোধীরা কৃষকদেরই অপমান করেছেন বলে আক্রমণ শানালেন নরেন্দ্র মোদী। নাম না-করেও নিশানা করলেন গাঁধী পরিবারকে। দাবি করলেন, ক্ষমতা থেকে দূরে থাকতে হচ্ছে বলে হতাশাতেই সমস্ত বিষয়ে ‘বিরোধিতার জন্যই বিরোধিতা’ করছে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধীর অবশ্য বক্তব্য, চাষিদের বুকে ছোরা বসিয়েছে কেন্দ্র। তাই দেশের স্বার্থেই এই আইনের বিরুদ্ধে লড়াই জারি থাকবে। নয়া কৃষি আইনের সমালোচনায় এ দিন সরব হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর মতে, চাষিদের সর্বনাশ করছে এই সরকার। লোকসভা ও রাজ্যসভায় বিল সমর্থনকারী সাংসদদের সামাজিক ভাবে বয়কটের ডাক দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে সারা ভারত কিষান সমন্বয় কমিটি।
মঙ্গলবার উত্তরাখণ্ডের জন্য এক গুচ্ছ প্রকল্প ঘোষণা করেছেন মোদী। জানিয়েছেন, ২ অক্টোবর থেকে একশো দিনের মধ্যে দেশের সমস্ত স্কুল ও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে পাইপবাহিত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়াকে পাখির চোখ করছে তাঁর সরকার। ওই ভিডিয়ো-অনুষ্ঠানেই ইন্ডিয়া গেটের সামনে ট্রাক্টর পোড়ানোর সরাসরি উল্লেখ না-করেও প্রধানমন্ত্রী বলেন, “চাষিরা যে সামগ্রী বা উপকরণের পূজা করেন, তা পুড়িয়ে আসলে কৃষকদেরই অপমান করেছেন বিরোধীরা।” কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বলের প্রশ্ন, “এনডিএ-র সব থেকে পুরনো শরিক অকালি দল জোট ছাড়ল কেন? মোদীজি, তারাও কি চাষিদের অপমান করছে?”
তৃণমূল নেত্রী মমতা বলেন, “কৃষকদের সর্বনাশ করে দিল। আলু, পেঁয়াজ, চাল, তেল— এ সব ছিল নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস। সব বাদ দিয়ে দিয়েছে। এর পর ফড়েরা এসে সব নিয়ে চলে যাবে। চাষি নিজের চাষের জিনিস খেতে পারবে না, এমন অবস্থা হবে। এই অবস্থায় সব কালোবাজারি করবে। সর্বনাশ করছে। কৃষকদের বিষয়টি মানুষকে বোঝাতে হবে।” কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গাঁধী রাজ্য স্তরে আইন করে কেন্দ্রীয় কৃষি আইনের কুফল আটনোর প্রস্তাব দিয়েছেন। মমতা এ দিন বলেন, “কৃষি বিভাগ থেকে আলাদা করে মুখ্যসচিবের সঙ্গে কথা বলে একটা পরিকল্পনা নিতে হবে। আমরা কী করব এর পরে, সেই কৌশল ঠিক করতে হবে।”
সারা দেশের জনা দশেক কৃষকের সঙ্গে ভিডিয়ো-আলাপচারিতার পরে রাহুল বলেছেন, “জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে প্রথম আমিই রুখে দাঁড়িয়েছিলাম। তাতে গ্রেফতার হতে হয়েছিল। এই কৃষি আইনের বিরুদ্ধেও লড়ব। দেশের স্বার্থেই তা করা জরুরি।” তাঁর কটাক্ষ, “নোটবন্দি এবং তড়িঘড়ি জিএসটি চালুর সময়েও আমজনতার ভাল হবে বলে দাবি করেছিল মোদী সরকার। কিন্তু এ বার তারা চাষিদের বুকে একেবারে ছোরা বসিয়ে দিয়েছে।” কৃষি আইনের বিরোধিতা আরও উচ্চগ্রামে তুলে নিয়ে যেতে রাহুলের পঞ্জাব যাওয়া প্রয়োজন কি না, সে বিষয়ে ভাবনা-চিন্তা করছে কংগ্রেস।
প্রধানমন্ত্রীর দাবি, নোটবন্দি-জিএসটি থেকে শুরু করে রাফাল যুদ্ধবিমান কেনা কিংবা আন্তর্জাতিক যোগ দিবস পালন থেকে রামমন্দিরের ভূমি পূজা— সমস্ত বিষয়ে লাগাতার বিরোধিতা করে চলেছে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। তারা সেনায় এক পদ-এক পেনশন নিয়ে খুশি নয়। এমনকি প্রশ্ন তুলতে ছাড়েনি সার্জিকাল স্ট্রাইক নিয়েও। মোদীর মতে, চার প্রজন্ম ধরে দেশ শাসন করা একটি দল অন্যান্য দলের কাঁধে বন্দুক রেখে যে কোনও বিষয়ে স্রেফ বিরোধিতার জন্যই বিরোধিতা করে চলেছে। কারণ, মাত্র কয়েক বছর ক্ষমতা থেকে দূরে থাকতে হওয়াতেই তারা হতাশ। মোদীর মতে, এই অর্থহীন বিরোধিতা সেই নিরাশার প্রতিফলন। চাষিরা নিজেদের ইচ্ছেয় ফসল বেচতে পারলে, বেআইনি রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাতেই পথে নেমেছেন বিরোধীরা।
কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলের নেতারা বলছেন, সেনার শৌর্য নিয়ে কখনও প্রশ্ন তোলেননি তাঁরা। আপত্তি তুলেছেন, তাকে রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহারের চেষ্টার বিরুদ্ধে। তা ছাড়া, নোটবন্দি, তড়িঘড়ি জিএসটি চালুর মতো পদক্ষেপের কারণে দেশের সাধারণ মানুষকে যা খেসারত দিতে হয়েছে, তাতে প্রতিবাদ করা কি ভুল? কৃষি আইনের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলাও চাষিদের স্বার্থে জরুরি। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের অবশ্য ফের দাবি, এপিএমসি আইন বাতিলের প্রতিশ্রুতি ছিল কংগ্রেসের নির্বাচনী ইস্তেহারেই।
এরই মধ্যে সারা ভারত কিষান সমন্বয় কমিটি জানিয়েছে, ২ অক্টোবর থেকে ঘোষিত কর্মসূচিতে বিল সমর্থনকারী সাংসদদের সামাজিক ভাবে বয়কটের ডাক দেবে তারা। ১৪ অক্টোবর পালিত হবে এমএসপি দিবস। ২৬-২৭ অক্টোবর ডাক দিল্লি চলো অভিযানের। অভিযোগ উঠেছে, উত্তরপ্রদেশের কয়েক জন চাষি হরিয়ানায় ফসল বিক্রি করতে গেলে, তাঁদের ফিরিয়ে দিয়েছে ওই রাজ্যের বিজেপি সরকারই! প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে আর প্রধানমন্ত্রীর মুখে দেশের যে কোনও জায়গায় ফসল বিক্রির সুবিধার কথা শোনার মানে কী?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy