Advertisement
২১ ডিসেম্বর ২০২৪
R G Kar Hospital Incident

‘আশা করি, আপনারা দ্রুত ন্যায় বিচার পাবেন’, আরজি করের নির্যাতিতার পরিজনদের উদ্দেশে হাথরসের পরিবার

হাথরস জেলা আদালতে তিন অভিযুক্ত বেকসুর খালাস পাওয়ার পরে হাই কোর্টে গিয়েছে নির্যাতিতার পরিবার। নির্যাতিতার ভাই ফোনে বলেন, ‘‘এই করে চারটে বছর কেটে গেল। এখনও ন্যায় বিচার পেলাম না।’’

Representative Image

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

চৈতালি বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৬:১৮
Share: Save:

১৪ সেপ্টেম্বর চার বছর অতিক্রম করে যাবে হাথরস গণধর্ষণের ঘটনা। কিন্তু চার বছর পরেও মেয়েটির পরিবার কার্যত গৃহবন্দি। মৃতার দাদার অভিযোগ, ২০২২ সালের জুলাই মাসে ইলাহাবাদ হাই কোর্ট নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও এখনও মেলেনি সরকারি চাকরি বা হাথরস জেলার বাইরে অন্যত্র ঘর। উল্টে নির্যাতিতার পরিবারের জন্য সরকারি চাকরি, ঘরের নির্দেশের বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানায় উত্তরপ্রদেশ সরকার। যদিও সুপ্রিম কোর্ট ওই আবেদন খারিজ করেছে।

পুরনো বাড়িতেই এখনও রয়েছেন নির্যাতিতার পরিবার। সর্বদা প্রহরা। জানা গেল, গ্রামের ভাঙাচোরা ঘরটিতে মোট আটটি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো রয়েছে। বাড়িতে কে ঢুকছে, কে বেরোচ্ছে— তা নথিভুক্ত করতে হয়। মৃতার ছোট ভাইয়ের বয়ানে, ‘‘আমরাই সিআরপিএফ-এর ঘেরাটোপে আটকে রয়েছি। যেন আমরাই অপরাধী। হাথরস জেলা আদালতের রায়ে মুক্তি পেয়ে অভিযুক্ত তিন জন দিব্যি গ্রামে ঘুরছে, জমি কিনছে, দোকানঘর করছে। আর আমাদের দুই ভাইয়ের গ্রামে কোনও কাজ নেই। কাজে গ্রামের বাইরেও যেতে পারি না আমরা। স্বাভাবিক জীবন শেষ হয়ে গিয়েছে।’’

হাথরস জেলা আদালতে তিন অভিযুক্ত বেকসুর খালাস পাওয়ার পরে ইলাহাবাদ হাই কোর্টে গিয়েছে নির্যাতিতার পরিবার। সেখানে মামলা চলছে। নির্যাতিতার ভাই ফোনে বলেন, ‘‘এই করে চারটে বছর কেটে গেল। এখনও ন্যায় বিচার পেলাম না।’’ তরুণীর দাদা বলেন, ‘‘যে সিবিআই আর জি করের চিকিৎসক মামলার তদন্ত করছে, সেই সিবিআই আমার বোনের গণধর্ষণ-খুনেও তদন্ত করেছে। আমার বোনের দোষীরা তো এখনও সাজা পেল না! আশা করি, আপনারা দ্রুত ন্যায় বিচার পাবেন।’’

তরুণীর ছোট ভাইয়ের অভিযোগ, যেখানে নিম্ন আদালতে তিন অভিযুক্ত ছাড়া পাওয়ার পরে উত্তরপ্রদেশ সরকারেরই উচ্চ আদালতে আবেদন করার কথা, সেখানে পরিবারকেই উচ্চ আদালতে আবেদন করতে হয়েছে। আর রাজ্য সরকার উচ্চ আদালতে গিয়েছে মৃতার পরিবারকে সরকারি চাকরি, ঘর দেওয়ার নিম্ন আদালতের নির্দেশের বিরোধিতায়। তবে সরকারি ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছেন তাঁরা।

তরুণীর ভাই বলেন, ‘‘আমার বড় দাদার তিনটে ছেলেমেয়ে, পাঁচ, ছয় আর সাত বছরের। আমার বোন খুন হয়েছে, চার বছর হয়ে গেল। বাচ্চাগুলো জন্মের পর থেকে স্কুলের মুখ দেখেনি। গ্রামে একটা সরকারি স্কুল আছে। কিন্তু সেখানে ওদের পাঠাতে ভয় লাগে। অভিযুক্তেরা তো গ্রামেই ঘুরছে। ওদের সমর্থকও প্রচুর। আবার, দূরের কোনও স্কুলে পড়তে পাঠাব, তার উপায় নেই। আমাদের ২৪ ঘণ্টা পুলিশি প্রহরায় আটকে থাকতে হয়। ওদের পড়াশোনা, আমাদের রোজগার সব বন্ধ। এর মধ্যে সরকারি চাকরিটাও পেলাম না।’’

ইলাহাবাদ উচ্চ আদালত নির্দেশ দিয়েছিল, ওই একঘরে করার সামাজিক পরিবেশ মৃতার পরিবারের শিশুদের জন্য ক্ষতিকর। পরিবারটিকে হাথরস জেলার বাইরে কোথাও সরকারি ভাবে পুনর্বাসন এবং পরিবারের এক জনকে সরকারি চাকরি দেওয়া হোক। কিন্তু এখনও তার কোনও ব্যবস্থা হয়নি বলে অভিযোগ তরুণীর বাবার। গত বছর সুপ্রিম কোর্ট বিষয়টি দেখতে বলার পরেও প্রশাসন কিছু করেনি বলে তাঁদের দাবি। এই বিষয়ে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের কাছে চিঠি লেখেন নির্যাতিতার বাবা। সেখানে তিনি প্রশ্ন করেন, ‘‘দলিত মানুষের জন্য ন্যায় বিচার আছে, না নেই?’’

তরুণীর ছোট ভাইয়ের অভিযোগ, ‘‘উচ্চ আদালত নির্দেশ দিয়েছে সেই ২০২২ সালে। ডিএম-এর কাছে গিয়ে এই নিয়ে চিঠি দিয়েছি। তিনি বলছেন, উপরমহল থেকে নির্দেশ না এলে ওঁর কিছু করার নেই।’’২০২০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বরে হাথরসে ১৯ বছরের দলিত তরুণীকে গণধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। ২৯ সেপ্টেম্বর দিল্লির হাসপাতালে তাঁর মৃত্যুর পর, গ্রামে দেহ এনে রাতের অন্ধকারে তড়িঘড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল যোগী আদিত্যনাথেরপুলিশের বিরুদ্ধে। উচ্চবর্ণের চাপে দীর্ঘ দিন গ্রামছাড়া ছিল দলিত পরিবার। পরে মামলা পুলিশের হাত থেকে সিবিআই-এর হাতে আসে। যদিও ‘তথ্যপ্রমাণের অভাবে’জেলার তফসিলি জাতি-জনজাতি আদালতে তিন অভিযুক্ত ২০২৩ সালের মার্চ মাসে বেকসুর খালাস পেয়ে যায়। আর এক অভিযুক্ত সন্দীপের যাবজ্জীবন হয়। আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর হাথরস মামলায় পরবর্তী শুনানি। নির্যাতিতার ভাই বলেন, ‘‘বোনের অস্থি এখনও রাখা আছে। প্রতিজ্ঞা করেছি, যে দিন বিচার পাব, সে দিন অস্থি বিসর্জন হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

R G Kar Hospital R G Kar Medical College And Hospital Incident CBI Hathras
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy