Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

পরিবারের কর্তা ‘বিদেশি’, ব্রাত্য করেছেন পড়শিরাও

ন’মাস আগে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল এক তরফা রায়ে ‘বিদেশি’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ৬৫ বছর বয়সি আনাজ ব্যবসায়ী কুমুদরামকে। পুলিশ পরে তাঁকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে জেলে পুরে দেয়।

উত্তম সাহা
শিলচর শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৮ ০৩:০০
Share: Save:

আগে কুষ্ঠরোগীদের সমাজচ্যুত করে রাখা হত। এখনও এড্স শুনলে অনেকেই এড়িয়ে চলেন। অসমের কাছাড় জেলায় আমড়াঘাটের কামাখ্যা দেবী বা যূথিকা দাসদের বাড়িতে কারও কোনও কালে কুষ্ঠরোগ হয়নি। নেই এইচআইভি সংক্রমণ বা এড্‌স। পরিবারের কারও নামে কোনও সামাজিক কলঙ্কও নেই। তবু তাঁরা ‘সমাজচ্যুত’। কারণ একটাই, ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল তাঁদের স্বামীদের ‘বিদেশি’ বলে রায় দিয়েছে। প্রতিবেশীদের বক্তব্য, কোনও ঘৃণা বা বিদ্বেষে নয়। তাঁরা আতঙ্কে ভোগেন, ‘বিদেশি পরিবার’-এর সঙ্গে মেলামেশার কথা পুলিশ জানলে যদি তাঁদেরও সন্দেহ করে!

ন’মাস আগে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল এক তরফা রায়ে ‘বিদেশি’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ৬৫ বছর বয়সি আনাজ ব্যবসায়ী কুমুদরামকে। পুলিশ পরে তাঁকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে জেলে পুরে দেয়। তখনই তাঁরা জানতে পারেন বিদেশি নোটিসের কথা। একই কথা শুনিয়েছেন ওই পাড়ার যূথিকা দাস, ‘‘স্বামীকে ধরে নিয়ে যাওয়ার আগে একবারও কেউ কোনও কাগজপত্র দেখতে চাননি। এনআরসি-র প্রথম খসড়ায় পরিবারের সকলের নাম রয়েছে, সে কথাটাও কাউকে বলার সুযোগ হয়নি।’’

কুমুদবাবুর পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, ১৯৭১ সালের ভোটার তালিকায় তাঁর নাম রয়েছে (নির্বাচক খণ্ড ১২১, সিরিয়াল নম্বর ১০১০)। এখনও তা দেখানোরই সুযোগ মেলেনি তাঁদের। আপিল মামলার শুনানি এখনও শুরুই হয়নি। এক দিন বিচারক ছুটিতে তো, অন্য দিন আইনজীবীর সমস্যা। এরই মধ্যে সর্বস্ব খুইয়ে আর্থিক সঙ্কটে পড়েছেন তাঁরা। ব্যাঙ্কে ৫০ হাজার টাকার স্থায়ী আমানত ছিল। সুদ ছেড়ে দিয়েই তা ভাঙতে হয়েছে। চারটি গরু ছিল। জলের দরে বিক্রি করতে হয়েছে। কুমুদবাবুর স্ত্রী কামাখ্যাদেবীর কথায়, ‘‘কী করব, কারও সঙ্গে কোনও কথা বলতে গেলেই টাকা লাগে।’’

আরও পড়ুন: লালজিকে খুঁজেই পেল না কম্পিউটার!

এখনও ট্রাইব্যুনালে মামলা চলছে কুমুদবাবুর চার ভাই-সহ বাড়ির মোট ১১ জনের নামে। এর মধ্যে রয়েছে তাঁর বড় ছেলেও। বাবাকে জেলে পোরার পরে সে আর রাতে বাড়িতে ঘুমোয় না। কামাখ্যাদেবীর কাছে এর চেয়েও বেশি কষ্টকর, পাড়ার কোনও সামাজিক অনুষ্ঠানে তাঁদের ডাকা হয় না। এমনকি, তাঁদের সঙ্গে তো দূরের কথা, জামাই এলে একদা ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশীরাও কথা বলেন না। যূথিকাদেবীর আর এক সমস্যা মেয়েটি মানসিক প্রতিবন্ধী। বাবাই তাঁর সব কিছু দেখভাল করতেন। বাবা না থাকায় তাকে সামলানোই কঠিন হয়ে উঠেছে। কাউকে ডেকে কথা বলবেন, তারও জো নেই।

পাড়ার মানুষ অবশ্য ওই দু’টি পরিবারকে ‘সমাজচ্যুত’ করে রাখার কথা মানতে চাননি। তবে তাঁরা যে গত ন’মাসে ওই দু’টি বাড়িতে যাননি, তা স্বীকার করেন। কেন যাননি, এক এক জনের এক এক রকম জবাব।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE