প্রতীকী ছবি।
২০১৪-র ফেব্রুয়ারিতে হোয়াটসঅ্যাপ কিনে নিয়েছিল ফেসবুক। সেই বছরই ভারতে ক্ষমতায় আসে মোদী সরকার। নরেন্দ্র মোদীর ভোটে জেতার পিছনে যে সমাজমাধ্যমে প্রচারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল, তা সর্বজনবিদিত। ফেসবুকের এ বছর অগস্টের তথ্য বলছে, গত ১৮ মাসে ফেসবুকে বিজ্ঞাপনী ব্যয়েও শীর্ষে বিজেপি। ২০১৯-এর ফেব্রুয়ারি থেকে তারা ব্যয় করেছে ৪.৬১ কোটি। একই সময়ে কংগ্রেসের ব্যয় ১.৮৪ কোটি।
কেবল স্বীকৃত প্রচারই নয়, ভোটারদের প্রভাবিত করার জন্য যে দেদার ভুয়ো খবর ছড়ানো হয় সেই অভিযোগ বার বার উঠেছে গত বছর লোকসভা নির্বাচনে। সোশ্যাল মিডিয়া বিশেষজ্ঞ পরঞ্জয় গুহঠাকুরতা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ২০১৮-র ২২ সেপ্টেম্বর রাজস্থানের কোটায় বিজেপির দলীয় সভায় অমিত শাহ বলেছিলেন, “আমরা যে কোনও বার্তাকে ভাইরাল করতে পারি, সত্যি বা মিথ্যে, টক বা মিষ্টি।” তাঁর কথায়, ‘‘ওই সভায় শাহ রসিকতার ঢঙে জানান, অখিলেশ যাদব উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন কী ভাবে বিজেপির এক সদস্য একটি ভুয়ো হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা ছড়িয়েছিলেন যে, অখিলেশ চড় মেরেছেন মুলায়মকে, যদিও বাস্তবে তখন অখিলেশ আর মুলায়ম ছিলেন ৬০০ কিলোমিটার দূরত্বে। তার পর অভিভাবকের মতো বলেন, “আমি জানি তোমরা এমন করতে পারো, কিন্তু কোরো না।”
নেতার বারণে যে ভুয়ো বার্তা ছড়ানো থামে না তার প্রমাণ যেমন মিলেছে, ভুয়ো তথ্যের ছড়িয়ে যাওয়া ঠেকাতে ফেসবুক, টুইটার, গুগলের মতো সংস্থাগুলির ভূমিকা যথাযথ কি না , উঠেছে সেই প্রশ্নও। ফেসবুকের অবশ্য বরাবর দাবি, তারা নিরপেক্ষ। দু’বছর আগের ধর্মীয় উস্কানিমূলক পোস্টের অভিযোগে তেলঙ্গানার বিজেপি বিধায়ক টি রাজা সিংহের প্রোফাইল সম্প্রতি নিষিদ্ধ করেছে ফেসবুক। পরঞ্জয়ের প্রশ্ন, ‘‘দু’বছর ধরে উনি যা যা প্রচার করেছেন তার দায় কে নেবে? ফেসবুক আর হোয়াটসঅ্যাপকে যখন অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয় রাজনীতির ফলাফলকে প্রভাবিত করার জন্য বা সমাজমাধ্যমে বিদ্বেষমূলক পোস্টের জন্য প্রাণহানি, সম্পত্তি নষ্ট হয়, তার বিচারও করতে হবে।’’
ভোট কৌশল নির্ধারণের সঙ্গে যুক্ত একটি সংস্থার এক প্রাক্তন কর্মী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলছেন, ‘‘ভোটের প্রচারের সময় একলপ্তে বহু সিম কেনা হয়। বহু ভুয়ো ফেসবুক প্রোফাইল খোলা হয়। প্রচারের জন্য চিহ্নিত জায়গার নামে গ্রুপ বা পেজ খুলে সেখানকার বাসিন্দাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সেখান থেকে তাঁদের বন্ধু তালিকায় যুক্ত হয়েও প্রচার চলে।’’
তবে ফেসবুকের সঙ্গে বিজেপির আঁতাঁতের অভিযোগ উঠলেই বিজেপি নেতারা কংগ্রেসের সঙ্গে কেমব্রিজ আন্যালিটিকার যোগসাজশের অভিযোগ তোলেন। ব্রিটিশ সংস্থা স্ট্র্যাটেজিক কমিউনিকেশনের অধীন অ্যানালিটিকা ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকেই কংগ্রেস ও বিজেপিকে মক্কেল হিসেবে পাওয়ার চেষ্টা করেছিল। স্ট্র্যাটেজিক কমিউনিকেশনের ভারতীয় শাখার প্রাক্তন ডিরেক্টর অবনীশ রাই জানিয়েছিলেন, অ্যানালিটিকার সিইও আলেকজান্ডার নিক্স সে সময়ে ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের সঙ্গে কাজ করতে বেশি উৎসাহী ছিলেন।
অ্যানালিটিকার ‘এ টু জেড’ ভোট পরিষেবার মধ্যে ছিল লোকসভা বা বিধানসভা কেন্দ্রের জাতপাতের সমীকরণ নিয়ে গবেষণা, ভোটারদের সম্পর্কে তথ্য ও বিশ্লেষণ, মিডিয়ায় নজরদারি, যাঁদের ভোট টানার লক্ষ্য নিতে হবে, তাঁদের সম্পর্কে বিশ্লেষণ ও প্রচারের কৌশল, ভোটের সামগ্রিক পরিকল্পনা ও পরিচালনা। কংগ্রেসের বরাত পেতে অমেঠী-রায়বরেলী সহ চারটি লোকসভা কেন্দ্রের তথ্যভাণ্ডার বিনা মূল্যে রাহুল গাঁধীর হাতে তুলে দেন তাঁরা। ওই সংস্থার আবার অন্যতম ডিরেক্টর ছিলেন জেডি-ইউ নেতা কে সি ত্যাগীর পুত্র অম্বরীশ ত্যাগী। কংগ্রেসের পাল্টা দাবি, অ্যানালিটিকা চেষ্টা করলেও কংগ্রেসের সঙ্গে তাদের বোঝাপড়া হয়নি। বরং মোদী সরকারের প্রাক্তন মন্ত্রী মহেশ শর্মাই অ্যানালিটিকার প্রথম মক্কেল ছিলেন।
তবে ফেসবুকের কার্যকলাপের অনেকটা প্রকাশিত হওয়ায় তা নিয়ন্ত্রণ করা খানিকটা সহজ। কিন্তু হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে কোনও আমন্ত্রণ ছাড়া প্রবেশ করা যায় না বলে সেই প্রচারের নাগাল পাওয়া মুশকিল। আর সেখানে খবরও ছড়ায় দাবানলের মতো। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সদস্য সংখ্যা নির্দিষ্ট করে বা বার্তা ফরওয়ার্ড করার সংখ্যা সীমিত করেও যা ঠেকানো যায়নি। ভুয়ো খবর ধরার বিশেষজ্ঞ প্রতীক সিন্হা জানাচ্ছেন, হোয়াটসঅ্যাপে রাজনৈতিক প্রচারের বড় অংশ জুড়ে থাকে মিথ্যে খবর। তাঁর কথায়, ‘‘এখনকার তরুণদের মধ্যে অধিকাংশেরই গত কয়েক দশকের রাজনৈতিক ঘটনাবলি সম্বন্ধে ধারণা কম। তাই কাউকে আক্রমণ করতে হলে তাঁর বা তাঁর পরিবারের অতীত সম্বন্ধে যা খুশি বয়ান তৈরি করে তা ইতিহাসের আকারে প্রচার করা হয়।’’
আবার বয়স্কদেরও অনেকে মনে করেন মোবাইলে লিখিত আকারে কিছু এলেই তা বিশ্বাসযোগ্য। সেই সুযোগও নেওয়া হয়। তবে লিখিত বয়ানই নয়, ছবি বিকৃত করে, পুরনো বা অন্য জায়গার বা অন্য দেশের ছবি ব্যবহার করে, বা নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী ভিডিয়ো শুট করেও প্রচার চলে। যেমন বসিরহাটে অশান্তির সময়ে ভোজপুরি সিনেমার ছবিকে সেখানকার ছবি বলে প্রচারের অভিযোগ উঠেছিল।
এমন আবহে পশ্চিমবঙ্গে আদতে হচ্ছেটা কী? সামাজিক মাধ্যমকে কী ভাবে কাজে লাগাচ্ছে শাসক ও বিরোধী দল?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy