জনসমুদ্র: বড়দিন উপলক্ষে আলিপুর চিড়িয়াখানায় উপচে পড়া ভিড়। ছবি: সুদীপ ঘোষ।
ময়দানে ব্যাডমিন্টনের র্যাকেট হাতে গড়াগড়ি খাচ্ছে বছর পাঁচেকের খুদে। গায়ের সোয়েটার খুলে কোমরে গিঁট দিয়ে বাঁধা। সঙ্গী বন্ধুটি আবার ঘাসে শুয়ে থাকা শিশুকে ঘিরেই সমানে দৌড়ে চলেছে। তার কোমরে বাঁধা সোয়েটার যে কখন মাটিতে পড়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে, সে দিকে খেয়াল নেই। দূরে গোল হয়ে বসে গল্পে মশগুল অভিভাবকদের হঠাৎ এ দিকে নজর পড়তেই ছুটে এলেন এক জন। বাচ্চার গায়ের ধুলো ঝেড়ে, খানিক বকেঝকে হাত ধরে নিয়ে যেতে যেতে বললেন, ‘‘ওদের আর দোষ কী? ঠান্ডা আছে নাকি যে, ওরা গায়ে সোয়েটার রাখবে!’’
শুধু ময়দান চত্বরই নয়, বুধবার বড়দিনে শহরের সর্বত্র ছিল কার্যত একই ছবি। সকাল থেকে মুখ ভার আকাশের সঙ্গে কয়েক জায়গায় দু’-এক পশলা বৃষ্টি পড়তে দেখা গেলেও গরমের ছবির বদল হয়নি। বরং সকালের হালকা বাতাসের সঙ্গে ঠান্ডার শিরশিরানিটুকুও বেলা বাড়তেই উধাও। দিনের তাপমাত্রা ঘোরাফেরা করেছে ২৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের আশপাশে। ঠান্ডার খামখেয়ালিপনা যদিও জনতার উৎসাহে রাশ টানতে পারেনি।
প্রতি বছরের মতো এ বারও ভিড়ের বহরে সমানে পাল্লা দিয়েছে ভিক্টোরিয়া, প্রিন্সেপ ঘাট, সেন্ট পল্স ক্যাথিড্রাল, চিড়িয়াখানা চত্বর। ময়দানের পাশাপাশি পার্ক স্ট্রিট চত্বরেও ছিল উৎসবের চেনা মেজাজ। জনপ্লাবন বাঁধ ভেঙেছে সর্বত্র।
যদিও উৎসবের চেনা ছবির মধ্যে ভিন্ন সুরও ছিল ধর্মতলা চত্বরে। বড়দিনে শহর ঘোরার ফাঁকে অনেকেই ঘুরে গিয়েছেন চিকিৎসকদের ধর্না মঞ্চের সামনে। দুপুরের ব্যস্ত সময়ে ধর্মতলায় চিকিৎসকদের ধর্না মঞ্চের সামনে বসা এক মহিলা শুধু বললেন, ‘‘নির্যাতিতা এখনও বিচার পাননি। এই কথাটা কোনও ভাবে যাতে আমরা ভুলে না যাই, তার জন্য এখানে এসেছি।’’
বড়দিনের সকালে সব থেকে বেশি ভিড় ছিল চিড়িয়াখানা চত্বরে। ভিড়ের চাপে টিকিট কাউন্টারের সামনে কার্যত তিল ধারণের জায়গা ছিল না। একই অবস্থা চিড়িয়াখানার সামনে রাস্তাতেও। পরিস্থিতি এমন হয় যে, সেই রাস্তায় গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ নামাতে হয়। তার পরেও বেহালামুখী গাড়ির লম্বা লাইন আটকানো যায়নি।
বনগাঁ থেকে ছেলেকে নিয়ে এসেছিলেন শিশির ভট্টাচার্য। চিড়িয়াখানার উল্টো দিকে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘‘যা ভিড়, রাস্তা পার হওয়ার জন্য ফুট ওভারব্রিজে উঠতে গিয়েই তো মনে হচ্ছে দমবন্ধ হয়ে যাবে। চিড়িয়াখানার ভিতরে বাচ্চা নিয়ে কী হবে কে জানে!’’
সকালের দিকে ভিড়ের নিরিখে চিড়িয়াখানার কাছে ভিক্টোরিয়া চত্বর হার মানলেও বেলা বাড়তেই ছবিটা বদলে যায়। ভিক্টোরিয়ার সামনে টিকিটের লাইন চলে যায় কয়েকশো মিটার। ভিড় সামলাতে নাজেহাল পুলিশকে বার বার মাইকে বলতে শোনা গেল, ‘‘লাইন ছাড়া কেউ টিকিট কাউন্টারের সামনে এসে ভিড় করবেন না।’’ ভিড় এড়িয়ে ভিক্টোরিয়াকে পিছনে রেখে ছবি তুলতে ব্যস্ত এক তরুণী বললেন, ‘‘সমানে ক্যামেরার সামনে দিয়ে কেউ না কেউ হেঁটেই চলেছে। শান্তিতে যে একটা ছবি তুলব, তার উপায় নেই। এত সেজেগুজে বেরিয়ে ভাবলাম কয়েকটা ভাল ছবি তুলব, তা-ও হবে বলে মনে হচ্ছে না!’’
একই ছবি প্রিন্সেপ ঘাট, ভারতীয় জাদুঘর, সেন্ট পল্স ক্যাথিড্রাল গির্জাতেও। ময়দানে ছিল পিকনিকের মেজাজ। খেলাধুলো, হুড়োহুড়ির পাশাপাশি ময়দান জুড়ে ছিল দেদার খাওয়াদাওয়া আর আড্ডার মেলা। চন্দননগর থেকে সপরিবার এ দিন শহরে এসেছিলেন শেফালি বর্মা। ময়দান বসে আড্ডার ফাঁকে বললেন, ‘‘কলকাতায় এলে ঘোরাঘুরির পরে ময়দানই আমাদের আড্ডার জায়গা। তবে আকাশ এমন মুখ ভার না করে থাকলে আরও জমে যেত।’’
দিনের বাকি সময়ে গঙ্গাপাড়, ভিক্টোরিয়া, চিড়িয়াখানা ভিড় টানলেও বিকেল গড়াতেই সব ভিড় গিয়ে মেশে পার্ক স্ট্রিটে। পরিস্থিতি এমন হয় যে, বিকেল ৪টে থেকেই পার্ক স্ট্রিটে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিতে হয়। গোটা পার্ক স্ট্রিট, ক্যামাক স্ট্রিট চত্বর শুধু হাঁটার জন্য খোলা রাখা হয়। এর পরে সন্ধ্যা যত বেড়েছে, জমকালো আলোর রোশনাইয়ের সঙ্গে গোটা এলাকার দখল নিয়েছে জনতা।
যদিও শহরতলি থেকে জঙ্গি ধরা পড়া এবং বাংলাদেশ পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে অন্য বছরের তুলনায় বাড়তি সতর্কতাও দেখা গিয়েছে। ভিড় রাস্তায় নামার অনেক আগে থেকেই পুলিশি নজরদারি বাড়ানো হয় পার্ক স্ট্রিট চত্বরে। সেখানে সাদা পোশাকে কর্তব্যরত গোয়েন্দা বিভাগের এক পুলিশকর্মী বললেন, ‘‘ভিড় ধরে ধরে নজর রাখার নির্দেশ রয়েছে। সন্দেহভাজন কিছু দেখলেই কোনও ঝুঁকি না নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ এসেছে। গা-ছাড়া দেওয়ার কোনও জায়গা নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy