ফাইল চিত্র।
অসত্য ও তৈরি-করা তথ্য ও সংবাদ বিশ্বাসযোগ্য ভাবে প্রচারের উদ্দেশ্যে বিশ্বজোড়া এক মস্ত কর্মকাণ্ড। প্রায় ৭৫০টি ভুয়ো নিউজ় পোর্টালের মাধ্যমে ১১৬টি দেশে সেই তথ্যের অবিরাম পরিবেশন। প্রায় সব তথ্যই পাকিস্তান ও চিন-বিরোধী প্রচার। সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারত সরকারের সাফল্যের চওড়া বিবরণী। উদ্দেশ্য ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ও রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার পরিষদ (ইউএনএইচআরসি)-র সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করা। এ জন্য ১০টির বেশি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও মানবাধিকার সংগঠনের ‘পরিচয় ছিনতাই’ করা হয়েছে। ‘বাঁচিয়ে তোলা হয়েছে’ ২০০৬-এ ৯২ বছর বয়সে প্রয়াত এক নামী অধ্যাপককে, মানবাধিকার বিষয়ক বেশ কয়েকটি আইনের প্রণেতা ছিলেন যিনি।
মিথ্যা ও অসত্য তথ্য নিয়ে কাজ করা ইউরোপের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘ইইউ ডিজ়ইনফোল্যাব’ দীর্ঘ গবেষণা ও তদন্তের পরে ১৫ বছর ধরে চলা এই মিথ্যা সংবাদের কারখানা ফাঁসের কৃতিত্ব দাবি করেছে। এক বছর আগেই ‘ইইউ ডিজ়ইনফোল্যাব’ এই সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল। তার পরে আরও তদন্ত চালিয়ে বুধবার একটি সবিস্তার রিপোর্ট প্রকাশ করেছে তারা, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘ইন্ডিয়া ক্রনিক্ল’। সংগঠনের এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর আলেকজান্ডার অ্যালাফিলিপের দাবি, “আমাদের ফাঁস করা বৃহত্তম ভুয়ো-তথ্যের কারখানা এ’টি।” তবে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক মন্তব্য করেছে— পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসএই-এর অর্থায়নে তৈরি রিপোর্ট এ’টি। বৃহস্পতিবার পাক বিদেশ মন্ত্রক সাংবাদিক বৈঠক করে রিপোর্টটির ঢালাও প্রচার করে তা প্রমাণও করে দিয়েছে। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, ইইউ পার্লামেন্টের সিনিয়র সদস্যরা যদি নিজের নামে প্রতিবেদন লিখে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেন, কোনও নিউজ় পোর্টাল বা সংবাদ সংস্থা সেই লেখা উদ্ধৃত করে যদি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, চক্রান্তের তত্ত্ব ওঠে কী করে?
এক বছর আগে সংস্থার প্রথম রিপোর্টেই এই ধরনের ‘ভারতপ্রেমী’ ২৬৫টি ভুয়ো নিউজ পোর্টালের হদিশ দিয়েছিল ব্রাসেলসের এই বেসরকারি তদন্ত সংস্থাটি। ‘ইপি টুডে’ নামে একটি ভুয়ো সাইট ছিল এই প্রোপাগান্ডা-জালের শিরোমণি। সেই রিপোর্টটি প্রকাশের পরেই তালিকায় থাকা আরও বেশ কয়েকটি সাইটের সঙ্গে এই সাইটটিও বন্ধ হয়ে যায়। তার পরে ফের সে’টি ফিরে আসে ‘ইইউ ক্রনিক্ল’ নাম নিয়ে। সঙ্গী ভুয়ো সাইট বা নিউজ পোর্টালের সংখ্যাও যায় বেড়ে। তদন্তে দাবি করা হয়েছে, ভারত সরকার বা সরকারি কোনও সংস্থার সঙ্গে এদের সম্পর্কের আঁচটুকু প্রকাশ্যে রাখা না-হলেও তারা আদতে ভারত সরকারের পক্ষ নিয়েই কাজ করে। শ্রীবাস্তব গ্রুপ নামে একটি ভারতীয় সংস্থা এই ‘ইইউ ক্রনিক্ল’-এর মালিক এবং চক্রের মধ্যমণি বলে দাবি করা হয়েছে রিপোর্টটিতে। আর বলা হয়েছে, দুনিয়া জুড়ে এদের বানানো তথ্য বা সংবাদ ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করে এএনআই (এশিয়ান নিউজ় ইন্টারন্যাশনাল) নামে একটি অডিয়ো-ভিসুয়াল সংবাদ সংস্থা।
ইইউ পার্লামেন্টের কট্টর দক্ষিণপন্থী কয়েক জন সদস্যকেও এই চক্রের অংশ বলে দাবি করা হয়েছে ‘ইইউ ডিজ়ইনফোল্যাব’-এর রিপোর্টে। এই পার্লামেন্টারিয়ানরা বিভিন্ন সময়ে নানা বিষয়ে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করে বিবৃতি দেন, যা কৌশলে ইইউ-এর অবস্থান বলেই প্রচার করা হয়। এঁদের তিন জন বিভিন্ন সময়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে চক্রের ভুয়ো পোর্টালে প্রতিবেদন লেখেন, যা উদ্ধৃত করে বেশ কিছু খবর করা হয়। রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, এই তৈরি করা রিপোর্ট ১১৬টি দেশে প্রচার করে এএনআই। অভিযোগ, কাশ্মীর থেকে সংবিধানের ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিলের পরে এই পার্লামেন্টারিয়ানদের নিয়েই সরকারি পরিকাঠামো ব্যবহার করে বেসরকারি ভাবে সেখানে সফরের বন্দোবস্ত করা হয়েছিল।
শুধু সংবাদ ও তথ্য নির্মাণই নয়, রাষ্ট্রপুঞ্জের অনুমোদিত কিন্তু বন্ধ হয়ে যাওয়া বেশ কিছু এনজিও-কে ফের চালু করে এই প্রচারের কাজে ব্যবহার করা হয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে ‘ইইউ ডিজ়ইনফোল্যাব’-এর রিপোর্টে। এমন ১০টিরও বেশি এনজিও-র অফিস রয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জের দফতরে। রাষ্ট্রপুঞ্জের নানা সম্মেলনে তাদের প্রতিনিধিরা বক্তৃতা করারও সুযোগ পান। রিপোর্টে বলা হয়েছে— তবে সকলকে চমকে দিয়েছে তদন্তে উঠে আসা একটি তথ্য। সিএসওপি নামে একটি এনজিও-র প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন হার্ভার্ড-এর আইনের অধ্যাপক লুইস শন। বেশ কয়েকটি মানবাধিকার আইনের জনক তিনি। ২০০৫-এ এনজিও-টি বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু পরে সেটিকে আবার চালু করে এই চক্রীরা। ২০০৭-এ রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার পরিষদের অধিবেশন এবং পরে ২০১১-য় আর একটি আন্তর্জাতিক অধিবেশনে তাদের প্রতিনিধি হিসেবে প্রফেসর শনের নাম পাঠিয়েছিল সিএসওপি। অথচ ২০০৬-এই প্রয়াত হয়েছেন এই অধ্যাপক!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy