Advertisement
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

নাম বিভ্রাট! মধুমালার বদলে জেলে মধুবালা

গরিব, নিরক্ষর মধুবালাদেবীর মামলা চালানোর ক্ষমতাটুকুও নেই। তাই এত দিন ঘটনাটি জানাজানিও হয়নি। চিরাং জেলার ১ নম্বর বিষ্ণুপুর গ্রামের বাসিন্দা মধুবালা মণ্ডলের স্বামী রমাকান্ত মণ্ডল দীর্ঘদিন হল গত হয়েছেন।

মধুবালাদেবীর ভোটার কার্ড।

মধুবালাদেবীর ভোটার কার্ড।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত
শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৯ ০২:৩৯
Share: Save:

নামের মিলের দোহাই দিয়ে গত তিন বছর ধরে মধুমালা দাসের বদলে মধুবালা মণ্ডলকে ডিটেনশন শিবিরে বন্দি করে রাখা হয়েছে!

গরিব, নিরক্ষর মধুবালাদেবীর মামলা চালানোর ক্ষমতাটুকুও নেই। তাই এত দিন ঘটনাটি জানাজানিও হয়নি। চিরাং জেলার ১ নম্বর বিষ্ণুপুর গ্রামের বাসিন্দা মধুবালা মণ্ডলের স্বামী রমাকান্ত মণ্ডল দীর্ঘদিন হল গত হয়েছেন। স্বামীহারা মধুবালাদেবী মূক ও বধির মেয়ে ফুলমালাকে নিয়ে অতিকষ্টে দিন কাটাচ্ছিলেন। কিন্তু ২০১৬ সালের এপ্রিলে হঠাৎই একদিন পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। তাঁকে কোকরাঝাড় ডিটেনশন শিবিরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তিনি বুঝতেই পারছিলেন না তাঁর দোষ কী? পুলিশ জানায়, তিনি বাংলাদেশি। কিন্তু তাঁর নামে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের কোনও নোটিসও আসেনি।

অসহায় মেয়ে ফুলমালা মামার বাড়িতে আশ্রয় নেয়। একজন উকিলের দ্বারস্থ হন মধুবালার ভাইয়েরা। তখনই জানা যায়, ২০০৮ সালে পুলিশের সীমান্ত শাখা একই গ্রামের বাসিন্দা মাখন নমঃদাসের স্ত্রী মধুমালা নমঃদাসের নামে সন্দেহজনক নাগরিক হওয়ার রিপোর্ট দিয়েছিল। তার ভিত্তিতে ২০১৬ সালের ৫ মার্চ আদালতের সমন আসে। কিন্তু তার অনেক আগেই মধুমালাদেবীর মৃত্যু হয়। তাই শুনানির দিন কেউ হাজিরই হয়নি। আদালত মধুমালা নমঃদাসকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়। পুলিশ গ্রামে এসে মধুমালার বদলে মধুবালাকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠিয়ে দেয়।

ষাট ছুঁইছুঁই মধুবালাদেবী এখন তিন বছর ধরে অসম পুলিশের ভুলের মাশুল গুণছেন জেলে বসে। তাঁর ননদ ভাসানি মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা মধুমালা নমঃদাস ও তাঁর স্বামী মাখনবাবুকে ভাল করেই চিনতাম। ওঁরা অনেক বছর আগেই মারা গিয়েছেন। এমনকী ওঁদের একমাত্র ছেলে মন্টুও হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে মারা গিয়েছে।’’ স্থানীয় মানবাধিকার কর্মী অজয় রায় বলেন, ‘‘নাম যদি হুবহু একও হয়, পুলিশ বাবা ও স্বামীর নামও যাচাই করতে পারত।’’ তাঁর অভিযোগ, বাঙালিকে যেনতেন প্রকারেণ হেনস্থা করার তাড়নায় মধুমালা নমঃদাস মারা যাওয়ার খবর আদালতকে না জানিয়ে পুলিশ নির্দোষ, অসহায় মধুবালা মণ্ডলকে জেলে ঢোকায়। তাঁর কথায়, যে উকিল ওঁরা ঠিক করেছিলেন সে এত প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও মধুবালাদেবীকে ছাড়িয়ে আমার চেষ্টা করেনি। তাই তাঁরা নতুন করে মধুবালার হয়ে মামলা লড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

অবশ্য পুলিশের ভুল মানতে নারাজ এসপি সুধাকর সিংহ। তাঁর দাবি, পুলিশ খোঁজখবর নিয়েই মধুবালাদেবীকে গ্রেফতার করেছে। তাঁদের গল্প, মধুবালা আগে দাস পদবির কাউকে বিয়ে করেছিলেন। পরে রমাকান্ত মণ্ডলকে বিয়ে করেন। তাই হয়ত পদবি মেলেনি। কিন্তু তাতেই মানুষ আলাদা হয়ে যায় না। অজয়বাবুর পাল্টা দাবি, ‘‘পুলিশ ও ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল একাধিক মামলায় ওই নাম-পদবির গরমিলকে হাতিয়ার করেই ভারতীয়দের জেলে পাঠাচ্ছে। আর এ ক্ষেত্রে নিজেদের দোষ ঢাকতে মিথ্যা যুক্তি সাজাচ্ছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Police Crime Jail
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy