গ্রাফিক— সনৎ সিংহ
লোকসভা অধিবেশনের শুরুতেই ডাক্তারির সর্বভারতীয় প্রবেশিকা নিট নিয়ে কেন্দ্রকে চেপে ধরল বিরোধীরা। সোমবার লোকসভার প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরু হতেই কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের কাছে জানতে চাওয়া হয়, যে ভাবে নিটের ‘অনিয়ম’ ২৪ লক্ষ পড়ুয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, তাতে কি তিনি এই ঘটনার দায় নিয়ে ইস্তফা দেবেন? জবাবে ধর্মেন্দ্র ‘শিখণ্ডী’ খাড়া করেছেন ‘প্রধানমন্ত্রী স্যরের সরকার’কে। জানিয়েছেন, বিহার পুলিশের সক্রিয়তা, সিবিআইয়ের তদন্ত এবং দেশের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের এজলাসে এই মামলার শুনানির কথা। যা শুনে লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর কটাক্ষ, ‘‘উনি তো নিজেকে বাদ দিয়ে বাকি সকলের ঘাড়ে দায় চাপাচ্ছেন দেখছি।’’
সোমবার থেকে লোকসভায় শুরু হয়েছে বাদল অধিবেশন তথা বাজেট অধিবেশন। যে অধিবেশনে আগামী এক বছরের জন্য পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করার কথা কেন্দ্রের নবগঠিত সরকারের। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন সপ্তম বার বাজেট পেশ করবেন মঙ্গলবার। তার আগে সোমবার ‘আর্থিক সমীক্ষা’ পেশ করা হবে সংসদের উভয় কক্ষে। বাজেট নিয়ে আলোচনাও হবে। তবে তার পাশাপাশিই সংসদের এই অধিবেশনের মূল আলোচ্য হিসাবে যে নিটে অনিয়মের প্রসঙ্গ উঠতে চলেছে, তার আন্দাজ পাওয়া গিয়েছিল আগেই। বিরোধী দলের নেতারা ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন। রবিবার পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূলের ২১ জুলাইয়ের সমাবেশ থেকেও নিট নিয়ে কেন্দ্রকে আক্রমণ করেছিলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা লোকসভা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছিলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের তথাকথিত টেট এবং এসএসসি দুর্নীতির অভিযোগে যদি প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করা হয়ে থাকে, তবে স্বাধীনতার পরে দেশের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি নিটের প্রশ্নফাঁসের কাণ্ডে কেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানকে গ্রেফতার করা হবে না।’’ এর পরেই সোমবার লোকসভায় ধর্মেন্দ্রকে ইস্তফার প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। যার জবাব শুনে কটাক্ষ করেন রাহুলও।
অভিষেকের রবিবারের বক্তব্যের পরেই সার্বিক ভাবে তৃণমূল ওই বিষয়ে ময়দানে নেমেছে। সোমবার কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যের পরে তারা আরও ‘আক্রমণাত্মক’ হয়েছে। দলের নেতা কুণাল ঘোষ তাঁর এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে পোস্ট করেছেন, ‘এ তো ঘোড়ায় হাসবে! সারা দুনিয়া জানে, প্রশ্নপত্র ফাঁস কেলেঙ্কারি। আর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সংসদে বলছেন, হয়নি! কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জানেন, তিনি কী বলছেন?’’ তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সুস্মিতা দেব লিখেছেন, ‘‘যখন কোনও মন্ত্রী সংসদে সত্যকে এড়িয়ে যান, তখন সেটা দেশকে প্রতারণার শামিল।’’
সোমবার লোকসভার প্রশ্নোত্তর পর্বে ধর্মেন্দ্রকে বিরোধী দলের এক সাংসদ বলেন, ‘‘গত সাত বছরে ৭০ বার সরকারি পরীক্ষায় এরকম প্রশ্নপত্র ফাঁস-সহ নানা অনিয়মের অভিযোগ প্রকাশ্যে এসেছে। মন্ত্রী কি বলতে পারবেন, এই অনিয়ম রুখতে কী কী পদক্ষেপ করা হয়েছে?’’ জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি পূর্ণ দায়িত্ব সহকারে বলছি, এনটিএ গঠনের পরে দেশে ২৪০টি পরীক্ষা হয়েছে। সাত বছরে কোনও রকম প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রমাণ নেই। ৭০ তো দূর, একটিও না! যে ঘটনাটি সম্প্রতি ঘটেছে, সেটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। বিহারের পটনার কাছাকাছি একটি এলাকায় একটিমাত্র পরীক্ষাকেন্দ্রে হয়েছে। যা বিহার পুলিশের সক্রিয়তার কারণে ধরা পড়েছে। সিবিআইও তদন্ত শুরু করেছে। বিষয়টি এখন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির এজলাসে আছে। সমস্ত তথ্যও প্রকাশ্যে এসেছে।’’ এর পরেই তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়, ঘটনাটির ‘গুরুত্ব’ বিচার করে তিনি কি ইস্তফা দেবেন? জবাবে ধর্মেন্দ্র বলেন, ‘‘আমি এখানে এসেছি আমার নেতা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ইচ্ছায়। তাই দায়িত্ব নেওয়ার প্রশ্ন যখন আসবে, আমার সরকার একজোট হয়ে তার উত্তর দিতে বাধ্য।’’
ধর্মেন্দ্রের এই জবাবেরই সমালোচনা করেন রাহুল। এ-ও বলেন, ‘‘দেশের কোটি কোটি মানুষ জানেন, পয়সা থাকলে ভারতের পরীক্ষার ব্যবস্থাটাকেই কিনে নেওয়া যায়। বিরোধীরাও তা-ই মনে করে।’’ বিরোধীরা এই মন্তব্যে লোকসভায় ‘শেম শেম’ বলে চিৎকার শুরু করে। পরে সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব বলেন, ‘‘এই সরকার প্রশ্নপত্র ফাঁসের রেকর্ড করবে।’’ বিরোধীদের চিৎকারে ক্ষুব্ধ ধর্মেন্দ্রকে বলতে শোনা যায়, ‘‘চিৎকার করলেই অসত্য সত্য হয়ে যাবে না। বিরোধী দলনেতা যে ভাবে দেশের পরীক্ষা ব্যবস্থার নিন্দা করছেন, তা নিন্দনীয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy