রাঁচীর দুর্গাবাটীর পুজো এ বার ১৪১ বছরে পড়ল। —ফাইল চিত্র।
আপনি কোথায়? এ বার পুজোয় রাঁচী চলে আসুন।
রাঁচীর মানুষজন এমন ভাবেই ডাকেন।
রাঁচী যাওয়ার জন্য যতই ‘বন্দে ভারত’ হোক, রাঁচী যেতে গেলে সব থেকে ভাল ট্রেন রাঁচী-হাতিয়া। ভোরবেলা আলো ফোটার আগে মুরী জংশন। আর মুরী থেকে ভোরের আলোয় ট্রেনের জানলা দিয়ে ঘুম চোখে মায়াবী জঙ্গল ছুঁয়ে ভোর সাড়ে ৬টার মধ্যে কখন যেন রাঁচীর দু’নম্বর প্লাটফর্মে পৌঁছে যাবে ট্রেনটা। ভাল করে চোখ কচলে স্টেশনের ওভারব্রিজ পেরোতে পেরোতেই শোনা যাবে ঢাক বাজছে স্টেশনের বাইরে। রাঁচীর আকাশে-বাতাসে ছড়িয়ে পড়েছে পুজোর গন্ধ। সকালের প্রথম নরম আলো স্টেশনের বাইরে স্বাগত জানাতে লাল কার্পেটের মতো পাতা থাকবে।
রাঁচী স্টেশন দিয়েই যখন ঢুকছেন, তখন প্রথমেই দেখে নিন রাঁচী স্টেশন সংলগ্ন নর্থ রেলওয়ে কলোনি দুর্গাপুজো সমিতির পুজো। এ বার যেমন মণ্ডপ সজ্জায় ভ্রুণ হত্যা বন্ধ করা নিয়ে সচেতনতার ছোঁয়া। পুজোর সময় রাঁচীর অলিগলি, রাস্তাঘাটে ঘুরতে ঘুরতে মনে হবে, রাঁচী শহরটা পায়ে চাকা লাগিয়ে এগিয়ে সুবর্ণরেখা নদী পেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ঢুকে গিয়েছে। শহরে ঘুরতে ঘুরতে চলে যান বকরিবাজারের রাজস্থান মিত্র মণ্ডলের পুজো দেখতে। এ বারের থিম কালচক্র। হরমুতে পঞ্চমুখী মন্দির কমিটি পুজোয় অক্ষরধাম মন্দির। রাতু রোডের আর আর স্পোর্টিং ক্লাবের পুজো এ বারও চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে শহরের অন্য বড় পুজোগুলোকে। শহরের আর এক প্রান্তে কোঁকরে বান্ধগারি দুর্গাপুজো সমিতি করেছে বাঁশের মণ্ডপ। মোরাবাদী গীতাঞ্জলি ক্লাবের পুজো মণ্ডপ গাছের লতা দিয়ে তৈরি। রাঁচীর সাউথ অফিসপাড়া, নর্থ অফিসপাড়ার মৈত্রেয়ী ক্লাব, সেক্টর টু, সেল সিটি, নিবারণপুর-অনন্তপুর, হিন্দপিড়ী অঞ্চলের পুজো কমিটি এ বারেও নানা রকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। পুজো মণ্ডপ লাগোয়া মাঠে চার দিন ধরে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। শহরের কাঁটাটোলীর নেতাজিনগর, কোকর অঞ্চলের দুর্গাপুজোর আলোর সাজ এ বারেও অন্য রকম। থাড়পাখনা অঞ্চলের দেশপ্রিয় ক্লাব ও লাইব্রেরি এবং নবযুবক সঙ্ঘের পুজো প্রতিবারের মতোই আলাদা। ১৯১২-এ স্থাপিত হিনু বাঙ্গালী মণ্ডপেও মহালয়ার সন্ধ্যায় ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ অনুষ্ঠান করেছেন ‘সঙ্গীতায়ন’-এর শিল্পীরা। হিনুর প্রতিমা দেখতে এখনও শহরের মানুষের ভিড় দেখা যায়। ১৯১১-য় শুরু হওয়া ডোরান্ডার বীণাপাণি ক্লাবের পুজার নিষ্ঠার সাথে আয়োজিত হবে এ বারও। তবে এ বার রাঁচীতে পুজো দেখার জন্য ঘুরতে ঘুরতে কিন্তু যানজটের আশঙ্কা আছে। রাঁচীর দুই গুরুত্বপূর্ণ জায়গা কাঁটাটোলী ও রাতু রোডে উড়ালপুলের কাজ চলছে। আর তার জেরেই নিত্যদিন যানজট।
রাঁচীর দুর্গাবাটীর পুজো এ বার ১৪১ বছরে পড়ল। দুর্গাবাটীর সভাপতি জ্যোতির্ময় চৌধুরী জানান, মহালয়ার সন্ধ্যায় প্রতিবারের মতো এ বারও আগমনীর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে অংশগ্রহণ করেন রাঁচীর সাংস্কৃতিক কর্মী সুবীর লাহিড়ী, শুভ্রা গোস্বামী, রূপা দে-রা। নিষ্ঠা ভরে পুজোর আয়োজন আর বাঙালিদের পুনর্মিলনের প্রাণকেন্দ্র দুর্গাবাটী। পুজোয় দুর্গাবাটীর প্রথা অনুযায়ী এ বছরেও প্রতিমা নিরঞ্জনের সময়ে ভক্তদের কাঁধে চড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। বর্ধমান কম্পাউন্ডের হরিমতী মন্দিরের দুর্গাপুজোয় ষষ্ঠী থেকে নবমী নানা রকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীতে ভোগ বিতরণ। রাঁচী থেকে চার লেনের রাস্তা ধরে আড়াই ঘণ্টা গাড়িতে জামশেদপুর চলে গেলে দেখা যাবে পুজোকে কেন্দ্র করে শহর সেজে উঠেছে। জামশেদপুর সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি, তরুণ সঙ্ঘ, প্রবীণ সিং সেবা সংস্থান, টেলকো কলোনির সবুজ কল্যাণ সমিতি, ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের শিব দুর্গা কালী মন্দিরের পুজোতে ভিড় হয় প্রচুর। এই পুজোগুলোর সঙ্গে থাকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, এমনকি বাংলা যাত্রাপালাও।
পুজোতে তাই ঝাড়খণ্ডের বাইরে যেতে চান না রাঁচী-জামশেদপুরের বাঙালিরা। রাঁচীর বর্ধমান কম্পাউন্ডে হরিমতি মন্দিরের পুজো মণ্ডপে আড্ডার সময়ে সুবীর বলেন, ‘‘পুজোর সময়ে কলকাতার মানুষজন কলকাতার পুজো দেখতে ডাকেন। তখন তাঁদের শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতার মতোই বলতে ইচ্ছা করে, যেতে পারি কিন্তু কেন যাব?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy