— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
আলো-ঝলমলে অযোধ্যার রামমন্দির যখন উদ্বোধনের অপেক্ষায় প্রহর গুনছে, তখন প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে ধন্যিপুরের রৌনাগি গ্রামে অন্ধকারে গাঢ় কুয়াশা মাখামাখি হয়ে পড়ে রয়েছে এক ফালি অনাবাদী জমি। যেখানে গড়ে ওঠার কথা বাবরি মসজিদের বিকল্প মসজিদ। রামমন্দির নির্মাণ থেকে শুরু করে উদ্বোধন উপলক্ষে আজ যখন কেন্দ্র–রাজ্য সরকার পূর্ণ শক্তিতে মাঠে নেমেছে, তখন অবহেলায় পড়ে রয়েছে ওই প্রান্তর। কাজ বলতে, কেবল কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘেরা হয়েছে জমিটি। কাজ ওখানেই শুরু। ওখানেই শেষ।
২০১৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বাবরি মসজিদের বিতর্কিত জমিতে রামমন্দির নির্মাণে যেমন সবুজ সঙ্কেত দেওয়া হয়েছিল তেমনি বিকল্প মসজিদের জন্য জমির ব্যবস্থা করে দিতে উত্তরপ্রদেশ প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ২০২০ সালের অগস্টে রামমন্দিরের ভূমিপুজো হয়। পরের মাসেই রাজ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে মুসলিমদের হাতে মসজিদ নির্মাণের জন্য ওই জমি তুলে দেওয়া হয়। দু’পক্ষ প্রায় একই সময়ে জমি পাওয়া সত্ত্বেও, রামমন্দিরের উদ্বোধন হতে কয়েক পাওয়া সত্ত্বেও, রামমন্দিরের উদ্বোধন হতে কয়েক ঘণ্টা যেখানে বাকি, সেখানে মসজিদের চূড়ান্ত নকশা তৈরি করা হয়ে ওঠেনি। মসজিদ প্রকল্প নির্মাণের দায়িত্বে রয়েছে ইন্দো-ইসলামিক কালচারাল ফাউন্ডেশন (আইআইসিএফ)। সংস্থার সম্পাদক আতাহার হুসেনের যুক্তি, মূল পার্থক্য হল, রামমন্দির নির্মাণের পিছনে আন্দোলন ছিল। সেই আন্দোলন মন্দির নির্মাণকে গতি দিয়েছে। মসজিদ গড়ার প্রশ্নে সেই অর্থে কোনও আন্দোলন নেই।
শ্রী রামজন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র সংস্থা মন্দির নির্মাণের পিছনে বেসরকারি মুখ হলেও, গোটা প্রক্রিয়ায় পিছন থেকে অর্থ ও পরিকাঠামো দিয়ে সাহায্য জুগিয়ে গিয়েছে কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী ও রাজ্যে যোগী আদিত্যনাথের সরকার। দলের নীতিগত কারণে সরকারি সাহায্যের বদান্যতা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন মসজিদ কর্তৃপক্ষ। বিরোধীদের মতে, রামমন্দিরকে সামনে রেখে গোটা দেশে হিন্দুত্বের ঢেউ তুলে লোকসভা নির্বাচনে জেতার প্রচেষ্টায় নেমেছেন মোদী-সহ বিজেপি নেতৃত্ব। সে কারণেই সমস্ত সরকারি যন্ত্রকে ব্যবহার করা হচ্ছে কেবল একটি অসম্পূর্ণ মন্দিরকে উদ্বোধন করার কাজে। সেখানে নতুন মসজিদ সরকারি সাহায্য থেকে বঞ্চিত। বিরোধীদের মতে, এই পার্থক্যই মেরুকরণের ঢেউ তুলতে সাহায্য করবে।
রাম মন্দিরের জন্য যখন ঢালাও আর্থিক অনুদান আসছে, তখন নতুন মসজিদ নির্মাণে অর্থের অভাব একটি বড় কারণ বলেই জানালেন আতাহার। মসজিদের পাশাপাশি দাতব্য হাসপাতাল, লঙ্গরখানা, প্রদর্শশালা বানানো হবে মসজিদ চত্বরে। আতাহারের কথায়, ‘‘অওয়ধ এলাকা গঙ্গা-যমুনি তেহজবী বা হিন্দু-মুসলিমের সৌভ্রাতৃত্বের জন্য বিশেষ ভাবে পরিচিত। ১৮৫৭ সালে হিন্দু-মুসলিম এক হয়ে সিপাহী বিদ্রোহে অংশ নিয়েছিল। সেই সংস্কৃতিকেই প্রদর্শশালায় তুলে ধরা হবে।’’ এত বড় মাপের প্রকল্পের জন্য অন্তত আড়াইশো থেকে তিনশো কোটি টাকার প্রয়োজন রয়েছে। বিশেষ করেআধুনিক মানের দাতব্য হাসপাতাল করার জন্য বিপুল অর্থের প্রয়োজন রয়েছে। আতাহার বলেন, সেই কারণে জনতার কাছ থেকে চাঁদা তোলার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সম্প্রতি অর্থ সংগ্রহের জন্য মুম্বইয়ে সভা করেন সংস্থার প্রধানেরা। বিশেষ করে যারা হাসপাতালে অর্থ বিনিয়োগে রাজি, এমন একাধিক ব্যক্তি ও সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করেছেন তাঁরা।
বিতর্ক এড়াতে নতুন মসজিদে বাবরি শব্দটি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। আতাহার বলেন, ‘‘নতুন মসজিদ গড়া হয়েছে পয়গম্বরের নামে। মসজিদের নাম রাখা হয়েছে, মসজিদ মহম্মদ বিন আবদুল্লা।’’ সংস্থার বক্তব্য, বাবরি মসজিদকে ঘিরে যে বিতর্ক ছিল, তা আশা করব সুপ্রিম কোর্টের রায়েই শেষ হয়ে গিয়েছে। তাই নতুন বিতর্ক এড়াতে বাবরি নামটি বাদ দেওয়া হয়েছে। আতাহারের বক্তব্য, সুপ্রিম কোর্টের ওই রায়ে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে নতুন করে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠুক, এটাই কাম্য।
আপাতত? অযোধ্যায় ঝলমলে আলোয় যখন দিন-রাত পার্থক্য করা মুশকিল, রৌনাহি গ্রামের জমি তখন পড়ে রয়েছে নিকষ অন্ধকারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy