Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

শিক্ষানীতিতে সুপারিশ অঙ্ক মেলা, সাহিত্য সপ্তাহ

শিক্ষার অধিকার আইনের লক্ষ্য ছিল প্রতিটি শিশুকে বিদ্যালয়ের চৌহদ্দির মধ্যে নিয়ে আসা।

ছবি: এএফপি।

ছবি: এএফপি।

অনমিত্র সেনগুপ্ত
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৯ ০১:৩১
Share: Save:

পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়া হোঁচট খাচ্ছে তৃতীয় শ্রেণির বই পড়তে গিয়ে। তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীরা হিমশিম খাচ্ছে প্রথম শ্রেণির যোগ-বিয়োগে।

বিচ্ছিন্ন ঘটনা? আদপেই নয়। খোদ সরকার স্বীকার করে নিচ্ছে, গত এক দশকে শিক্ষার মান অনেকটাই নেমে গিয়েছে। সেকারণে সরকারি স্কুলগুলিতে অঙ্ক ও ভাষা শিক্ষায় বিশেষ জোর দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে জাতীয় শিক্ষা নীতির খসড়ায়। বলা হয়েছে, বুনিয়াদি পর্যায়ে সাহিত্য তথা ভাষা শিক্ষা ও অঙ্ক শেখাকে জাতীয় মিশন হিসেবে অগ্রাধিকার দিতে হবে। কারণ, সামগ্রিক শিক্ষার প্রশ্নে অঙ্ক ও ভাষাজ্ঞান অপরিহার্য। জাতীয় শিক্ষা নীতি বলছে, বুনিয়াদী পর্যায়ে ওই রোগ না সারানো গেলে কাঁচা ভিত নিয়ে উঁচু ক্লাসে উঠে তাল মেলাতে পারবে না বড় সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী। আশঙ্কা, এর ফলে প্রায় ১০ কোটি পড়ুয়া উচ্চশিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে পারে অদূর ভবিষ্যতে।

শিক্ষার অধিকার আইনের লক্ষ্য ছিল প্রতিটি শিশুকে বিদ্যালয়ের চৌহদ্দির মধ্যে নিয়ে আসা। কাগজেকলমে গত দশ বছরে সেই লক্ষ্যে অনেকাংশেই সফল হয়েছে সরকার। কিন্তু বাস্তবে পড়ুয়ারা কতটা শিখেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে শিক্ষকদের মধ্যে। পাশ-ফেল প্রথা উঠে যাওয়ায় পড়ুয়ারা ক্লাসের পড়া সম্পূর্ণ না শিখেই উঁচু ক্লাসে উঠে যাচ্ছে বলে তাঁরা সরব। ৫৯৬টি জেলায় প্রায় সাড়ে পাঁচ লক্ষ পড়ুয়ার (৩ থেকে ১৬ বছর) মধ্যে সম্প্রতি সমীক্ষা চালায় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। তাতেই দেখা যায়, উঁচু ক্লাসে চলে গেলেও নিচু ক্লাসের অঙ্কে বা ভাষাভিত্তিক ‘রিডিং’-এ সমস্যায় প্রায় অর্ধেকের বেশি পড়ুয়া।

এই ত্রুটি মোকাবিলায় জাতীয় শিক্ষা নীতিতে সুপারিশ—প্রথমত, প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত দৈনন্দিন রুটিনে বাধ্যতামূলক ভাবে অঙ্কের ক্লাস ও সাহিত্য বা ভাষাশিক্ষার জন্য ‘রিডিং’ ক্লাস রাখতে হবে। চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য ভাষাভিত্তিক লেখার ক্লাস অতিরিক্ত রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। সকাল থেকে মধ্যাহ্নভোজনের বিরতির মধ্যে ওই ক্লাসগুলি সেরে ফেলার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে জানা গিয়েছে, ওই সময়ে পড়ুয়াদের মনোযোগ সবচেয়ে বেশি থাকে। দ্বিতীয়ত, বছরে এক বা একাধিকবার ভাষা/সাহিত্য সপ্তাহ ও অঙ্ক সপ্তাহ পালন, অঙ্ক ও সাহিত্য সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের প্রজেক্টে পড়ুয়াদের শামিল করা, প্রতি সপ্তাহে নিয়ম করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্কবিদ ও সাহিত্যিকদের জন্মবার্ষিকী পালনে জোর দেওয়া হয়েছে। তৃতীয়ত, নিয়মিত ভিত্তিতে অঙ্ক ও সাহিত্য বিষয়ে মেলা করার সুপারিশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এতে পড়ুয়া ও শিক্ষক ছাড়াও পড়ুয়াদের বাড়ির লোক, স্থানীয় মানুষকেও করতে হবে। মেলায় পড়ুয়ারা বিভিন্ন প্রজেক্টের মাধ্যমে অঙ্ক ও ভাষাশিক্ষার বিভিন্ন দিক তুলে ধরতে পারবে। চতুর্থত, ছোট থেকেই সৃজনশীল লেখা, গল্প বলা, নাটক, ‘গ্রুপ রিডিং’-এ জোর দিতে হবে। যাতে ছোট থেকেই ভাষায় দখল জন্মায়। তেমনি অঙ্কের ক্ষেত্রে ধাঁধার সমাধান, ধাঁধা তৈরিতে পড়ুয়াদের উৎসাহ দেওয়া, দৈনন্দিন জীবনে অঙ্কের প্রয়োগ শিখিয়ে অঙ্কে ভয় কাটানোর সুপারিশ করা হয়েছে।

বৈঠকের ডাক খসড়া শিক্ষানীতি নিয়ে বৈঠক ডাকলেন কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল ‘নিশঙ্ক’। ২২ জুনের এই বৈঠকে খসড়া শিক্ষানীতিতে যে সুপারিশগুলি করা হয়েছে তা নিয়ে আলোচনা হবে বলে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক জানিয়েছে। মন্ত্রকের এক কর্তার মতে, ‘‘আমরা দেশবাসীর মত নিচ্ছি। বৈঠকে সব রাজ্যের শিক্ষা দফতরের সঙ্গে সুপারিশ নিয়ে আলোচনা করতে চাই।’’ খসড়া শিক্ষানীতিতে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। পরে পিছু হটতে বাধ্য হয় কেন্দ্র।

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy