Advertisement
২৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Pranab Mukherjee

সুস্থ হোন প্রণববাবু, বলছেন সেই ডাক্তার

সোমবার রাতে খবরটা শোনা ইস্তক পরপর ছবিগুলো ভেসে যাচ্ছে পলাশের চোখের সামনে দিয়ে। 

ছবি: সংগৃহীত।

ছবি: সংগৃহীত।

সুস্মিত হালদার
শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০২০ ০৬:৩১
Share: Save:

মেডিক্যাল কলেজে কোভিড ডিউটি সেরে বাড়ি ফিরেই প্রণববাবুর করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবরটা পেয়েছিলেন পলাশ মজুমদার।

সেই থেকেই মনটা ভার হয়ে আছে তাঁর। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় টেলিফোনের ও-পার থেকে ভেসে আসে তাঁর ম্লান গলা, ‘‘এখনও চোখ বুজলে রক্তাক্ত মুখটা স্পষ্ট দেখতে পাই। প্রার্থনা করি, সে বারের মতোই সুস্থ হয়ে উঠুন।”

সোমবার রাতে খবরটা শোনা ইস্তক পরপর ছবিগুলো ভেসে যাচ্ছে পলাশের চোখের সামনে দিয়ে। পরপর সেলাই পড়ছে। আটটা, দশটা, বারোটা... বেথুয়াডহরি গ্রামীণ হাসপাতালের তরুণ চিকিৎসক পলাশ মনে-মনে নিজেকে বলছেন, “মাথা ঠান্ডা রাখো। রোগী ভিআইপি, কিন্তু ঘাবড়ালে চলবে না!”

রাত ৮টা নাগাদ ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে ঘটে গিয়েছে দুর্ঘটনা। হুটার বাজিয়ে কলকাতার দিকে যাচ্ছিল বিদেশমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কনভয়। উল্টো দিক থেকে আসা লোহার রড বোঝাই লরির পাশ দিয়ে তাঁর গাড়িটা যখন যাচ্ছে, দুম করে লরির ডান দিকের পিছনের চাকা ফেটে গেল। লরিটা কাত হয়ে গাড়িতে ঘষটে গেল।

পিছনের গাড়িতেই ছিলেন মন্ত্রীর আপ্ত সহায়ক প্রদ্যোৎ গুহ। তিনি ছুটে গিয়ে দেখেন, প্রণববাবুর মাথা ফেটে রক্ত ঝরছে। পাশে ছিলেন মানস ভুঁইয়া, তিনিও অল্প চোট পেয়েছেন। গাড়ির চালক তো জখম হয়েছেনই। ছোটাছুটি শুরু হয়ে গেল।

কাছেই নাকাশিপাড়া থানা থেকে চলে এলেন ওসি পিন্টু সাহা। অনেকটা এগিয়ে যাওয়া পাইলট কার ফিরে এল। সকলে ধরাধরি করে গাড়ি থেকে অচৈতন্য প্রণববাবুকে বার করে আনলেন। পাইলট কারে তুলে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হল কাছেই বেথুয়াডহরি গ্রামীণ হাসপাতালে।

নদিয়ার বেথুয়াডহরি অভয়ারণ্যের লাগোয়া ওই এলাকায় তখন বেশ ভালই রাত। চারপাশ নিঝুম। জরুরি বিভাগে ছিলেন জেনারেল ডিউটি মেডিক্যাল অফিসার পলাশ মজুমদার। হঠাৎ দেখেন, এক জনকে নিয়ে আসছে পুলিশ। সঙ্গে অনেক লোক। কাছে আসতে মুখটা দেখেই চমকে উঠলেন। এ যে প্রণব মুখোপাধ্যায়! দ্রুত তাঁকে নিয়ে যাওয়া হল ওটি-তে। ক্ষতস্থান পরিষ্কার করে সেলাই দিতে শুরু করলেন পলাশ।

১৩ বছর আগের কথা। ২০০৭ সালের ৭ এপ্রিল। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ পলাশ এখন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের কোভিড ডিউটিতে। তাঁর মনে পড়ছে, প্রায় চল্লিশ মিনিট ধরে সেলাই-পর্ব মিটিয়ে প্রণববাবুকে কৃষ্ণনগরে জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য তৈরি করে দেন তাঁরা। জেলা হাসপাতালে তখন সিটি স্ক্যান হত না। রাতে একটি নার্সিংহোমে সিটি স্ক্যান করিয়ে পরের দিন হেলিকপ্টারে প্রণববাবুকে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

প্রণব মুখোপাধ্যায় কিন্তু গ্রামীণ হাসপাতালের সেই তরুণ ডাক্তারকে ভোলেননি। একটু সুস্থ হয়েই চিঠি পাঠিয়ে তাঁর জীবন বাঁচানোর জন্য ধন্যবাদ দেন। সেই চিঠি আজও যত্ন করে রাখা আছে পলাশের কাছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Pranab Mukherjee Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy